এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৪ সেপ্টেম্বর : মার্কিন রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক হামলা চালিয়েছে । ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প । এর ফলে রপ্তানিকারক এবং জনগণের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে । উদ্ভুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনাকালীন পরিকল্পনা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার । করোনাকালীন লকডাউনের সময় যেমন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছিল, ঠিক তেমনই একই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে জনগণকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে স্বস্তি দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি আমেরিকা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ছাড়া অন্য বিশ্ব বাজার খুঁজে বের করার কৌশল তৈরি করা হচ্ছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, কর্মকর্তারা বলেছেন যে সরকার প্রথমে নগদ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবে। মনে করা হচ্ছে যে মার্কিন শুল্কের কারণে নগদ সংকট, পণ্য সরবরাহে বিলম্ব, অর্ডার বাতিলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রপ্তানিকারকদের নতুন বিশ্ব বাজার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের স্বস্তি দেওয়া আবশ্যক । এর জন্য, সরকার পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে এবং তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেবে যাতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলও তৈরি করা যায়। নগদ অর্থ সহজলভ্য করার পাশাপাশি বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিগুলিকে শক্তিশালী করার এবং নতুন বাজারে সুযোগ অন্বেষণ করার জন্যও কাজ করা হবে।
করোনা লকডাউনের সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যেসব প্রকল্প চালু করা হয়েছিল, সেগুলো আবারও পুনরাবৃত্তি করা হতে পারে। সরকার জরুরি ঋণ লাইন গ্যারান্টি স্কিম অর্থাৎ ECLGS-এর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। এর আওতায়, গ্যারান্টি ছাড়াই শিল্পগুলিকে ১০০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হবে। সরকারের সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপর। ৬৮ দিনের লকডাউনে এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল তাদের বাঁচানোর জন্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে এতে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এর বাইরে, নগদের সহজলভ্যতা বজায় রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল তৈরি করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি জোরদার এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের কাজ ত্বরান্বিত করার কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার ।
পরিকল্পনা ১: ECLGS স্কিম
সরকার GST সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকে অনেক ছাড় দিতে চলেছে। কর্মকর্তাদের মতে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে শক্তিশালী। তবে রপ্তানি হ্রাসের প্রভাব পড়তে পারে, কারণ রপ্তানি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, ৪.১২ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট GDP-তে এর অবদান মাত্র ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩৮ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই জুন প্রান্তিকেও ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮% রেকর্ড করা হয়েছে।
ECLGS কী?
জরুরি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম (ECLGS) হল ভারত সরকারের একটি স্কিম যা ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এর অধীনে চালু করা হয়েছে। এটি ২০২০ সালের মে মাসে বাস্তবায়িত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হল কোভিডের সময়কালে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) এবং অন্যান্য ব্যবসাগুলিকে ত্রাণ প্রদান করা। এর আওতায়, গ্যারান্টি ছাড়াই শিল্পগুলিকে ১০০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়, যাতে শিল্প পরিচালনায় কোনও সমস্যা না হয়। এর আওতায় ১.১৯ কোটি শিল্পকে ৩.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। যার মাত্র ৬ শতাংশ NPA অর্থাৎ ২২,০০০ কোটি টাকা হয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে যে এটি অনুমানের চেয়ে অনেক কম ছিল।
NPA হল এমন একটি পরিস্থিতি যখন ঋণগ্রহীতা ৯০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে তার ঋণের সুদেমূলে কিস্তি পরিশোধ করতে অক্ষম হন।
পরিকল্পনা ২: প্রত্যক্ষ আয় সহায়তা প্রকল্প বিবেচনা করা হচ্ছে
সরকার MSME-তে কর্মরত কর্মী এবং অন্যান্য অস্থায়ী কর্মীদের সাহায্য করার জন্য প্রত্যক্ষ আয় সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করছে। এর উদ্দেশ্য হল MSME খাতে কর্মরত কর্মীদের চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। মানি কন্ট্রোলের মতে, এই প্রকল্পের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এটি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হতে পারে।
পরিকল্পনা ৩: জামানতমুক্ত ঋণের সীমা বাড়ানো
ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (CGS) এর অধীনে, RBI MSME-এর আওতাধীন শিল্পগুলিকে জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদানের সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করতে পারে। CGS ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল। এটি মাইক্রো এবং স্মল এন্টারপ্রাইজের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ট্রাস্ট ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে গ্যারান্টি দেয় যে যদি MSME কোম্পানি ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে ট্রাস্ট বকেয়া পরিমাণের ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ পরিশোধ করবে।
পরিকল্পনা ৪: রপ্তানি প্রচার মিশনের অধীনে সস্তা ঋণ প্রদানের পরিকল্পনা
২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের অধীনে, মোদী সরকার রপ্তানি প্রচার মিশনের কথা বলেছিল। এর অধীনে, ২৫০০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। প্যাকেজের অধীনে, রপ্তানিকারকদের জন্য সস্তা ঋণ এবং উন্নত বাজার সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি ট্রাম্পের শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রপ্তানিকে বাঁচাতেও সহায়তা করবে। এই বিষয়ে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে অবিজেপি শাসিত সরকারগুলি মোদী সরকারের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে আসরে নেমে পড়েছে । ‘ক্ষতিপূরণ’ ব্যবস্থা ছাড়া দুই স্তরের জিএসটি কাঠামো অনুমোদন না করার হুমকি দিচ্ছে ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং কর্ণাটক। তারা দাবি করছে যে এই কাঠামোয় মোট প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে, যার মধ্যে প্রতিটি রাজ্যের ক্ষতি হবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। কিন্তু বিড়ম্বনা এখানেই, যে রাহুল গান্ধী অ্যান্ড কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে ‘এক জাতি, এক সরল জিএসটি’ দাবি করে আসছে এখন, যখন সরকার একটি সরলীকৃত দুই স্তরের মডেল নিয়ে আসছে, তখন কংগ্রেস ও তার জোট সঙ্গীদের শাসিত রাজ্যগুলি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে ।।