এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৪ আগস্ট : বুধবার ভোরে মালদার ভূতনীর দক্ষিণ চন্ডীপুরে নব নির্মিত বাঁধ ভেঙে ফুলহরের জল হুহু করে প্লাবিট হয়ে গেছে ভূতনী এলাকা । মাত্র মাস দুয়েক আগে বাঁধটি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়ে নির্মান করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ যে বাঁধ নির্মানে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং শুধুমাত্র বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মানের কারনে সেটা অল্প দিনেই ভেঙে পড়েছে । বুধবার বিকেলে ভাঙা বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বিজেপি ও সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি কোনো দলের নাম না করে দাবি করেন যে ২ বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রের কারনেই এই ঘটনা ঘটেছে ।
এখন একটা অডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । দাবি করা হচ্ছে যে মালদার ভূতনীর এক স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রকে ফোন করে বিজেপি ও সিপিএমের ঘাড়ে দায় চাপানোর বিরোধীতা করে বাঁধ নির্মানে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন । অডিওতে ওই মহিলাকে ফোন করা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে “শুয়রের বাচ্ছা”, ” বো#কা#দা” প্রভৃতি অশ্লীল শব্দে গালাগালি করে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে শোনা গেছে । এক্স-এ অডিও টি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘অনুব্রত লেডী ভার্সন:ভূতনীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এক সাধারণ মানুষ MLA সাবিত্রী মিত্র কে ফোন করে প্রশ্ন করেন,তাতেই মেজাজ হারান তিনি।’ তবে এই অডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন ৷ অডিওতে ফোন করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এমএলএ ম্যাডাম বলছেন ? আমি সাধারণ জনগণ বলছি । আপনি ঠান্ডা ঘরে বসে মিথ্যা ভাষণ কেন দিচ্ছেন, ম্যাডাম ? কোটি কোটি টাকা লুট করার পরে বলছেন কে বা কারা বাঁধ ভেঙে দিয়েছে । বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ আটকাতে…..” । তার কথা শেষ না হতে হতেই অন্য প্রান্ত থেকে মহিলা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিয়ে বলেন, “এই শুয়োরের বাচ্চা, জুতো মেরে তোর মুখ ভেঙ্গে দেব । তুই কে রে ? হা#মির বাচ্ছা । ভাগ এখান থেকে শালা বা#চোদ কোথাকার ।’ অভিযোগকারী ফের বলেন,’বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ করলে তো ভাঙবেই ।’ এরপর মহিলা বলেন, তুই কি মিডিয়া ? কি জানতে চাইছিস ?’ এরপর ফের বালির বস্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে মহিলা ফোনটি কেটে দেন । দ্বিতীয়বার ফোন করা হলে মহিলা দেখে নেয়ার হুমকি দেন তাকে ।
এদিকে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার পর ভূতনীতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । এই ঘটনায় মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছে সিপিআইএম ও বিজেপি নেতৃত্ব । ভূতনী প্লাবিত হওয়ার সাথে সাথেই গঙ্গার জলে ভাসছে মালদার বৈষ্ণবনগর বিধানসভার বীরনগর-১ নম্বর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। অঅভিযোগ যে গত কয়েক দিন ধরে এই সমস্ত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও, এখনও দেখা নেই প্রশাসনিক আধিকারিক সহ নেতামন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের। যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বন্যা দুর্গতরা।
জানা গেছে, দিন চারেক আগেই বৈষ্ণবনগর বিধানসভার বীরনগর-১ নম্বর অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে গঙ্গার জল ঢুকেছে। সেই জলে প্লাবিত হয়েছে বীরনগর-১ অঞ্চলের মুকুন্দটোলা, নাসিরটোলা, বাবুপুর, চিনাবাজার,স্কুল ফিল্ড, সরকারটোলা সহ একাধিক গ্রাম। ফলে বন্যা দুর্গতদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার জলবন্দী পরিস্থিতিতেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে দুর্গত এলাকায় সামান্য ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ । এমনকি প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে নেতামন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় দেখা মেলেনি। যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বন্যা দুর্গতরা। ত্রাণ না মেলার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন সাহা নিজেও।
বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ বাঁধ ভেঙে ভুতনী প্লাবিত হওয়ার ঘটনায় শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’তৃণমূল সরকারের আমলে জলে জনতা । মালদার মানিকচকের ভূতনিতে ভেঙে গেল ফুলহার নদীর বাঁধ। কয়েকমাস আগে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঁধ দিয়েছিল সেচ দফতর। সব তলিয়ে গেল একনিমেষে। ভূতনি, সামশেরগঞ্জ, ঘাটাল, সুন্দরবন-সহ পশ্চিমবঙ্গের এমন বন্যাপ্রবণ এলাকা গুলিতে বর্ষা আসার সময়ে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়। তাও বাঁশ আর বালির বস্তা দিয়ে। দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই। আসলে রাজ্য সরকার এমনভাবেই পরিকল্পনা করছে যাতে কাজের নামে পুরো টাকাটাই পকেটে যায়। আগে কাটমানির পরিমাণ ছিল ৬০-৪০, আর এখন ৮০-২০। সামনেই ভোট, কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঁধ তৈরির কাজ দেখিয়ে টাকা পকেটে ভরছেন নেতারা। রাজ্যে খুঁজলে এমন অনেক ঘটনা পাওয়া যাবে।’।