দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৬ আগস্ট : এলাকায় ধুমধাম করে শারদোৎব পালন করে বেশ কয়েকটি ক্লাব । কালী পুজোতেও ধুমধামের কোন খামতি নেই । এক সময় বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠতো গোটা বাজার । কিন্তু ব্যবসায়ের ভাটার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বকর্মা পুজো জৌলুশ হারিয়েছে৷ তবে যে পুজোটা সাধারণত পালন করা হতো না তা হলো গণেশ চতুর্থী । কিন্তু বিগত সাত বছর ধরে এলাকাবাসীর গণপতির আরাধনার স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের ব্যবসায়ীদের দুটি ক্লাব । এবারেও “ভাতার গণপতি সেবা সমিতি সংঘ” ও “গণপতি পুজো কমিটি” নামে ওই দুটি ক্লাব গণেশ চতুর্থী উদযাপন করছে । আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন পুজো কমিটি দুটি ।
২০১৮ সালে প্রথম গণেশ চতুর্থী উদযাপন শুরু করে “ভাতার গণপতি সেবা সমিতি সংঘ” । ভাতার বাজারের মলয় সামন্ত , অখিল গড়াই, সাগর ভট্টাচার্য,সীতারাম দে, নেপাল পাইনসহ গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মিলে এই পুজোর সূচনা করেন । নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে প্রথম বছর ধুমধাম করেই ভগবান গণেশের আরাধনা করেন তারা । তারপর প্রতিবছর নিয়ম মেনে ভাতার বাসস্ট্যান্ডে প্যান্ডেল করে পুজো করে আসছে ওই ক্লাবটি । প্রথম দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । কিন্তু এবারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পূজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মলয় সামন্ত ।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন,’এবারে ভরপুর বর্ষা হয়েছে । যার প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যবসাতে । যে কারণে এবারের গণেশ চতুর্থীর খরচ কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছি ।’ তিনি জানান, এবারের তাদের পূজোর বাজেট মাত্র ৩০০০০ টাকা । তবে স্বল্প খরচে প্যান্ডেল করে দিয়েছেন স্থানীয় পাপিয়া ডেকোরেটরের মালিক । নিখরচার লাইটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সর্ষেডাঙ্গার পঞ্চানন সামন্ত লাইট । বাজারের রাজেশ লাইটের মালিক গান বাজানোর জন্য নিখরচায় বক্স ও মাইকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন । মন্ডপসজ্জা ও পুজোর ফুলের যাবতীয় খরচ বহন করছেন স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী ও পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অখিল গড়াই । মলয় সামন্ত জানান,বুধবার সকাল নটায় ঘট আনা হবে । বৃহস্পতিবার দধিকর্মা ।’

পূজো মন্ডপের সামনে ভাতার গণপতি সেবা সমিতি সংঘের কর্মকর্তারা ।
অন্যদিকে “ভাতার গণপতি সেবা সমিতি সংঘ”-এর গণেশ চতুর্থী উদযাপনের পরের বছর থেকে ভাতার বাজারের রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী দীপক বোস, প্রশান্ত দাস, সুমিত চন্দ্রসহ ৭-৮ জন মিলে “গণপতি পুজো কমিটি” গঠন করে পুজো শুরু করেন । এবারে তাদের পুজো ষষ্ঠ বছরে পড়লো । তরুণ ব্যবসায়ী দীপক বোস জানান,এবারে তাদের পুজোর বাজেট ৭০ হাজার টাকা । নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে মূলত তারা এই পূজো পরিচালনা করেন বলে জানান । কিন্তু দীপক বোস জানান যে ইচ্ছে থাকলেও তারা সেভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন না ।
কিন্তু কেন ? উত্তরে তিনি বলেন,’যতবার আমরা পুজোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি, ততবারই পাড়ার কেউ না কেউ মারা গেছেন । ফলে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় । গতবারেও একই ঘটনা ঘটেছে । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজন করার পর হঠাৎ আত্মঘাতী হন ক্লাবের অন্যতম সদস্য বাবু চন্দ্র । ফলে অনুষ্ঠান বাতিল করে দিতে হয় । যে কারনে এবারেও আমরা তেমনভাবে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি না ।’
দীপক বোস জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে । আগামীকাল সন্ধ্যায় পুজো শেষে পূণ্যার্থীদের ভোগ বিতরণ এবং শুক্রবার পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।।

