এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ আগস্ট : ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বা আই-প্যাক হল পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে একটি বিতর্কিত নাম । সংস্থাটির কাজ হল তৃণমূলকে বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শ দেওয়া । কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটের পর থেকেই এই সংস্থাকে নিয়ে বিরোধী দল, বিশেষ করে বিজেপি বারবার প্রশ্ন তুলছে । আই প্যাকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নিতে শোনা গেছে অভিষেক ব্যানার্জি গ্রুপকে ৷ সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন বলে খবর । আই-প্যাক-এর কৌশল মেনে লাগাতার সাফল্যও পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । রাজ্যের প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়ার মাঝে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটেও এই সংস্থাটি বৈতরণী পার করবে বলে আশাবাদী শাসক দল। কিন্তু পারিশ্রমিক বাবদ সংস্থাটিকে যে বিপুল অংকের টাকা তৃণমূল কংগ্রেসকে দিতে হয় তা আসে কোত্থেকে ? তৃণমূলের ব্যক্তিগত ফান্ড নাকি রাজ্যের কোষাগার থেকে সংস্থার অর্থায়ন হয় ? এনিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । এবারে তিনি রাজ্য সরকার ও প্রশাসনে ওই বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থাটি অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ তুলছেন শুভেন্দু । এনিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে আজ কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠিও লিখেছেন তিনি ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লেখা চিঠির কপিটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন এবং ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির (আই-প্যাক) মধ্যে কথিত অশুভ ও অবৈধ যোগসাজশের বিষয়ে জরুরি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে আমি মাননীয় কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জি-কে চিঠি লিখেছি।:
তিনি লিখেছেন,’৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আমার সাম্প্রতিক এক্স পোস্টে আমি যেমনটি তুলে ধরেছিলাম, ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কাজ করা একটি বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থার কর্মচারী আই-প্যাক সহযোগীরা আমাদের রাজ্য সরকার ও প্রশাসনে অনুপ্রবেশ করেছে বলে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। তারা WBCS নির্বাহী কর্মকর্তা এবং WB ক্যাডার আইএএস কর্মকর্তা সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ জারি করছে বলে জানা গেছে। এটি ক্ষমতার একটি স্পষ্ট অপব্যবহার, দলীয় রাজনীতি এবং জনসেবার মধ্যে সীমারেখা ঝাপসা করে দেয় এবং সম্ভাব্যভাবে টিএমসির প্রচারণা পরিচালনা সংস্থাকে তহবিল দেওয়ার জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ নষ্ট করে। এটি একটি আর্থিক কেলেঙ্কারী এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি নাগরিকের আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতাও হতে পারে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আমি মাননীয় মন্ত্রীকে জাতীয় তথ্য বিজ্ঞান কেন্দ্র (NIC) এর মাধ্যমে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করেছি যাতে নিশ্চিত করা যায়: ১. পশ্চিমবঙ্গের সরকারি যোগাযোগে অননুমোদিত I-PAC জড়িত থাকার ডিজিটাল সংযোগ । ২. বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রযুক্তি সম্পদের অপব্যবহার। ৩. তথ্য গোপনীয়তা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ম লঙ্ঘন। ৪. সরকারি তহবিল থেকে I-PAC-তে অবৈধ অর্থ প্রদান, যদি থাকে,। এটি কেবল একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। আমি এই পদ্ধতিগত পচনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে গত ৮ আগস্ট শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তুলেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব আই-প্যাক-এর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক কাজ এখন একঝাঁক কর্পোরেট ভাড়াটের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যারা কোনো প্রশাসনিক পদেই নেই !’ তার কথায়, ঠিক যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই দিয়েছেন, একই ভাবে তিনি এখন একটি ভাড়া করা রাজনৈতিক পরামর্শ প্রদানকারী কর্পোরেট সংস্থাকে রাজ্য প্রশাসনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন,তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ডিরেক্টর পদ মর্যাদার, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি পদে কর্মরত একজন WBCS (Executive) অফিসারকে নির্দেশ দিচ্ছে আই- প্যাক ।।