শ্যামসুন্দর ঘোষ,কলকাতা,০৪ আগস্ট : কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বিহারে এসআইআর-এর কাজ সম্পুর্ণ । অন্তত ৭৫ লাখ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে বলে খবর । চলতি মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর-এর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, এরাজ্যে অন্তত ১ কোটি ২৫ লক্ষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে ভোটার তালিকায় । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি হুঙ্কার দিয়েছেন যে তারা একটা নামও বাদ দিতে দেবেন না । মুখ্যমন্ত্রী তো ব্লক লেভেল অফিসারদের পর্যন্ত এই বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ।এসআইআর নিয়ে মমতা-অভিষেকের এই বিরোধিতার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেছেন,’ভোটার তালিকায় ডবল ডবল নাম, তাই নাম কাটা পড়ার সম্ভাবনায় এত কষ্ট, এত আন্দোলনের নাটক!’
এদিকে বিজেপি একের পর বুথে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী ও ভুয়া ভোটারের নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে চলেছে । ভুয়া ভোটারের নাম লাগাতার ফাঁস করছেন শুভেন্দু অধিকারী । আজ সোমবারও নিজেত এক্স হ্যান্ডেলে ভোটার লিস্ট শেয়ার করেছেন তিনি । যেখানে চিহ্নিত কয়েকটি নামকে তিনি ভুয়া ভোটার বলে দাবি করেছেন ।
বিরোধী দলনেতা লিখেছেন,”পশ্চিমবঙ্গেও ভোট চুরি করার বিহার মডেল, ওখানে আরজেডি এখানে টিএমসি ! ভোটার তালিকায় ডবল ডবল নাম, তাই নাম কাটা পড়ার সম্ভাবনায় এত কষ্ট, এত আন্দোলনের নাটক! বিহারের তেজস্বী যাদবের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ডানকুনি পৌরসভার কাউন্সিলর কবিরুল আলমের ভোটার তালিকায় দুটি জায়গায় নাম জ্বল জ্বল করছে!
ভোটার তালিকার যে দুই জায়গায় নাম রয়েছে কবিরুল আলমের; ১৯৪/২৯৭ নং বুথ, ক্রমিক নং ১৬৯ এবং ১৯৪/২৯১ নং বুথ, ক্রমিক নং ৯২ (প্রমাণ স্বরূপ ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে)।
রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসন আর নৈরাজ্য কায়েমের জন্য ভোটার লিস্ট এ কারচুপির পন্থা অবলম্বন করে এসেছে এতোদিন শাসক দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট বৈতরণী পার করতে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় মৃত ভোটার, ভুয়ো ভোটার, বাংলাদেশী আর রোহিঙ্গা ভোটারের ছড়াছড়ি। রাজ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের(SIR) কাজ শুরু করতে পারে এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কিত। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো করেই জানেন এই প্রকৃয়া শুরু হলেই রাজ্যে প্রায় এক কোটির উপর ভুয়ো ভোটার ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে এবং এর ফলে তার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হবে না।”
পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে বিজেপির-১ মন্ডল সভাপতি দেবজীত দে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভোটার লিস্ট শেয়ার করে প্রশ্ন তুলেছেন, ১০০% হিন্দু বহুল গ্রামে মুসলিম ভোটার কোথা থেকে এল? তার শেয়ার করা ওই ভোটার লিস্টের ১১ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে রাখি খাতুন, ৩৬ নম্বরে ডিউটি খাতুন, ৩৭ নম্বরে রসীনা খাতুন, ৫৩৭ নম্বরে সফিউদ্দিন শেখ এবং ৫৪৫ নম্বরে জনৈক আলেনুর বেগমের নাম রয়েছে ।
দেবজীত দে লিখেছেন,”মঙ্গলকোট বিধানসভার সরগ্রাম অঞ্চলের ১২ টি বুথেই ১০০% হিন্দুদের বসবাস। একজনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস না থাকা সত্বেও বৈঁচি গ্রামের ২৭৬ নং বুথটির ভোটার লিস্টে হঠাৎ করে মুসলিম ভোটারদের নাম জ্বল জ্বল করছে। উদাহরণ স্বরুপ ২৭৬ নং বুথের এই ভোটার তালিকা সর্বসমক্ষে তুলে ধরলাম। এই বুথটিতে বসবাসকারী সকলেই হিন্দু ভোটার, অথচ ভোটার তালিকায় ৫ জন মুসলিম ভোটারের নাম বিদ্যমান। যারা ঐ বুথের বাসিন্দাই নন অর্থাৎ সম্পূর্ণ ভুয়া। রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভার বেশীরভাগ বুথের ভোটার তালিকায় এই ধরনের ভুয়ো ভোটার বিদ্যমান। অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করা উচিত তবেই এই ধরনের ভুতুড়ে ভোটারের নাম বাদ পড়বে। এরাই প্রকৃত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক, এই কারণেই এই সব ভুয়ো নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কিত।”।

