এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২২ আগস্ট : পরিবারের অভাবের জন্য একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরেই গুজরাটের আমেদাবাদে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে ছুটতে হয়েছিল মালদার এক একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াকে । কিন্তু পথ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে তার ৷ মৃত যুবকের নাম মহম্মদ নেয়ামত তুল্লা (২০) । তার বাড়ি মালদা জেলার রতুয়া-১ নম্বর ব্লকের সামসী গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর গ্রামে । মৃত শ্রমিকের বাবা আকবর আলি জানান, তাঁর ছেলে জীবদ্দশায় অঙ্গ দানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন তারা । জানা গেছে, ছেলের এই ইচ্ছাপূরণ করতে শোকার্ত বাবা-মা আহমেদাবাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় অঙ্গদানের বিষয়টি জানান । মৃত যুবক মহম্মদ নেয়ামত তুল্লার ও বাবা-মায়ের এই প্রকার মানসিকতার প্রশংসা করেছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ ।
জানা গেছে, ভগবানপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক আকবর আলির ছেলে মহম্মদ নেয়ামত তুল্লা ভগবানপুর হাইমাদ্রাসা থেকে এবছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৷ স্থানীয় একটি হাই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সে । কিন্তু পরিবারের অভাবের কারণে মাস দেড়েক আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তাকে গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে ছুটতে হয়েছিল ।
জানা গেছে, রবিবার রাতে আমেদাবাদ শহরে একটি দলের সঙ্গে নিকাশি নালার কাজ করছিলেন নেয়ামত তুল্লা । কাজ শেষে সবার সঙ্গে একটি ডাম্পারে চেপে কর্মস্থল থেকে ঘরে ফিরছিলেন । কিন্তু রাস্তাতে ডাম্পারের সামনে এক ব্যক্তি চলে আসে ৷ তাকে বাঁচাতে গিয়ে ডাম্পারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে চালক ৷ ডাম্পারটি উল্টে যায় । যার ফলে চালকসহ ডাম্পারে থাকা সমস্ত শ্রমিকরা আহত হন । গুরুতর আহত হন নেয়ামত তুল্লা । পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত আমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যায় । সোমবার ভোর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে দুর্ঘটনায় আহতরা । কিন্তু মঙ্গলবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নেয়ামত তুল্লার । মৃতের পিসতুতো দুই দাদা আমিরুল হক, আনোয়ার আলমরা জানান,মৃত্যুর খবর ফোনে বাড়িতে জানানো হয় ।
জানা গেছে,নেয়ামত তুল্লা জীবদ্দশায় নিজের অঙ্গদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । তাই ছেলের শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করতে নেয়ামত তুল্লার বাবা-মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভিডিও কল করে ছেলের অঙ্গদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন ৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অঙ্গ গ্রহণের পর ময়নাতদন্ত করে অ্যাম্বুলেন্সে দেহ মৃতের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ গ্রামে যুবকের দেহ পৌঁছতেই তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে । রাত্রি ৭ টার মধ্যে কবরস্থ করা হয় মৃতদেহটি । মালদা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা ফজলুল হক মৃতের পরিবারকে, সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন । পাশাপাশি সবধরনের সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি ।।

