প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ আগষ্ট : শ্রাবণে শিব তীর্থে পুজো দেওয়া শেষে গঙ্গাসাগরে পূণ্যস্নান সেরে বাড়ি ফিরছিলেন পূণ্যার্থীরা। জন্মাষ্টমীর আগে বাড়ি ফেরার তাগিদ থাকলেও আর বাড়ি ফেরা হল না তাদের । মাঝ পথেই ভয়ংকর দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে প্রাণ খোয়ালেন দুই মহিলা সহ ১১ জন পূণ্যার্থী । জখম হয়েছেন দুই শিশু সহ ৪১ জন পূণ্যার্থী । স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে এমনই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে বর্ধমানের নবাবহাট সংলগ্ন ফাগুপুরের কাছে ১৯ নম্বর জাতীর সড়কে । মৃত ও জখমরা সকলেই বিহার রাজ্যের মতিহারি জেলার চিরাইয়া সারসওয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা। জখম পূণ্যার্থীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাাতালে ভর্তি করা হয়েছে । দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি আটক করে পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের পূণ্যার্থীবাহী বাসটি আজ শুক্রবার সকাল ৭ টার খানিক পর ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,বাসটি ফুগুপুর পৌছানোর অনেক আগে থেকেই নিয়ম ভেঙে পণ্যবাহী একটি ট্রাক ফাগুপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের উপরে দাড়িয়ে ছিল। দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় পূণ্যার্থীবাহী বাসটি ওই ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মেরে দেয় ।তাতে বাসটির সামনের দিকের বেশ কিছুটা অংশ একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী,ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়। পরে বর্ধমান হাসপাতালে মারা যান আরো এক পূণ্যার্থী। স্থানীয় মানুষজন প্রথম উদ্ধার কাজে হাত লাগান । পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার কাজে হাত লাগায় । একে একে ৪০ জনের বেশী জখম পূণ্যার্থীকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বাস থেকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় । নিয়ম ভেঙে জাতীয় সড়কের উপর যত্রতত্র ট্রাক ও লরি দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে এদিন ক্ষোভ উগরে দেন ফাগুপুর এলাকার বাসিন্দারা।
দুর্ঘটনায় মৃত পূণ্যার্থীদের মধ্যে সাত জনের নাম পরিচয় এদিন বিকাল পর্যন্ত জানতে পারেছে পুলিশ ও বর্ধমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।বাকি ৪ জনের নাম পরিচয় জানার চেষ্টা তারা চালাচ্ছেন। হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সাত জন মৃতের নাম মীরা দেবী (৩০),অমরজিত কুমার (১৪), যোগী সাহানী (৬৫), নাগিনা সাহানী (৭৬), নরেশ পাশোয়ান (৪৫) ,কুনদেব পাশোয়ান (৬৫) এবং পারোজ (৫০)। এদিনই বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে মৃতদের দেহের ময়নাতদন্ত হয়।
মীরা দেবীর ছেলে বিশ্বজিৎ কুমার পূণ্যার্থী দলেই ছিলেন। তিনি বলেন,আমি,আমার মা মীরা দেবী,ভাই অমরজিৎ এবং আমার বাবার বন্ধু নরেশ পাশোয়ান বাস একসাথেই ছিলাম । দুর্ঘটনার আমার মা ,ভাই এবং বাবার বন্ধু মারা গিয়েছেন। বরাত জোর আমি বেঁচে গিয়েছি ।’ বিশ্বজিৎ জানান,চলতি আগষ্ট মাসের ১০ তারিখ তাঁরা সহ বাকি পূণ্যার্থীরা বাসে চেপে পূণ্যতীর্থ ভ্রমনে বের হন। পশ্চিমবঙ্গে পৌছে তাঁরা সকল পূণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগরে পূণ্য স্নান সেরে তারকেশ্বর হয়ে ফিরছিলেন।কিন্তু তাঁদের বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় সব ওলট পালট ঘটে যায় । দুর্ঘটনায় প্রাণ খোয়ানোয় মা ও ভাইয়েয় ভার বাড়ি ফেরা হল না।
এদিন দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেলাশাসক আয়েষা রাণী ,জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাস ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় ,জেলাপরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রশন্ন লোহার পৌছান বর্ধমান হাসপাতালে। পরে একটু বেলায় রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বর্ধমান হাসপাতালে পৌছান। হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে তারা জখম পূণ্যার্থীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি করেন । জেলাশাসক এবং মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ দু’জনেই জানান,মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো মৃত পূণ্যার্থীদের দেহ বিহারে পাঠানোর যাবতীয় ব্যবস্থা জেলা প্রশাসন করবে।
বাসটি কি কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়লো তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বাসটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল, না কি গতী বেশী থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে এখনও স্পষ্ট নয় । জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।।