এইদিন বিনোদন ডেস্ক,০২ সেপ্টেম্বর : সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উর্দু অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন বলিউড চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও কবি জাভেদ আখতার ৷ ‘হিন্দি সিনেমায় উর্দুর অবদান’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উর্দু অ্যাকাডেমী । কলকাতার রাজপথে বড় বড় ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল যেখানে বড় আকারে জাভেদ আখতারের ছবিও ছাপা হয় । কিন্তু জাভেদ আখতারের আমন্ত্রণের বিরোধিতা জানায় কিছু ইসলামিক সংগঠন। যার জেরে আকস্মিক স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে ওই অনুষ্ঠান । শনিবার দুপুরে অ্যাকাডেমির সচিব নুজহাত জাইনাব সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, “অপরিহার্য কারণবশত আমরা এই আয়োজনকে পেছাতে বাধ্য হয়েছি।”
সূত্রের খবর,জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ ও ওহাইয়াইন ফাউন্ডেশন নামের দুটি ইসলামি সংগঠন জাভেদ আখতারের আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আপত্তি জানায়। জানা যায়, তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কিছু অনুগামী এবং জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দের কলকাতার কিছু সংগঠক আপত্তি জানিয়ে উর্দু অ্যাকাডেমিকে চিঠি দেয় । হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, “জাভেদ আখতার নাস্তিক। ইসলাম ও আল্লাহর বিরোধী, তাই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো চলবে না। উর্দু সাহিত্য জগতে আরও অনেক ভালো লেখক, কবি রয়েছেন। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে, কিন্তু জাভেদ আখতার নয়”। এরপরেই অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে আচমকাই অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেওয়া হয়।
এদিকে এনিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে । বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন সিপিএমও তার সঙ্গে একই আচরণ করেছিল এবং তাকে কলকাতায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি । তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম সরকার আমাকে রাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। কার শক্তিতে এটা শক্তিশালী হয়েছিল? ইসলামপন্থী মৌলবাদী শক্তির শক্তি। এখন তারা জাভেদ আখতারের উপর ক্ষুব্ধ, যাকে উর্দু একাডেমি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা ঘোষণা করছে, ‘জাভেদ আখতার ইসলামের সমালোচনা করেছেন – আমরা তাকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে দেব না। যদি সে প্রবেশ করে, তাহলে আমরা তাকে তাড়িয়ে দেব যেভাবে আমরা তসলিমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। উর্দু একাডেমি ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের সামনে অসহায় দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি রাজ্য সরকারও সম্ভবত অসহায় ।’ অন্য একটি পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন,’ওহে উর্দু একাডেমি! জাভেদ আখতারের সাথে তোমার আয়োজিত মুশাইরা বাতিল করতে হয়েছিল। তুমি এখন জিহাদিদের হুমকির নিন্দা করো। কিন্তু যেদিন তারা লেখিকা তসলিমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেদিন কি তুমি তাদের হুমকির নিন্দা করেছ? তুমি তা করোনি। তুমি ভেবেছিলে এটা তসলিমার ব্যক্তিগত সমস্যা। আজ তারা তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এটা কি এখন তোমার ব্যক্তিগত সমস্যা, নাকি তোমার অতিথি জাভেদ আখতারের? আজ তোমাকে চিত্রনাট্যকার, গীতিকার এবং কবি জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের নির্দেশে কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া কেবল তাদের—জিহাদিদের—শক্তিশালী করে। তাদের হুমকির কারণে কারো অনুষ্ঠান বাতিল করা কেবল তাদের—শক্তিশালী করে। বারবার তুমি এই উগ্র শক্তির সামনে মাথা নত করে, তাদেরকে এক রাক্ষসী দৈত্যে পরিণত করে। আর একদিন, সেই দৈত্য সবাইকে—আপনি সহ সকলকে গ্রাস করবে।’
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর ঘটনা নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছেন । জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান বাতিল করায় বিন্দায় সড়ক হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও । তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ উর্দু একাডেমি (সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের অধীনে) আয়োজিত একটি ‘ন্যাশনাল মুশায়রা’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল ভারতের খ্যাতনামা কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতারের। সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণে ভূষিত এই আইকনিক কবির উপস্থিতি বাংলার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের জন্য এক বড় সম্মান হতে পারত। কিন্তু খবর অনুযায়ী, চরমপন্থী মৌলবাদী ও জিহাদি মানসিকতার চাপের কাছে নতিস্বীকার করে সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। বাংলার মাটিতে একজন আন্তর্জাতিক মানের কবিও প্রবেশ করতে পারলেন না শুধুমাত্র মৌলবাদীদের ফতোয়ার কারণে!
এখন প্রশ্ন ওঠে-বাংলায় কি তবে মৌলবাদীদের নির্দেশই সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে উঠেছে?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এভাবে পদদলিত হবে? ভারতের সংবিধান কি মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাসত্ব মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল?এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আর জনগণের প্রতিনিধি নন তিনি মুসলিম তোষণের রাজনীতির বাইরে কিছুই দেখেন না। তিনি নিজেকে “সম্প্রীতির দূত” বলে প্রচার করেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি হয়ে উঠেছেন মৌলবাদী, জিহাদি মানসিকতা আর তালিবানি দৃষ্টিভঙ্গির একমাত্র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
ভারত একটি স্বাধীন চেতনার দেশ, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সবার অধিকার সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। কিন্তু বাংলায় সংবিধানের কোনো বালাই নেই। এখানে মুখ্যমন্ত্রীর আসল রাজনীতি হচ্ছে- মৌলবাদী শক্তিকে খুশি রাখা, জিহাদি আদর্শকে প্রশ্রয় দেওয়া,আর ক্ষমতার লোভে গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া।
ফলাফল স্পষ্ট—বাংলার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাহিত্যকে বারবার অপমান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে মৌলবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বাংলাকে এক তালিবানি শাসনের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আজ বাংলার মানুষকে জিজ্ঞেস করতেই হয় এটাই কি সেই “সম্প্রীতির বাংলা” যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা যায়? নাকি এটা সেই বাংলার করুণ চিত্র, যেখানে একজন কবির কণ্ঠস্বরও মৌলবাদীদের চাপে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়?মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসের কাছে জবাবদিহি এড়াতে পারবেন না। বাংলার গণতন্ত্র, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাধীন চিন্তাকে তিনি নিজের রাজনৈতিক লোভে নিলামে তুলেছেন। আর এর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের প্রতিবাদই হবে সবচেয়ে বড় জবাব।’
জানা গিয়েছে, উর্দু ইন হিন্দি সিনেমা এই শিরোনামে সাহিত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমি। বলিউড ছবিতে কীভাবে উর্দু ভাষাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে হত আলোচনা। সঙ্গে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয় জাভেদ আখতারকে। কলকাতার কলা ভবনে আয়োজন করা “ন্যাশানাল মুহারিয়া” শীর্ষক ওই অনুষ্ঠান পয়লা সেপ্টেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল। জাভেদ আখতার ছাড়াও হামিদ ভুসাওয়ালি,নাদিম সাদ এবং পাপ্পলু লকনভি প্রভৃতি ব্যক্তিত্বরাও আমন্ত্রিত ছিলেন ।।

