এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ আগস্ট : মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বনাম নির্বাচন কমিশনের নজিরবিহীন সংঘাতে “বলির পাঁঠা” হয়ে গেলেন মুখ্যসচিব মনোজ কুমার পন্থ। আজ বুধবার বিকেল ৫টায় মনোজ পন্থকে দিল্লিতে জরুরি তলব করেছিল কমিশন । অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আধ ঘন্টা আগেই তিনি দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পৌঁছে যান । সূত্রের খবর, ৪ আধিকারিককে বরখাস্ত ও ওই চার আধিকারিকসহ একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপির জন্য এফ আই আর না করায় কমিশনের তোপের মুখে পড়তে হয় মুখ্যসচিবকে । প্রায় ১ ঘন্টা কমিশনের জেরার মুখে পড়েন তিনি । যদিও মুখ্যসচিব ও কমিশনের তরফে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি । কিন্তু জানা যাচ্ছে যে মনোজ পন্থের জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি কমিশন। বরং তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, অক্ষরে অক্ষরে কমিশনের নির্দেশ পালন করতে হবে রাজ্যকে। এক্ষেত্রে ২১ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত,ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর পূর্বের ‘নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (‘ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ বা ইআরও) দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী এবং ‘সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ বা এইআরও) তথাগত মণ্ডলসহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও এবং এইআরও সুদীপ্ত দাসকে সাসপেন্ড করে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি সুরজিৎ হালদার নামে এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের নামেও এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । কমিশনের তরফে পরপর দু’বার মুখ্যসচিব মনোজ কুমার পন্থকে এনিয়ে নোটিশ করা হয়৷ কিন্তু বরখাস্ত বা এফআইআর দায়ের না করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দুই আধিকারিককে সরিয়ে দায় সারার চেষ্টা করেন মমতা ব্যানার্জি ও মুখ্যসচিব । এরপরেই কমিশন আজ বুধবার মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে জরুরি তলব করে ।
তার আগে গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেবেন না তিনি। তিনি বলেছিলেন, ”আমি কারও কোনও পানিশমেন্ট (শাস্তি) হতে দেব না।” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। তা সত্ত্বেও কমিশন অতিসক্রিয়। এখন থেকেই সাসপেন্ড করতে শুরু করেছে। নাম না করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ‘বিজেপির বন্ডেড লেবার (ক্রীতদাস)’ বলেও আক্রমণ করেন তিনি। অভিযোগ করেন, রাজ্যের সরকারি অফিসার এবং পুলিশকে ভয় দেখাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নাম না করে নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘হাতের পুতুল’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব কমিশনের কর্তাদের নিজের অসুহায় অবস্থার বুঝিয়ে বলেন যে অফিসারদের সাসপেন্ড করার বিষয়টি নিয়ে তিনি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই সবটা নির্ভর করছে। কলকাতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বিশদে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। এখন দেখার বিষয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চরম সংঘাতে যান নাকি আপোষ করতে বাধ্য হন । আর সংঘাতে গেলে কমিশন কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয় ।।