এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৫ আগস্ট : হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি স্টেশনরোড এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে কাজে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মারা গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা এক কিশোরের । মৃত কিশোরের নাম কৃষ্ণ হাজরা (১৭)। আজ মঙ্গলবার বৈদ্যবাটি স্টেশনরোডের ওই মিষ্টির দোকানের মালিক চার কর্মচারীকে দিয়ে কিশোরের মৃতদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে কেতুগ্রামে তার বাড়িতে পৌঁছে দিলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় । যারা কৃষ্ণ হাজরার দেহটি পৌঁছে দিতে এসেছিল তাদের দাবি যে কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার । যদিও পরিবারের দাবি, কিশোরের মৃতদেহের গলা, পা সহ একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একারনে তাদের সন্দেহ কৃষ্ণকে খুন করা হয়েছে । কেতুগ্রাম থানার আইসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় জানান,বুধবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে ।
জানা গেছে,কেতুগ্রাম থানার গোপালপুর গ্রামের শিবতলায় বাসিন্দা পেশায় জনমজুর গোপাল হাজরার একমাত্র ছেলে কৃষ্ণ। কৃষ্ণর যখন সাড়ে তিন বছর বয়স তখন তার মা করুনাদেবী রোগে মারা যান । মায়ের মৃত্যুর পর বাবা,পিসি ও ঠাকুমার কাছে বড় হয় কৃষ্ণ । গোপালবাবু জানান,পারিবারিক অভাবের কারনে বছর খানেক আগে কিশোর পুত্রকে তিনি হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি স্টেশনরোড এলাকার ওই মিষ্টির দোকানের কর্মচারীর কাজে পাঠিয়েছিলেন । গ্রামের এক পরিচিত যুবক যোগাযোগ করে দিয়েছিল ।
মৃত কিশোরের সম্পর্কীয় এক দাদা সন্তু হাজরা বলেন, ‘আজ ভোরের দিকে দোকানমালিক আমাদের ফোন করে বলেন,’কৃষ্ণ মারা গিয়েছে। তোমরা লাশটা নিয়ে যাও’ । এরপর তিনি নিজেই তার অন্য চার কর্মীকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ভাইয়ের মৃতদেহটি বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ।’ তিনি তার ভাইয়ের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখে কৃষ্ণকে খুনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।
জানা গেছে, আজ দুপুর ১২ টা নাগাদ ওই দোকানেরই চার কর্মচারী অমিত যাদব, বিশ্বজিৎ পাল, বিদ্যুৎ ঘোষ এবং রতন পাল অ্যাম্বুলেন্সে কিশোরের দেহটি বাড়ি পৌঁছে দিতে আসে । এদিকে ঘটনার কথা কানাকানি হলে প্রচুর লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে যায় । খবর পেয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ আসে । পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় ।
যদিও মৃত কৃষ্ণর এক সহকর্মী রতন পালের দাবি, ‘কৃষ্ণর জর ও বমির উপসর্গ হয়েছিল কয়েকদিন ধরে । সোমবার সন্ধ্যায় বাড়াবাড়ি হয় । ওষুধ দেওয়া হয় । রাতে বিশেষ খাবার খেতে পারেনি । যেটুকু খেয়েছিল সেটাও বমি করে দেয় । তারপর সে ছটফট করতে থাকে । তখন আমরা মালিককে জানাই। মালিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু কোনো গাড়ি না পাওয়ায় আমরা তিনজন মিলে একটি বাইকের মাঝে বসিয়ে কৃষ্ণকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তার ৷’ কিন্তু কিশোরের মৃত্যুর বিষয়ে মালিকপক্ষের এই প্রকার যুক্তি মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীরা । পুলিশ জানিয়েছে,ঘটনার তদন্ত চলছে ।।
মৃত কিশোর কৃষ্ণ হাজরা । ফাইল ছবি ।