এইদিন ওয়েবডেস্ক,আসানসোল,০৬ আগস্ট : গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের মেয়েকে ধর্ষণের পর দড়ি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল বাবা । ২০২৪ সালের ১২ মে গভীর রাতে ওই নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনার পর এক বছর ছয় মাসের মাথায় নরপশু বাবাকে ফাঁসির আদেশ দিল পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বিশেষ পকসো আদালত । গত পরশু আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । আজ বুধবার সাজা ঘোষণা করেন বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক বিচারক সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় । আসানসোল আদালতের ইতিহাসে এটাই প্রথম ফাঁসির আদেশ ।
আদালত সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটেছিল পশ্চিম বর্ধমানের হিরাপুর থানার নরসিংবাঁধের উঁচু বাগান এলাকায় । অভিযুক্ত বাবা পেশায় টোটো চালক । ২০২৪ সালের ১২ মে গভীর রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর বাবা-মা ও ভাই বোনের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমোচ্ছিল ১৫ বছরের ওই কিশোরী । পরের দিন অর্থাৎ ১৩ মে, মেয়েটির মা ঘুম থেকে ওঠার পর দেখে তার মেয়ের মুখে চাদর ঢাকা এবং সে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। সন্দেহ হওয়ায় তিনি মেয়ের মুখের চাদর ছড়িয়ে দেখেন গলায় কালশিটে দাগ এবং নাক-কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে । সেই সময় ঘরেই ছিল কিশোরীর বাবা । সে তার স্ত্রীকে বিষয়টা নিয়ে শোড়গোল না পাকানো এবং মেয়েকে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় । কিন্তু কিশোরীর মা চিৎকার করে লোকজন ডাকাডাকি করে । তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে ।
মামলায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানান,এই ঘটনায় স্বামীর উপর সন্দেহ হয় মৃতা নাবালিকা মায়ের । এরপর তিনি ১৪ মে তিনি হিরাপুর থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করে । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতার বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
জানা গেছে, ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সাব ইন্সপেক্টর শুভাশিস ব্যানার্জি । কিশোরীর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে খুনের বিষয়টি উঠে আসে । এছাড়া কিশোরীর যৌনাঙ্গে বাবার ডিএনএ-এর অস্তিত্ব মেলে ৷ শুধু তাই নয়, তদন্তকারী অফিসার কিশোরীর মুখ ঢাকা দেওয়া চাদরটিতে বীর্যের নমুনা দেখতে পান । সেই চাদর ফরেনসিক ল্যাবে পাঠালে ঘাতক বাবার ডিএনএ-এর সঙ্গে সেটি মিলে যায় । সেই সাথে আসামির দেখানো জায়গাতে খুনে ব্যবহৃত দড়িটি উদ্ধার করেন ইনভেস্টিগেশন অফিসার । কিশোরীর গলায় দড়ির চিহ্ন এবং উদ্ধার হওয়া দড়ির খাঁজের সঙ্গে মিলে যায় । এমনকি তদন্ত চলাকালীন আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেয় বলে জানান আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ ।
এরপর আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ । বিচার চলাকালীন ১৬ জন স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল । তার মধ্যে রয়েছেন ফরেনসিক ল্যাবের চিকিৎসক,আইও,মৃতার মা, পরিবারের সদস্য এবং কিছু প্রতিবেশী । গত পরশু আদালত আসামিকে পকসো আইনের ৬/৬, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা) এবং ২০১ (প্রমান লোপাট) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে৷ আজ ওই মামলার শুনানিতে প্রথম দুই ধারায় মৃত্যুদণ্ড এবং প্রমান লোপাটের জন্য সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক । এছাড়া ৫০,০০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে । সেই সাথে মৃতার মাকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ।।