এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ আগস্ট : শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। আজ শনিবার কমিশনের ওয়েবসাইটে ১৮০৪ জন ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে । যদিও ওই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । প্রথমত তিনি বলেছেন দাগী অযোগ্যদের সংখ্যা ৬০০০-এর অধিক । এছাড়া ঘোষিত অযোগ্য প্রার্থীর তালিকার মধ্যে ভেজাল মেশানো হয়েছে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের নামের তালিকা সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে কমিশনকে। সময় সীমাবদ্ধ দেওয়া হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর রাত্রি বারোটা পর্যন্ত৷ তার আগেই আজ শনিবার ৩০ শে আগস্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে মোট ১৮০৪ জন অযোগ্যের নাম এবং রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ ঘিরেও নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় কমিশনের দফতরে। প্রাথমিক ভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। ইতিমধ্যে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারও পৌঁছে যান কমিশনের দফতরে। সেখানে আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। তার পরে নতুন করে ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি।
এদিকে শুভেন্দু অধিকারী আজ বিকালে এসএসসির তালিকা প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন,’১৮০৩ জনের নাম প্রকাশ করেছে৷ এটা অসম্পূর্ণ তালিকা । এসএসসির দুর্নীতিতে চারটি ভাগ রয়েছে এগুলি অযোগ্য । তার মধ্যে হলো প্রথমতঃ যারা ওএমআর টেম্পারিং হয়েছে,দ্বিতীয়তঃ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যারা নিয়োগ পেয়েছে, তৃতীয়তঃ র্যাঙ্ক জাম্প এবং চতুর্থতঃ সাদা খাতাতে যারা চাকরি পেয়েছে৷ এই চার ধরনের লোকেদের চাকরি থাকতে পারে না এবং এই সংখ্যাটা ছয় হাজারের অধিক, যেটা ২০২২ সালে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী একদম সংখ্যা করে অর্ডার করেছিলেন । পরবর্তীকালের ডিভিশন বেঞ্চ এই অর্ডার কন্টিনিউ করেছে । সুপ্রিম কোর্টও তাদেরই টেন্ট বলেছে ।’
পরে এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাত্রি বারোটার মধ্যে অযোগ্যদের তালিকা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে হবে । মমতা ব্যানার্জির সরকার তো ছাড় ওদের ঘাড় দিতে বাধ্য তালিকা । সুপ্রিম কোর্টকে এত দুর্বল ভাবার কোন কারণ নেই । সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বদল একমাত্র লোকসভাতেই হতে পারে । স্বাভাবিকভাবেই আঞ্চলিক দল তৃণমূল কংগ্রেস যা করছে করুক না ।’ তিনি বলেন,’২০২২ সালে তৎকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি যে তালিকা দিয়েছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্টের যে প্রথম অর্ডার তাতে কারা কারা বাদ যাবেন তা বলা আছে ।’ শুভেন্দু অধিকারীর আশঙ্কা যে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোষিত অযোগ্য প্রার্থীর তালিকার মধ্যে ভেজাল মেশানো হয়েছে । তার কথায়, ‘ভাইপোর নেতৃত্বে ভেজাল ছাড়া আসলের কোন কারবার নেই ।’
সবশেষে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে কোন রাজ্যে এমন দুর্নীতি হয়নি । এমনকি ২০১০ সালে ত্রিপুরায় বামপন্থী সরকারের সময় প্রাথমিক নিয়োগে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সময় তারা অযোগ্য স্বীকার করেনি । কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ১৮০৩ জনের চাকরি যে অবৈধভাবে দিয়েছে সেটা স্বীকার করার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো যে এই সরকার এই ধরনের বেআইনি কাজ করেছে । এটা কোন নির্বাচিত সরকার করতে পারেনা ৷ এ ছাড়া এই দুর্নীতিতে তাদের আমলাতন্ত্র যে সহযোগিতা করেছে তা মারাত্মক ।’ শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত সকলকে জেলে ঢোকানো হবে ।।

