এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,০৯ আগস্ট : নালার জলে কোমর অব্দি ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক আতঙ্কিত যুবক । কাঁদো কাঁদো মুখে তার হাত দুটো জড়ো করা বুকের কাছে । পাড়ে আরো বেশ কয়েকজন লাঠিসোঁটা হাতে তাকে শাসাচ্ছে ৷ একজন বলছে, “৪০টা মাল প্লাস টাকা ভাই ।” তখন জলে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “মুই জানই না ।” পাড়ের একজন গাছের ডাল উঁচিয়ে শাসাচ্ছে, “তুই এ টু জেড জানস ৷” হামলাকারীদের মধ্যে প্রথমজন ফের বলে,”তুই চল্লিশটা মাল মারছিস ভাই। মালের কত রেট জানিস ? ভাড়া খরচা, আনা খরচা । কত টাকা জানস ?” তখন আক্রান্ত যুবক কাতরভাবে বলছে, “আমি কিচ্ছু জানস না । মুই কোনো ব্যবসা করস, তুই দেখিস ?” তখন হামলাকারী ফের বলে, ‘তোর সম্বন্ধী না শালা কেউ আছে…তুই ভাই ঘটনা কিছু পাঠাইছিস তাদের সাথে ।” যদিও বারবার আক্রান্ত যুবক জানায় যে সে ওই ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানেনা । এরপর আরো কিছু কথোপকথন ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি চলার মাঝে দুপাশ থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে জলে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে বেদম পেটাতে থাকে হামলাকারীরা । যুবক যন্ত্রণায় কাঁদতে শুরু করে ।
কিন্তু ঘটনাটা কি ?
যেটা জানা যাচ্ছে যে শুক্রবার বিকেলের দিকে এই ঘটনাটি ঘটে । আক্রান্ত যুবকের নাম রতন দাস । হামলাকারীরা হলো কোচবিহার-১ নম্বর ব্লকের জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান স্বপ্না বর্মণের দেওর তপন বর্মণ ও তার দলবল । সাম্প্রতিক কোচবিহার জেলা পুলিশ প্রচুর পরিমানে মাদক ও বেশ কয়েকটা পিস্তল উদ্ধার করে । ওই সমস্ত মাদক এবং আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ওই তৃণমূল নেতার বলে অভিযোগ । কিন্তু পুলিশ সেগুলিকে বাজেয়াপ্ত করায় চরম ক্ষুব্ধ হয় তৃণমূল নেতা । আর তার জেরেই রতন দাসকে নালায় ফেলে তালিবানি কায়দায় পেটানো হয় বলে অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’প্রায় চার বছর হতে চললো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসার রিপোর্টে জানিয়ে ছিল “পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নয় শাসকের আইন চলে”। শাসকের আইন কি ভাবে বলবৎ হয় তার প্রদর্শন চলছে কোচবিহার জেলায় !গতকাল কোচবিহার ১ নং ব্লকের জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান; স্বপ্না বর্মণের কীর্তিমান দেওর; তপন বর্মণ তার সাঙ্গপাঙ্গকে সাথে নিয়ে একটা নিরীহ সাধারণ মানুষকে মেরেই চলেছে। ঘটনাটি মাদক পাচারকে কেন্দ্র করে। নিজেরাই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মারধর শুরু করে। কোচবিহারে তৃণমূলের জঙ্গলরাজ চলছে, আইন বলতে কিছু নেই। পুরো পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি মাদক পাচার চক্রের সাথে জড়িত। জঙ্গলরাজ শেষ করতে হলে সর্বস্তরের জনগণকে এই দুর্নীতিগ্রস্ত, তোষণবাজ তৃণমূল সরকারকে বিসর্জন দিতেই হবে।’
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কোচবিহার জেলা অনুবাদের শিরোনামে রয়েছে । শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের ওপর তৃণমূলের লোকজনদের হামলার ঘটনায় গোটা দেশ তোলপাড় হয় । এই ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহকে প্রধান আসামি করে এফআইআর দায়ের করেছেন বিরোধী দলনেতা । এরপর বৃহস্পতিবার দিনহাটার নাজিরহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শালমারা এলাকায় বিজেপি-র চার নেতা-নেত্রীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একজন গর্ভবতী মহিলার পেটে লাথি পর্যন্ত মারা হয় বলে অভিযোগ । শুক্রবার আক্রান্ত পরিবারগুলির খবর নিতে গিয়ে তৃণমূলের মহিলা ব্রিগেডের বাধার মুখোমুখি হতে হয় বিজেপির প্রতিনিধি দলকে । ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক মালতি রাভা, বরেন বর্মন, সুশীল রায়, ও বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে বর্মন প্রমুখ । এমনকি বিজেপির এক কর্মীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এরপর জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানের দেওয়ের বিরুদ্ধে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের অভিযোগ ওঠায় বিপাকে পড়েছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব৷ যদিও মারধরের ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন ।।