আজ ১৬ অগাস্ট । আজ থেকে ১৩৯ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনেই কাশীপুর উদ্যান বাটি থেকে অনন্তলোকে যাত্রা করেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব । দেশজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মৃত্যু বার্ষিকী । শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে মাত্র ৫০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব। দিনটি ছিল রবিবার।
জীবনের শেষ দিনগুলিতে গলায় ব্যাথার কারনে কিছু খেতে পারতেন না পরমহংসদেব । ১৮৮৫ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের গলা থেকে প্রথম রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয় । চিকিৎসক জানান, তিনি ক্লার্জিম্যানস থ্রোট রোগে আক্রান্ত। প্রখ্যাত চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁকে দেখতে আসেন ১৮৮৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। পরের মাস থেকে শুরু হয় চিকিৎসা। তারপরই চিকিৎসক বলেন রোগটি ক্যান্সার। কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা সঙ্কটজনক হলে ১৮৮৫ সালে ১১ ডিসেম্বর তাকে স্থানান্তরিক করা হয় কাশীপুরের উদ্যান বাটিতে । সেখানে ২৫ মার্চ ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ জে এম কোটস এসেছিল তাঁকে পরীক্ষা করতে । বিখ্যাত চিকিৎসক রাজেন্দ্রনাথ দত্ত আসেন ১৮৮৬ সালে ৬ এপ্রিল। চিকিৎসক তাঁকে কথা না বলার নির্দেশ দেন। কিন্তু, তিনি সে কথা অমান্য করেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ।
জানা যায়, শেষ দিনে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পায়েস খেয়েছিলেন। সেদিনে তিনি বলেছিলেন, ‘ভিতরে এত ক্ষিধে যে মনে হচ্ছে হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না।’ পায়েস খেয়ে ঠাকুর নাকি বলেন, ‘আঃ শান্তি হল। এখন আর কোনও রোগ নেই।’অভেদানন্দের বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ১৮৮৬ সালে শ্রাবণের দিন তিনি সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিন সকালে তাঁকে ডাক্তার দেখতে এসে জানান, তিনি প্রয়াত হয়েছে। ১৬ অগস্ট সকালবেলায় ডাঃ মহেন্দ্রলালা সরকার কাশীপুরে আসেন। ‘বেলা দশ ঘটিকায় এসে জানান, ঠাকুরের প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে।’ স্বামী অভেদানন্দ তাঁর একটি লেখায় বর্ণনা করেছেন যে মৃত্যুর দিন তিনি একপাশে গড়িয়ে পড়েন ঠাকুর। নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ তখন ঠাকুরের পা লেপ দিয়ে ঢেকে দেন এবং ছুটে সিঁড়িতে নেমে আসেন কারণ এই দৃশ্য স্বামী বিবেকানন্দ সহ্য করতে পারছিলেন না। পরে দেখা যায় রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নাড়ি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভক্তরা মনে করতে থাকেন যে তিনি হয়ত সমাধিতে চলে গিয়েছেন কিন্তু ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার ১৬ অগাস্ট সকালে এসে জানান যে ঠাকুর পরলোক গমন করেছেন।’ বিকেল ৬টা নাগাদ কাশীপুর মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে তাঁর শেষ যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় ।
উনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাধক, দার্শনিক এবং ধর্মগুরু ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব । তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের মূলে ছিল গভীর ভক্তি। ১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী হুগলি জেলার কামারপুকুরে জন্মগ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তাঁর পিতার নাম ছিল ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়, মাতার নাম ছিল চন্দ্রমণি দেবী । রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শৈশব কালে নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায় । কামারপুকুরের ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান পরবর্তীকালে বিখ্যাত হন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নামে। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। উনিশ শতকে বাঙালি নবজাগরণে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেন তিনি । ‘যত মত তত পথ’ বাণীর মধ্য দিয়ে তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । আধ্যাত্মিক-সামাজিক ক্ষেত্রে তিনি বাঙালিকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন । তাঁর প্রধান শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বব্যাপী হিন্দু ধর্মের প্রচার ও বৈদিক জ্ঞান বিলিয়ে গেছেন।
ঠাকুরের প্রয়ান বার্ষিকীতে প্রনাম জানিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করেছেন,’মহান সাধক ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের পুণ্যতিথিতে আমি তাঁর প্রতি আমার প্রার্থনা জানাই। ঠাকুর কেবল ভারতীয়দের মধ্যে বেদান্তের স্ফুলিঙ্গই প্রজ্জ্বলিত করেননি, বরং বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তের কাছে আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবেও কাজ করে চলেছেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি।’ ঠাকুরের তিরোধান দিবসে শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।।