এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ আগস্ট : কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে ৷ এদিকে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এসআইআর আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ মূলত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিম ভোটারদের বাঁচাতে তৃণমূল সুপ্রিমো এই চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি এও অভিযোগ করছেন যে মমতা ব্যানার্জি তার অনুগত বিএলওদের (ব্লক লেভেল অফিসার) দিয়ে এসআইআর-এর কাজ করাতে চাইছেন,যাতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও ভুতুড়ে ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পরে ৷ এবারে মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক ব্লকের বিডিওদের বিরুদ্ধে কমিশনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে বিএলও নিয়োগের অভিযোগ তুললেন শুভেন্দু অধিকারী ।
আজ রবিবার শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা ব্লকের ৯৬ জন বিএলও-দের তালিকা এক্স-এ পোস্ট করে তিনি এই অভিযোগ তুলেছেন । তিনি লিখেছেন,’নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে বিএলও (Booth Level Officers – BLO) নিয়োগ করার ক্ষেত্রে স্থায়ী সরকারি কর্মীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে, উক্ত বুথে বা সংলগ্ন বুথে স্থায়ী সরকারি কর্মী, বিশেষত শিক্ষক না থেকে থাকেন, শুধুমাত্র সেই পরিস্থিতিতে অস্থায়ী কর্মী অথবা কন্ট্রাকচুয়াল/চুক্তি ভিত্তিক কর্মী কে বিএলও হিসেবে নিয়োজিত করা যেতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আগে থেকে যাচাই করে নিতে হবে যে, সেই ব্যক্তির কোনও রাজনৈতিক পরিচয় অথবা আনুগত্য রয়েছে কি না, বা কোনো ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন কি না, যদি থাকেন তবে সেই ব্যক্তি কে বিএলও-র পদে বসানো যাবে না।
অথচ এই নির্দেশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লক সহ বিভিন্ন ব্লকের বিডিও-রা নিয়ম লঙ্ঘন করে প্যারা টিচার এবং কন্ট্রাকচুয়াল শিক্ষকদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করেছেন। আমি লালগোলা ব্লকের বিএলও-দের তালিকা সংযুক্ত করলাম। যাদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা বর্তমানে কোন পদে রয়েছেন, বা ওনাদের চাকরির শ্রেণী বিভাগ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে প্রায় সবাই কন্ট্রাকচুয়াল/চুক্তি ভিত্তিক কর্মী !’
তিনি প্রশ্ন তোলেন,’মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে কি স্থায়ী সরকারি কর্মী নেই? নাকি জেনে বুঝে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কে উপেক্ষা করে এই রকম প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ?’ পাশাপাশি জনগনকে আহ্বান জানিয়ে এই ধরনের অনিয়ম নজরে পড়লে তার বিবরণ শেয়ার জন্য নিজের একটা ইমেল ঠিকানাও দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি লিখেছেন,’আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই তালিকা বিডিও তৈরি করেন নি, তৈরি করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও আই-প্যাক। তাই আমি লালগোলা ব্লকের সচেতন নাগরিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের সম্মানীয় সদস্যগণদের অনুরোধ জানাবো, যে আপনারা এই তালিকা যাচাই করে দেখুন, যদি আপনাদের চোখে পড়ে যে কোনও বুথে স্থায়ী সরকারি কর্মী ও শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কন্ট্রাকচুয়াল কর্মী, চুক্তি ভিত্তিক কর্মী, প্যারা শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কে বিএলও-র দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তাহলে আপনারা আমাকে ইমেল পাঠান। আমার ইমেল আইডি হলো: [email protected] ৷ বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের এই কারচুপি আটকানোর জন্যে, তৃণমূল কংগ্রেস বাদে অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অনুরোধ জানাবো আমাকে এই তথ্য পাঠানোর জন্য। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে এই বিডিওর বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের জন্যে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করাবো।’ পোস্টটি তিনি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনেট মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকে ট্যাগ করে লিখেছেন : ‘বাংলা_লড়বে_বাংলা_জিতবে’ ।
উল্লেখ্য,ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের দু’জন করে ৪ জন ইআরও (নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক) এবং এইআরওকে সাসপেন্ড করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন । শুধু তাইই নয়, অপরাধমূলক কার্যকলাপের’ জন্য তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন এফআইআর করার নির্দেশও দিয়েছে । তাদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুর পূর্বের দুই ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী এবং তথাগত মণ্ডল । পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের দুই ইআরও বিপ্লব সরকার ও সুদীপ্ত দাস। তাঁদের পাশাপাশি সুরজিৎ হালদার নামে এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যদিও নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ পালন হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা মোতাবেক তাদের বরখাস্ত বা তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়নি৷ যেকারণে ফের মুখ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।।