এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,২৪ আগস্ট : শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে যেভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সীমাহীন অত্যাচার চলছে,ঠিক একইভাবে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারা দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর তার থেকেও নৃশংস বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল । সেই ঘটনাক্রমে বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সদর থানার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামে ঘটেছিল এক নারকীয় ঘটনা । জিহাদিদের জল বেছে বেছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট লুটপাট-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছিল । সেই সময় একই পরিবারের তিন নারীকে গণধর্ষণ করে জিহাদিদের দল । গনধর্ষণকারীরা ছিল মহম্মদ মকবুল হাওলাদারের ছেলে বিএনপি নেতা মহম্মদ বজলু এবং মহম্মদ আতাহার তালুকদারসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী । তারা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ৷ কেউ খালেদা জিয়ার দল বিএনবি করে,কেউ জামাত ইসলামির প্রভাবশালী নেতা । কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আজও সেই পরিবারের ন্যায় বিচারের প্রহর গোনা শেষ হয়নি । বলতে গেলে ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে জীবন্মৃতের মত দিন যাপন করছে পরিবারটি ।
ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যনের প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজারচর গ্রামের মৃত রজনী কান্ত মিস্ত্রির ছেলে পবিত্র কুমার মিস্ত্রি হোগলা পাতার ব্যবসা করতেন। তার পরিবারে স্ত্রী পারুল বালা রানী (৪০), দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও বোনসহ সাতজন সদস্য ছিলেন। নির্বাচন পরবর্তী হিংসার কারণে তিনি বড় মেয়ে গৌরীকে নিরাপত্তার জন্য শহরে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে ১০ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে তখন স্থানীয় বিএনপি নেতা মহম্মদ বজলু, মহম্মদ আতাহার তালুকদার,মহম্মদ মকবুল হাওলাদারের ছেলে মহম্মদ বজলুসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী পবিত্র কুমারের বাড়িতে আসে। তারা পবিত্রকে খুঁজে না পেয়ে ঘরবাড়ি লুট করে নিয়ে যায়, মালাপত্র “গণিমতের মাল” বলে উল্লেখ করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় তারা পবিত্র কুমারকে তাদের সাথে দেখা করার জন্য হুমকি দেয়।
প্রাণের ভয়ে পবিত্র কুমার দেখা না করায় ১৩ অক্টোবর রাত প্রায় ১টার দিকে তারা আবার বাড়িতে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে এবং পবিত্র কুমারের স্ত্রী পারুল বালা রানী (৪০), মেয়ে প্রিয়ংকা রানী মিস্ত্রি (পুস্প) (১৪) এবং খুড়তুতো বোন সোমা রানী মিস্ত্রিকে গনধর্ষণ করে।
পরেরদিন ১৪ অক্টোবর পবিত্র কুমার মিস্ত্রি কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর-২৫, যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ৯(১)৩/৩০ ধারায় মামলা রুজু হয়। এজাহারে ১ নম্বর আসামী হিসাবে মহম্মদ বজলুর নাম উল্লেখ করা হয়। তবে বাকিদের নাম ঠিকানা না জানায় নাম উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে মামলাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পবিত্র কুমারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরপরাধ দুই হিন্দু যুবক—রমান কান্ত ভূইয়ার ছেলে অনুকূল ভূইয়া এবং তপন শিকদারের ছেলে গোপি শিকদারকে মামলায় জড়াতে বাধ্য করে। পরে ক্ষমতার দাপটে থানা পুলিশ দিয়ে ওই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করায়।
এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন পর সন্ত্রাসীরা পবিত্র কুমারের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা না চালানোর স্বীকারোক্তি হিসাবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে বাদী ও নির্যাতিতারা ভয়ভীতি ও পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে সাক্ষ্য না দেওয়ায় পুলিশ আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০২ তারিখে কোতয়ালী থানার এফ আর টি সং-৪৫ হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পবিত্র কুমার মিস্ত্রির পরিবার আজও ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের নির্যাতনের বিচার না হওয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে । যদিও পাকিস্তান ও তার দোসর বাংলাদেশ কোনো কিছুকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাদের রাষ্ট্রকে ১০০ শতাংশ ইসলামি রাষ্ট্র গড়তে আজও বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ।।