এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ আগস্ট : আরজি করের ধর্ষণ-খুন হওয়া তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র মৃতদেহ ঠিক যে কায়দায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে দাহ করে দিয়েছিল তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বাহিনী,ঠিক একই কায়দায় বছর ৩৫ এর চাকরিহারা শিক্ষক ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সুবল সোরেনের মৃতদেহ বর্তমান সিপি মনোজ পন্থের পুলিশ ‘হ্যাইজ্যাকের’ চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ । যা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুকুন্দপুর আর এন টেগোর হাসপাতাল চত্বর । হাসপাতালের ৪ নম্বর এক্সিট গেটে সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এদিকে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে মৃত সুবল সোরেনের মৃতদেহ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শববাহী গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল । অপেক্ষারত শিক্ষক- শিক্ষিকাদের কানে একথা যেতেই তারা সেখানে ছুটে আসেন । ঘটনাচক্রে সিগন্যালের শববাহী গাড়িটি আটকে গেলে তারা গাড়িটি ঘিরে ধরেন । গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কয়েকজন । বাকিরা গাড়িটি আটকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি নিয়ে তাদের তেড়ে যায় ৷ শুরু হয় ধস্তাধস্তি । এরপর সেই গাড়ি ঘিরে মিছিল করে মুকুন্দপুরের মেইন রোড ধরে বাইপাসের দিকে এগোতে থাকেন মৃতের এক সময়ের সহকর্মীরা। চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, অভয়ার ক্ষেত্রে যেমন পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে লুকিয়ে দেহ নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ, ঠিক একই কায়দায় কাউকে কিছু না জানিয়ে সুবল সোরেনের মৃতদেহের সঙ্গেও এক কাজ করছিল পুলিশ ।
জানা গেছে,স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় এক ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সুবল সোরেন । উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা ছিল। চাকরি হারানোর পর থেকে নিয়মিত ওষুধও খেতেন না। সংসার চালানোর চিন্তা এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি । এদিকে টানা কোলেস্টেরলের ওষুধ না খাওয়ায় গত সোমবার বাড়িতে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি । তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার একটা বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । কিন্তু তিনি কোমায় চলে যান । আজ তাঁর মৃত্যু হয়।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ওই শিক্ষকের মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকেই দায়ি করেছেন । তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’চলে গেলেন ডেবরার বাসিন্দা চাকরি হারা শিক্ষক সুবল সোরেন। মৃত্যুর অফিসিয়াল কারণ মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ। কিন্তু এই মৃত্যু তো শুধু অসুস্থতার কারণে মৃত্যু নয়। এই মৃত্যু একটা প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা। এই রাজ্য সরকারের দুর্নীতি, চাকরি চুরি, অযোগ্যদের বাঁচাতে যোগ্যদের বলি দেওয়ার অপরাধে প্রাণ গেল এই শিক্ষকের। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?’