এইদিন ওয়েবডেস্ক,পশ্চিম মেদিনীপুর,১০ সেপ্টেম্বর : বিগত প্রায় দুই দশক ধরে গ্রামের রাস্তা সংস্কারের কাজ হয়নি। শুকনো মৌসুমের মোটামুটি চলাচল করা গেলেও, বর্ষায় কার্যত গৃহবন্দী থাকতে হয় গ্রামবাসীদের । এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার শাসক দলের ঘোষিত কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ শিবিরে উপস্থিত হয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ে বিডিও কৌশিক প্রামানিককে । গ্রামের মহিলারা বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে সেখানে গিয়ে বিডিওকে আটকে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । ঘণ্টা দেড়েক আটকে রাখার পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ছাড়া পেতেই দৌড়াতে দৌড়াতে নিজের গাড়িতে গিয়ে ওঠেন বিডিও । তার পিছু ধাওয়া করে গ্রামবাসীরা ৷ নারায়ণগড়ে বিডিও-এর সেই “দে দৌড়ের” ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ।
সেই ভিডিও নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে ভাগ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান – বিক্ষোভের ভয়ে দৌড়ে বিডিও সাহেবের অন্তর্ধান !
পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের নারমা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাগুরিয়ার রাস্তার বেহাল দশায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেখানকার রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াত করাই দায়, জীবন হাতে নিয়ে চলতে হচ্ছে এমন অবস্থা। খারাপ রাস্তার জন্য গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স তো দূরের কথা একটা গাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। ফলে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে ডুলিতে করে নিয়ে যেতে হয়। প্রসূতি মায়েদের নিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামবাসীরা যত বার দাবি জানিয়েছেন ততবার সান্ত্বনা বাক্য ছাড়া তাদের কিছুই জোটেনি।
এমতাবস্থায় সেখানে প্রশাসন ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’-এর কর্মসূচির শিবির আয়োজন করলে স্থানীয় প্রায় শতাধিক মহিলা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেন রাস্তার সংস্কার করা হয়নি তার জবাব চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেই সময় সেখানে বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন, উত্তেজিত মহিলারা তাদেরকে সেখানেই তালা বন্ধ করে আটকে রাখেন।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘন্টা দেড়েক পর বিডিও পঞ্চায়েত সদস্য সহ অন্যান্যদের উদ্ধার করে। বিডিও বাইরে আসলে তাকে বিক্ষোভরত মহিলারা ঘিরে ধরে আবার বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঘেরাও হওয়ার ভয়ে দৌড়ে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান শিবির’ থেকে পালাতে থাকেন, পেছন পেছন বিক্ষোভকারীরাও দৌড়াতে থাকেন। শেষে বিডিও ভয়ে গাড়িতে করে এলাকা ছাড়েন।’
তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে আরো লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রাজ্যের শহর থেকে গ্রাম রাজ্যের হাল বেহাল। তার ১০০% কাজ হয়ে যাওয়ার দাবী আসলে পুরোপুরি ভাঁওতা, সেটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুঝে গিয়েছেন, তাই দিকে দিকে এই রকম স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হচ্ছে। ভোটের মুখের চমক ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধানের’ থেকে ‘আমাদের পাড়া, তৃণমূল তাড়া’ কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগড় ব্লকের নারমা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাগুরিয়া গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা দীর্ঘ প্রায় দুই দশক কোন সংস্কার হয়নি । শুকনো মরশুমে মোটামুটি চলাচল করা গেলেও বর্ষাকালে চূড়ান্ত নাকাল হতে হয় গ্রামবাসীদের । আজ বিক্ষোভে যোগ দেওয়া স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন,’বিগত কুড়ি বছর ধরে আমাদের গ্রামের রাস্তার সংস্কার হচ্ছে না । এক হাঁটু করে কাদা জমেছে৷ ওই অবস্থাতেই বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। কোন প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না, রাস্তাতেই প্রসব হয়ে যায় । অসুস্থ হয়ে রোগী বাড়িতেই মারা যায় । গ্রামে কোনো গাড়ি ঢুকতে পারে না । এই কারণেই আজ আমরা প্রতিবাদে নেমেছি৷’
আর এক গৃহবধূর অভিযোগ,’রাস্তার সংস্কারের দাবিতে বহুবার পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন করা হয়েছিল৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি ।’ যদিও এই নিয়ে শাসক দলের তরফে কোন বিবৃতি পাওয়া যায়নি ।।

