এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৪ আগস্ট : ”লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” -বাংলার এই বিখ্যাত প্রবাদটির বাস্তবিক প্রমান পাওয়া গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায় । কাটোয়ার বাসিন্দা এমন এক চোরের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে যার অতিরিক্ত লোভই তাকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে সাহায্য করেছে পুলিশকে ৷ আসলে,এক বৃদ্ধার বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে একাধিক তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে ৭ ভরি সোনার গহনা এবং নগদ ৪০ হাজার টাকা চুরি করেছিল বছর ত্রিশের এক চোর । তবে সে যেটা ভুল করেছিল তা হল, অতিরিক্ত লোভে পড়ে সে বৃদ্ধার এটিএম কার্ডটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল । তারপর এটিএম কাউন্টারে গিয়ে বৃদ্ধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা হাপিশ করার চেষ্টা করে । কিন্তু পিন নম্বরের কারনে সে টাকা তুলতে সক্ষম হয়নি । আর এই সূত্র ধরে কাটোয়া থানার পুলিশ তাকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয় । পুলিশ জানিয়েছে,ধৃতের নাম সন্তু মণ্ডল (৩০)। কাটোয়ার পালিটা রোড এলাকায় তার বাড়ি । বুধবার রাতে কালনায় একটি নিষিদ্ধ পল্লী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
জানা গেছে,চুরির ঘটনাটি ঘটে সোমবার রাতে কাটোয়া শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার স্টেশন রোডের বাসিন্দা সাধনা ঘোষ নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধার বাড়িতে । দোতলা বাড়িতে একাই থাকেন তিনি । নিচের তলায় এঅটি ঘর ভাড়া নিয়ে টিউশন পড়ান এক যুবক । সপ্তাহান্তের ছুটিতে বাড়ি যান তিনি । গত রবিবার কাটোয়া শহরেই এক আত্মীয় বাড়ি গিয়েছিলেন বৃদ্ধা । টিউটর যুবকও ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন । মঙ্গলবার ওই যুবক কাটোয়া ফিরে এসে দেখেন বাড়ির গেটসহ ৬ টি দরজার তালা ভাঙা ৷ চুরি হয়েছে বুঝতে পেরে তিনি বাড়ির মালকিন বৃদ্ধা সাধনা ঘোষকে ফোন করে খবর দেন । খবর পেয়ে বৃদ্ধা তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে আসেন । এরপর তিনি নিজের ঘরে ঢুকে দেখেন সাত ভরি সোনার গহনা,নগদ ৪০ হাজার টাকা এবং তিনটি এটিএম কার্ড চুরি হয়ে গেছে । ওইদিন বিকেল নাগাদ তিনি কাটোয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । এই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃদ্ধার বাড়ির আশেপাশে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় চুরির ঘটনার কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ । কিন্তু বৃদ্ধা ৩টি এটিএম কার্ড চুরির কথা বলায় পুলিশ অনুমান করে যে চোর নিশ্চয়ই টাকা তোলার চেষ্টা করবে । সেকারণে পুলিশ আশপাশের এটিএম গুলির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে । আর তখনই একটা ফুটেজে কাটোয়ার স্টেশন রোডে একটি এটিএম কাউন্টার থেকে এক যুবককে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে পুলিশ । সেই সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে । ফুটেজে যুবককে চিহ্নিত করে পুলিশ জানতে পারে সে আর কেউ নয়, বরঞ্চ এলাকার দাগি দুষ্কৃতী বলে পরিচিত সন্তু মণ্ডল । বছরখানেক আগে কাটোয়া শহরে একটি মোবাইলের দোকান থেকে তালা ভেঙে প্রায় ৫০ টি মোবাইল চুরি করেছিল সে । পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর কালনা সংশোধনাগারে ছিল । দিন পাঁচেক আগে আগে জামিনে ছাড়া পায় সে । পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় যে কাটোয়া শহরের স্টেশন রোডের বাসিন্দা সাধনা ঘোষের বাড়িতে চুরির ঘটনাটি সেই ঘটিয়েছে । এরপর পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করে ।
জানা গেছে, কুখ্যাত চোর সন্তু মণ্ডলের হদিশ পেতে আশপাশের থানাগুলির সাহায্য নেয় কাটোয়া থানার পুলিশ । শেষ পর্যন্ত কালনা থানার পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার রাতে কালনায় একটি নিষিদ্ধ পল্লী থেকে কাটোয়া থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে । পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সে কবুল করেছে যে সোমবার জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সে কাটোয়ায় ফিরে এসেছিল । আর ওই রাতেই বৃদ্ধার বাড়িতে এসে চুরি করে । চুরির পর এটিএম কার্ডগুলি থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করে । কিন্তু পিন নম্বরের কারনে সে টাকা তুলতে পারেনি । তাই সে বৃদ্ধার এটিএম কার্ডগুলি কাটোয়া শহরে নিকাশিনালায় ফেলে দিয়ে কালনায় পালিয়ে যায় ।
জানা গেছে,চুরির ঘটনার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে সে চুরি করা ৪০ হাজার টাকা এবং এক ভরি সোনার গয়না বিক্রি করে সব খরচ করে ফেলেছে । বাকি ছয় ভরি গয়না নিজের জাঙ্গিয়ার পকেটের মধ্যে সে লুকিয়ে রেখেছিল । পুলিশ সেই গয়না তার কাছ থেকে উদ্ধার করে । আজ বৃহস্পতিবার ধৃতকে কাটোয়া আদালতে তোলা হলে তাকে ৫ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় ৷।