প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ সেপ্টেম্বর : বঙ্গে এখন যেন ভুয়ো ইব্যবসায়ীর দোকানে হানা দিয়ে মোটা টাক হাতিয়ে নিয়ে পালালো ভূয়ো ইডি অফিসার ইডি (ED) অফিসারের ছড়াছড়ি।মাস দুই আগে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার খেমতা গ্রাম নিবাসী ভূয়ো ইডি অফিসার জিন্নার আলিকে গ্রেপ্তার করে আসল ইডি। তার পরেও ভূয়ো ইডি অফিসারের দৌরাত্ব অব্যাহত রয়েছে বঙ্গে।এবার জামালপুরে দৌরাত্ম দেখালো এক ভূয়ো ইডি(ED) অফিসার। জামালপুর থানার সন্নিকটের একটি মুদিখানা দোকানের মালিকের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে ওই ভূয়ো ইডি অফিসারের বিরুদ্ধে। ঘটনা নিয়ে প্রতারিত ব্যবসায়ী মিহির কোলে জামালপুর থানায় এফআইআর (FIR)রুজু করেছেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ভূয়ো ইডি অফিসারকে জলে পোরার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে’,জামালপুর থানা মোড়ে বাড়ি ব্যবসায়ী মিহির কোলের। বাড়ির সামনেই রয়েছে তাঁর মুদিখানা দোকান। পুলিশ কে মিহির কোলে জানিয়েছেন,’গত ২৩ আগষ্ট বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ তিনি দোকান চালাচ্ছিলেন। দোকানে তখন খরিদ্দাররাও ছিল। ওই সময় তাঁর দোকানে হাজির হয় অচেনা এক ব্যক্তি।তিনি নিজেক ইডি(ED) অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে দোকান মালিক মিহির কোলেকে বলেন,’আমি দিল্লী থেকে আসছি।আপনার দোকানে ’রেড’ হবে।তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করুণ।দোকান বন্ধ করিয়েই ইডি অফিসার পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি ব্যবসায়ী মিহির কোলেকে বলেন, ‘আপনাকে তিন বছরের ট্যাক্স(TAX) দিতে হবে।এই বলে ট্যাক্স বাবদ ১৫ হাজার ৩৫৫ টাকা মিহির কোলের কাছ থেকে নিয়ে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তি চলেযায়।পরে ওই কাগজটি যাচাই করে দেখে মিহির কোলে বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। হতাশা কাটিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর এই প্রতারণার ঘটনার সবিস্তার উল্লেখ করে ব্যবসায়ী মিহির কোলে জামালপুর থানার অভিযোগ দায়ের করেন ।
এসডিপিও বর্ধমান (দক্ষিণ ) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন,“ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানা নির্দিষ্ট কেস রুজু করেছে।এখন অভিযুক্ত বাঁকুড়ার জয়পুর থানার কাস্টডিতে রয়েছে।ওই জেলার অনেকগুলো থানাই অভিযুক্ত কে নিজেদের হেপাজতে নেবে বল জানা গিয়েছে।
অভিযুক্তকে জেল ইন্টারোগেশনের জন্য আমাদের প্রেয়ার দেওয়া আছে।জেল ইন্টারোগেশন ও প্রোকাডশন ওয়ারেন্টের পর অভিযুক্ত আমাদের কাস্টডিতে আসবে“। জামালপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে,’তদন্তে নেমে পুলিশ ওই দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পরা ঘটনার সময়কার ছবি সংগ্রহ করেছে। সেই ছবির সূত্র ধরে পুলিশ অভিযুক্তকে সনাক্ত করেছে। অভিযুক্ত একটি মোটর বাইকে চেপে ওই দোকানে এসেছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তার আসল স্বরুপ প্রকাশ্যে আনতে এখন মরিয়া জামালপুর থানার পুলিশ।
ব্যবসায়ী মিহির কোলে সোমবার বিকালে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,“গত ২৩ আগষ্ট বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ ইডি (ED)অফিসার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আচমকাই আমার দোকানে হাজির হন।ওই ব্যক্তির হাবভাব,পোষাক পরিচ্ছদ,কথা বলার ধরন- ধারণ দেখে বোঝার উপায় ছিল না,যে ওই ব্যক্তি কোন ভূয়ো ইডি আফিসার।“ আমার দোকানে এসে ইডিআফিসার পরিচয় দিয়েই ওই ব্যক্তি আমায়
