এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৪ আগস্ট : স্কুলের অফিস রুমের সামনে বসে এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি । গলায় ঝোলানো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একটা ছবি । ডান পাশে রাখা একটা ব্যাগ এবং জলের বোতল । ডান দিকের দেয়ালে টাঙানো একটা পোস্টার । যাকে লেখা হয়েছে : “শান্তিপূর্ণ ধারণার দ্বিতীয় দিন” । বামদিকে দুটো বড় বড় ব্যানার টাঙানো৷ এখানে লেখা আছে : “৬ দফা দাবি”৷ আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর ও ছাগল ৷ স্কুলের বারান্দা ভরে রয়েছে গবাদিপশুর মলমূত্রে । তারই মাঝেই বসে দুদিন ধরে ধর্ণা চালিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার কুবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক । তিনি হলেন অসিতাভ দাস ।
জানা গেছে,ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠা হয় ভাতার থানার কুবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় । প্রায় ২১ বছর আগে জুনিয়র হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে উন্নীত হয় এই স্কুলটি । স্কুলে দুই শতাধিক পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন মোট ১৩ জন । বুধবার থেকে স্কুলের অফিসরুমের সামনে ধর্নায় বসেছেন ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক অসিতাভ দাস । তারপর থেকে স্কুল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা ধর্নায় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি । তবে ধর্ণার পাশাপাশি পরীক্ষার খাতা দেখছেন । কিন্তু হঠাৎ কেন এই ধর্ণা ?
এই বিষয়ে অসিতাভ দাসের অভিযোগ,সহ শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক আচরণ করেন প্রধান শিক্ষক ।পে স্লিপ যথাযথ সময়ে দিতে চান না। এছাড়া স্কুলের পরিবেশ ক্রমশ স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। আপাতদৃষ্টিতে স্কুলকে মনে হবে একটা পশুখামার । তিনি বলেন, বিষয়টি বারবার জানানো সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক কোন ব্যবস্থা নেননি । তাই আমি নিরুপায় হয়ে ধর্ণায় বসেছি ।’ কিন্তু অসিতাভ দাসের সঙ্গে এদিন বাকি সহ শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্দোলনে সামিল হতে দেখা যায়নি ৷ কারন হিসাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘সবাই মিলে আন্দোলন করলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ব্যহত হবে । তাই আমরা যোগ দিইনি । তবে অমিতাভবাবুর প্রতি নৈতিক সমর্থন রয়েছে আমাদের৷’
তবে ভাতারের কুবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্নাংশু লোধের বিরুদ্ধে শুধু তার সহ শিক্ষকরাই নন, আমারুন-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মমিরুল হক শেখও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । তিনি শিক্ষক অসিতাভ দাসের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে বলেছেন,’পঞ্চায়েতের অফিসের পাশেই কুবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ৷ তাই ঘটনার কথা সব জানি। ওই স্কুলের সমস্যা নতুন ঘটনা নয়। প্রধান শিক্ষকের প্রতি অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে অভিভাবকদের একাংশের ক্ষোভও রয়েছে। যে শিক্ষক আন্দোলন করছেন তিনি ব্যক্তিগত দাবিদাওয়ার জন্য করেননি। স্কুলের সার্বিক স্বার্থের জন্য করছেন।’ তিনি আরও বলেন,’আমি প্রশাসনের কাছে আবেদন রেখেছি যেন স্কুলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয় ।’
জানা গেছে,ঘটনার কথা জানতে পেরে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবব্রত পালের নির্দেশে কুবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আসে একটি প্রতিনিধিদল । ওই একটি প্রতিনিধিদলে থাকা ভাতার চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মৌমিতা সরকার বলেন,’আমরা ওই শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করছি । জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে ।’জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ফোনে বলেছেন, ‘রিপোর্ট পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’
যদিও যায় বিরুদ্ধে এত কিছু অভিযোগ,সেই প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষক স্বপ্নাংশু লোধ এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি ।।