এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ আগস্ট : বঙ্গের রাজনীতিতে আই-প্যাক (I-PAC) হল একটি বহু চর্চিত নাম । আই-প্যাক-এর পুরো ফর্ম হল ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (I-PAC) ৷ এককথায় বলতে গেলে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা একটি বেসরকারি সংস্থা ৷ কোনো রাজ্যে যখন প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ওঠে তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শাসক দল বিপুল টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে ওই সংস্থাকে ভাড়া করে । ২০২১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আই-প্যাক একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে রেখেছে । মমতা ব্যানার্জি তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের যাবতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে এই সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ । ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের পর আই-প্যাক-এর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি৷ ২০২৬ সালের ভোটের আগেও এই সংস্থার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ জানিয়ে আসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন । তাঁর অভিযোগ যে ওই বেশ সরকারি সংস্থাটির সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি ।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’ভাড়াটে কর্মী রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বে ? রাজ্যের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব আই- প্যাক (I-PAC)–এর হাতে তুলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক কাজ এখন একঝাঁক কর্পোরেট ভাড়াটের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যারা কোনো প্রশাসনিক পদেই নেই ! ঠিক যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই দিয়েছেন, একই ভাবে তিনি এখন একটি ভাড়া করা রাজনৈতিক পরামর্শ প্রদানকারী কর্পোরেট সংস্থাকে রাজ্য প্রশাসনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আই-প্যাকের খবরদারি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ডিরেক্টর পদ মর্যাদার, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি পদে কর্মরত একজন WBCS (Executive) অফিসারকে নির্দেশ দিচ্ছে একটি বেসরকারি সংস্থার সাধারণ কর্মচারি, ভাবা যায়? ভূ ভারতে এমন নিদর্শণ কেউ দেখেছেন বা শুনেছেন?
WBCS (Executive) Officers’ Association এবং IAS Association -এর পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের অফিসাররা সরকারের সঙ্গে কোনও বৈধ বা সাংবিধানিক সম্পর্ক না থাকা কিছু কর্পোরেট কর্মচারীর তাঁদেরকে নির্দেশ দেবার এই ঘটনা প্রসঙ্গে কি কিছু বলবেন? তারা আদৌকি কিছু বলেছেন? প্রশাসনিক সংগঠনগুলির এই বিষয়ে কি কোনও বক্তব্যই নেই?’
তিনি আরও লিখেছেন,’একটি বেসরকারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা যে কিনা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রচার ও সাংগঠনিক রূপ রেখা তৈরীর কাজে জড়িত তাকে রাজ্য সরকার দিনের পর দিন প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার খুল্লামখুল্লা ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে, এটা কি আইনত বৈধ? বেসরকারি সংস্থার এই “পরিসেবা”র জন্য কত টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার? সংস্থাটিকে টাকাটা কি রাজ্যের কোষাগার থেকে দেওয়া হচ্ছে? রাজ্যে এই অবৈধ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সাথে একটা সুপরিকল্পিত আর্থিক কেলেঙ্কারিও যুক্ত।
রাজ্যের পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থাটায় পচন ধরে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শুধুমাত্র শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় স্বার্থে কাজ করে চলেছে, আর প্রশাসন তা মেনে নিয়ে কোনোও বিরোধিতা না করেই চুপচাপ সেই কাজে সহযোগিতা করে চলেছে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর আরো একটি মেয়াদ নিশ্চিত করা যায়। এদিকে রাজ্যের সাধারণ জনগন ভাবছে রাজ্য সরকার তাদের সেবায় নিয়োজিত, কিন্তু বাস্তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকার জনগণের বিশ্বাস নিয়ে খেলছেন।’
সবশেষে তিনি বলেন,’আমি এই অনৈতিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি কারণ প্রশাসনের ভেতর এই অনৈতিক আঁতাতকে অবিলম্বে ভেঙ্গে না ফেলতে পারলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’ পাশাপাশি “বাংলা লড়বে বাংলা জিতবে” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ।।