বলেন,“উপর মহলের অর্ডার আছে। আপনার দোকানে এক্ষুনি ’হানা’ হবে। আমার পিছনে আমাদের চারচাকা গাড়ি আসছে। আপনি এক্ষুনি দোকানের শাটার নামিয়ে দিন। ব্যবসা সংক্রান্ত ও ট্যাক্সের (TAX) নথিপত্র আমার আছে কিনা সেটাও ওই ব্যক্তি জানতে চান ।
মিহির বাবুর কথা অনুযায়ী,ইডি (ED)অফিসার পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিকে তিনি বলেন,প্রায় ৩০ বছর হল তিনি ব্যবসা করছেন।ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র তাঁর আছে।তবুও তাঁর দোকানের সামনে থাকা খরিদ্দার ও ব্যবসায়িক কম্পানির লোকজনের সামনে দিয়েই ওই ব্যক্তি তাঁর দোকানে ঢুকে পড়ে তাকে দোকানের শাটার নামাতে বাধ্য করেন’।’মিহির বাবু বলেন, এরপর দোকানের ভিতরে বসে ওই ব্যক্তি আমায় বলেন,আমাকে ৩ বছরের ট্যাক্স মেটাতে হবে এবং ওনার ফিস দিতে হবে।এই বলে একটা ’রসিদ’ কেটে দিয়ে ইডি অফিসার পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি আমার কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার ৩৫৫ টাকা আদায় করে। টাকা নিয়েই ওই ব্যক্তি আমার দোকান থেকে বাইরে বেরিয়েই বাইকে চপে চলে যায়।’
মিহিরবাবু এও জানান,’এমন ঘটনার পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে তিনি তাঁর অ্যাকাউন্ট্যান্ট এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।ইডি (ED)অফিসার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির দেওয়া ’রসিদের’ ছবি তিনি তাঁর মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তুলো অ্যাকাউন্ট্যাটকে পাঠান।সেই রসিদ দেখেই তাঁকে তাঁর অ্যাকাউন্ট্যাট জনিয়ে দেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মিহির কোলে বলেন,আমার অ্যাকাউন্ট্যাট আমাকে এমনটা জানানোর পরেই আমি জামালপুর থানার দ্বারস্থ হই।’
প্রতারিত ব্যবসায়ী মিহির কোলের স্ত্রী শ্রাবন্তি কোলে বলেন,’ঘটনার সময় দোকানে আমি ছিলাম । দোকানের কর্মচারী ছেলেটিও তখন দোকানেই ছিল। ইডি (ED) অফিসার দোকানে হানা দিয়েছে শুনে আমরা একটু ভীতই হয়েই পড়ে ছিলাম । ওই ব্যক্তি যে ভূয়ো ইডি (ED) অফিসার তা আমরা একটুও বুঝতে পারিনি।অতগুলো টাকা ওই হাতিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ায় আমরা খুবই মুষড়ে পড়েছি। পুলিশ অভিযুক্তকে পাকড়াও করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করুক ,এই দাবি করেছেন শ্রাবন্তি কোলে।
এদিকে ভূয়ো ইডি (ED) অফিসার সেজে দোকানে হানা দিয়ে ব্যবসায়ী কাছ থেকে মোটা টাকা লুটে নিয়ে যাওয়ার খবর জামালপুরের ব্যবসায়ী মহলে যথেষ্টই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। জামালপুরের ব্যবসায়ী নীলাঞ্জন হালদার এবং পার্থসারথী মিত্র বলেন, “ঘটনার কথা জানার পর থেকে আমরা সকল ব্যবসায়ীরই খুব আতঙ্কে আছি।কে আসল ইডি (ED)অফিসার আর কে ভূয়ো ইডি(ED) অফিসার
,তা তো কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।সামন্য পুঁজি নিয়ে আমরা ব্যবসা করতে নেমেছি।ইডি(ED) অফিষার সেজে দোকানে হানা দিয়ে যদি প্রতারকারা এই ভাবে দোকান থেকে টাকা লুট করে নিয়ে যায় তো ,ব্যবসা করাই দায় হয়ে যাবে।“ অপর ব্যবসায়ী অঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন,“সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের নানা কেসের তদন্ত এখন ইডি(ED) বা সিবিআই (CBI) করছে। তার কারণে বাংলায় এখন ইডি ও সিবিআইয়ের ছড়াছড়ি চলছে।তারই সূযোগ নিয়ে প্রতারকরা এখন ইডি অফিসার সেজে দোকানে হানা দিয়ে ব্যবসায়ীদের বোকা বানিয়ে টাকা লুটে নিয়ে পালাচ্ছে ।।