ব্যালটে কারচুপি করে কংগ্রেসের ভোটে জেতার পুরনো ইতিহাস আছে ৷ যেকারণেই ব্যালটের বদলে ইভিএম আনা হয়েছিল । কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের সামনে পড়ে ইভিএম-এও কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস ৷ আসলে কংগ্রেস নেতারা যখন নির্বাচনে হেরে যান বা হারার সম্ভাবনা দেখেন, তখনই তারা ইভিএম কারচুপির অভিযোগ শুরু করেন । যেখানে অতীতের ভুল ও অনিয়ম রোধ করার জন্যই মূলত ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন কংগ্রেসের লোকেরা ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে নতুন করে হৈচৈ শুরু করছে।
কোথাও দাবি করা হচ্ছে যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রস্তুত তালিকায় ভুয়া ভোটার রয়েছে, কোথাও বলা হচ্ছে যে ভারতীয় জনতা পার্টি ভোট চুরি করে নির্বাচনে জিতেছে। তারা কর্ণাটকে শুদ্ধিকরণের দাবি করে, বিহারে প্রতিবাদ করে, এবং যখন নির্বাচন কমিশন সেখানে ৬৫ লক্ষ ভুয়া ভোটারের নাম সরিয়ে দেয়, তখন পাটনার রাস্তা থেকে দিল্লির সংসদ পর্যন্ত হট্টগোল শুরু করে । কিন্তু ভোটার তালিকায় কারচুপির কোনো প্রমান এযাবৎ দিতে পারেনি কংগ্রেস । আর কংগ্রেসের যুবরাজ রাহুল গান্ধী এটাকে ইস্যু করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে মশগুল হয়ে আছেন ।
এটা জানা উচিত যে ভোট কারচুপি এবং প্রশাসনিক ভয় দেখিয়ে নির্বাচন জেতার মন্ত্র কংগ্রেস নিজেই আবিষ্কার করেছিল। আর এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমাদের ঐতিহাসিক “চাচা”, অর্থাৎ বর্তমান কংগ্রেসের সবচেয়ে বিখ্যাত “তরুণ নেতা” জওহরলাল নেহরু, রাহুল গান্ধীর প্রপিতামহ । আজ নেহরুর ‘প্রপৌত্র’ হঠাৎ করে কথিত “ভোট চুরি” রুখতে নিজেকে প্রতিবাদের ব্রান্ড হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে । এই বিষয়ে রাজনীতিতে “দাগি” বলে পরিচিত নেতাদের সঙ্গও জুটিয়ে ফেলেছেন তিনি ।
তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শম্ভুনাথ ট্যান্ডন তাঁর বইতে প্রকাশ করেছেন যে ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ব্যালট পেপার বদল এবং বুথ দখলের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জওহরলাল নেহেরু । ট্যান্ডনের মতে, পরাজিত হেভিওয়েট কংগ্রেস প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করার জন্য নেহেরু প্রশাসনিক যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করেছিলেন। দেশভাগে কংগ্রেসের ভূমিকার বিরুদ্ধে হিন্দু মহাসভা শক্তিশালী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। ফুলপুরে প্রভু দত্ত ব্রহ্মচারী এবং রামপুরে বিষণ চন্দ্র শেঠ হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
কিন্তু নেহেরু ক্ষমতায় থাকায়, গণনার দিন প্রশাসনিক যন্ত্রপাতি আসল খেলা খেলেছিল। যখন প্রভু দত্ত ব্রহ্মচারীর জয় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল, তখন অফিসাররা তাঁর ব্যালট পেপার থেকে হাজার হাজার ভোট সরিয়ে নেহরুর ব্যালট বাক্সে রেখেছিলেন। এইভাবে, আমাদের “চাচা” সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে নির্বাচনে জয়ী হন।
সেই সময়, প্রার্থীদের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্স ছিল, যেখানে প্রার্থীর নামের প্রতীক থাকত না। তাই ব্যালট পেপারে কারচুপি করা খুব সহজ ছিল। ট্যান্ডনের মতে, রামপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিশনচন্দ্র শেঠের ব্যালট পেপার মৌলানা আজাদের বাক্সে রাখার সময় স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “আমরা আমাদের চাকরি বাঁচাতে আপনার বলি চড়াতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ এটি নেহরুর আদেশ”। এইভাবে, আমাদের ” চাচা” কংগ্রেসকে নির্বাচনে জয়ের মন্ত্র দিয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রের পাঠ শিখিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে, বিশনচন্দ্র শেঠ ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে দুবার এমপি হয়েছিলেন, কিন্তু প্রথম নির্বাচনে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আজ, একই কংগ্রেসের তথাকথিত যুব নেতা রাহুল গান্ধী ইভিএম এবং ভোটার তালিকা কারচুপি নিয়ে শোরগোল করছেন । এটি ঠিক হতাশ বিড়ালের খুঁটি আঁচড়ানোর মতো ঘটনা ।।