এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ আগস্ট : গতকাল দিঘার “জগন্নাথ মন্দিরের” আকাশে বৃত্তকার বলয় দেখা গিয়েছিল । যেটিকে ‘রামধনুর আলোকবৃত্ত’ বলে চিহ্নিত করে ‘জগন্নাথধামে প্রভু শ্রীকৃষ্ণের আগমনের বার্তা’ বলে মন্তব্য করেছিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এটা ছিল শুভ সঙ্কেত । তিনি সেই দৃশ্যের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছিলেন,’দিঘার জগন্নাথধামে প্রভু শ্রীকৃষ্ণের আগমনের বার্তা নিয়ে এলো রামধনুর আলোকবৃত্ত ।’ যানিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছে বিজেপি ।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজ্যর্ষী লাহিড়ী(রাজ) জানিয়েছেন যে ওই আদপেই “রাম ধনু” নয়, আসলে ওটা হল “ব্রহ্ম ধনু”৷ তিনি এটাকে অশুভ সঙ্কেত হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে লিখেছেন,’প্রিয় মমতা অফিসিয়াল, এটা রাম ধনু নয়, এই গোলাকার রংধনুটি ব্রহ্ম ধনু নামে পরিচিত এবং এটি একটি অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ, মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’
একই মত পোষণ করেছেন রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি মমতা ব্যানার্জির হিন্দু ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে লিখেছেন ,’ধর্মের জ্ঞানহীন নির্বাচনী হিন্দুত্ব! গতকাল দিঘার “জগন্নাথ মন্দির”-এর উপর সূর্যের চারপাশে দেখা গিয়েছিল এক বিরল ঘটনা — Sun Halo। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে “রামধনু” বলে দাবি করলেন এবং বললেন এটি শুভ লক্ষণ! কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রে, বৃহৎ সংহিতা-তে একে বলা হয়েছে ব্রহ্মধনুষ — যা অশুভ লক্ষণ। এর অর্থ অশান্তি, রোগব্যাধি বা বিপর্যয়ের সম্ভাবনা।আজ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের জন্য আগেই ভুগছে — রাজনৈতিক সন্ত্রাস, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এর মধ্যে পুরীর পবিত্র জগন্নাথ মন্দিরের অপমান করে নকল মন্দির বানানো হয়েছে, আর তার উপর এমন অশুভ ইঙ্গিত! ভগবান পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করুন।’
রাম ধনু ও ব্রহ্ম ধনুর মধ্যে পার্থক্য
রামধনু (রংধনু) এবং ব্রহ্মধনু, উভয়ই প্রাকৃতিক ঘটনা।
বৃষ্টির পর আকাশে সূর্যের বিপরীত দিকে দেখা যায় রামধনু । যেখানে সাতটি রঙের সমাহার থাকে। রামধনু দেখতে অনেকটা রামের ধনুকের মতো বাঁকানো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে রামধনু । বৃষ্টির কণা এবং সূর্যের আলোর মিথস্ক্রিয়ার ফলে এটি তৈরি হয়। এতে সাতটি প্রধান রং দেখা যায়: বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল।
ব্রহ্মধনুও রামধনুর মতোই, তবে এটি চাঁদের আলোয় তৈরি হয়। এটি দেখতে রামধনুর আকারে চেয়েও বড় এবং অস্পষ্ট গোলাকার হয়। এটি সাধারণত রাতের বেলায় দেখা যায়, যখন আকাশে চাঁদ উজ্জ্বল থাকে এবং বৃষ্টি হয় ।
ব্রহ্ম ধনু (Brahma Dhanus) হল একটি বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা একটি পূর্ণ বৃত্তাকার আকারে হিসাবে দেখা যায়। এটি সাধারণত “৩৬০ ডিগ্রি রংধনু” নামেও পরিচিত। এটি দেখতে অনেকটা একটি সম্পূর্ণ বৃত্তের মতো, যেখানে সূর্যের বা চাঁদের আলো বৃষ্টি বা কুয়াশার কণার মধ্যে দিয়ে প্রতিসরিত হয়ে রংধনুর সৃষ্টি করে। “ব্রহ্ম ধনু” শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যেখানে “ব্রহ্ম” মানে “পরম” বা “সর্বোচ্চ” এবং “ধনু” মানে “ধনুক”। এটিকে “পরম ধনুক” বা “স্বর্গীয় ধনুক” হিসাবেও ব্যাখ্যা করা হয় । এটি একটি অত্যন্ত বিরল দৃশ্য, যা সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে বা মেঘমুক্ত দিনে দেখা যায়।
রামধনু ও ব্রহ্মধনুও দুটোই প্রাকৃতিক ঘটনা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে এদের মধ্যে শুভ-অশুভ বিচার করা করা হয় না । তবে হিন্দু শাস্ত্রে এই দুই প্রাকৃতিক ঘটনার মাহাত্ম্য আছে । দেখতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শব্দ চয়নে ভুল নেই ৷ কারন ‘রামধনুর আলোকবৃত্ত’ এর ইংরাজি হল “Sun Halo” । তবে এটি শুভ নাকি অশুভ এনিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিজেপির নেতারা ।।