এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৪ সেপ্টেম্বর : গত বছর আগস্ট মাসে ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান জসিমুদ্দিন রাহমানীকে বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুক্তি দিয়েছে । রাহমানীর মূল লক্ষ্য হলো দেশ থেকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যা করা৷ আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (AQIS) এর একজন সোচ্চার সমর্থক রাহমানী ব্লগার রাজীব হায়দার ত্যার মূল পরিকল্পনাকারী । মহম্মদ ইউনুস তাকে মুক্তি দেওয়ার পর জসিমুদ্দিন রাহমানী বাংলাদেশে ফের সন্ত্রাসবাদের জাল বিছিয়ে যাচ্ছে । তার একটা সাম্প্রতিক সভার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ যে সভাতে ওই সন্ত্রাসীকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যাকে ন্যায্যতা দিতে শোনা গেছে ।
ব্লগার রাজীব হায়দারের নৃশংস খুনের ঘটনা নিয়ে সন্ত্রাসী জসিমুদ্দিন রাহমানীকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি যদি থাকতাম, তাহলে ব্লগারদের বাঁচানো সম্ভব হত না। সেই কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তবুও, ব্লগারদের বাঁচানো যায়নি; বরং তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। কারাগারে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘পরের মাসে কাদের হত্যা করা হবে?’ প্রতি মাসে কি একের পর এক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়নি? কারাগারে, সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করত, ‘শেখ, এরপর কে হবে? কাকে হত্যা করা হবে?’ আমি উত্তর দিতাম, ‘অপেক্ষা করুন, সময় হলে জানতে পারবেন’।’
সে আরও বলেছে,’শাতিমে রাসূল – যারা আল্লাহ বা তাঁর রাসূল, নবী মুহাম্মদকে অপমান করে – তাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। কোরানে এ সম্পর্কে স্পষ্ট আয়াত রয়েছে।’
ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন ইংরাজি ব্লিটজ পত্রিকার সম্পাদক সালহা উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী । তিনি লিখেছেন, ‘সন্ত্রাস সতর্কতা : আল কায়েদার স্থানীয় শাখা আনসার আল ইসলামের প্রধান নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানি, যিনি গত বছরের জিহাদি অভ্যুত্থানের পর ইউনূস শাসনকালে মুক্তি পেয়েছিলেন, তিনি মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায় সহ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং ব্লগারদের হত্যার পক্ষে তার অবস্থান প্রকাশ্যে ন্যায্যতা দিয়েছেন এবং তার শিষ্যদের “ইসলাম ও নবীর বিরুদ্ধে কথা বলার” যে কাউকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য উৎসাহিত করছেন।’ তিনি আরও লিখেছেন,’ইতিমধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইইউ দেশগুলিতে কিছু বাংলাদেশী আশ্রয়প্রার্থী রহমানি এবং অন্যান্য জিহাদিদের, যার মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হকও রয়েছেন, “নায়ক” হিসেবে চিত্রিত করতে শুরু করেছেন। অর্থাৎ, এই আশ্রয়প্রার্থীরা আল কায়েদা এবং ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ প্রচারে আমেরিকান মাটির পাশাপাশি ব্রিটেন এবং ইইউ ব্যবহার করছেন।’
প্রসঙ্গত,২০১৩ সালের আগস্টে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকান্ডের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ছিল সন্ত্রাসী জসিমউদ্দিন রাহমানি৷ শেখ হাসিনা সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় । তারপর থেকে সে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি সেন্ট্রাল কারাগারে বন্দি ছিল । ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ও মুক্তমনা ব্লগার বা সাংবাদিকদের উপর একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের জন্য তাকে দায়ী করা হয়, যার দায় এবিটি স্বীকার করেছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ আমলের বেশ কয়েকজন হাই-প্রোফাইল বন্দীর মধ্যে জসিমউদ্দিন রাহমানি একজন, যাদের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুক্তি দিয়েছে এবং সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে।
রহমানির আগে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও মুক্তি পেয়েছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। হাসিনার সরকারের পতন এবং ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
একই দিনে, সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত দুই বিশিষ্ট মুখ – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি এবং আইনজীবী আহমদ বিন কাসেম – কে মুক্তি দেয়, যাদের ২০১৬ সালের আগস্টে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের একটি গোপন উচ্চ-নিরাপত্তা কারাগার, আয়নাঘরে আটক করে বলে অভিযোগ রয়েছে। জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা মাইকেল চাকমাকেও আয়নাঘর থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘নিখোঁজ’ হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।।

