শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৬ আগস্ট : পাশাপাশি দুটি নৌকাকে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা । আর তার উপর বসে বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন একদল মানুষ । রয়েছে সাইকেল ও মোটরবাইকও । আর এইভাবেই দিনের পর দিন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরে খড়ি নদীর শুটরাঘাট দিয়ে ঝুঁকির পারাপার করছেন পূর্ব বর্ধমান ও নদীয়া জেলার অসংখ্য মানুষ । স্থানীয় গ্রামবাসীরা পাকা সেতুর দাবি তুলেছেন বারবার । মিলেছিল ঢালাও প্রতিশ্রুতিও । কিন্তু ভোট আসে ভোট যায়, অবস্থা বদলায় না মন্তেশ্বরের শুটরাঘাটের । স্থানীয়দের অভিযোগ, পাকা সেতু দূর অস্ত, শুটরাঘাটে নৌকায় ওঠার মত স্থায়ী কোনও ব্যাবস্থা পর্যন্ত নেই । ফলে মহিলা, পুরুষ ছাড়াও শিশুদের পর্যন্ত লাফিয়ে উঠতে হয় নৌকায় । নদী পারাপার করতে গিয়ে কোন দিন একটা বড়সড় দূর্ঘটনা না ঘটে যায়,এই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
খড়ি নদীতে শুটরাঘাটটি মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুর-২ জিপির মধ্যে পড়লেও পূর্বস্থলী বিধানসভার অন্তর্গত । শুটরাঘাট থেকে প্রায় চার কিমি দূরে সুমদ্রগড়ের কাছে ভাগিরথীতে গিয়ে মিশেছে খড়ি । ফলে বর্ষার সময় শুটরাঘাটের কাছে খড়ি নদী ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে । বছরের বাকি সময় খড়ি নদীতে জলের বিশেষ চাপ থাকে না । তখন বাঁশের অস্থায়ী সেতু দিয়েই চলাচল করেন গ্রামবাসীরা । কিন্তু বর্ষায় নৌকা ছাড়া গত্যন্তর নেই । এদিকে যাতায়তের কোনও সড়ক পথ না থাকায় দিনের পর দিন প্রাণ হাতে করে নদী পারাপার করতে হয় সাধারন মানুষকে ।
স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ রায়,কল্লোল গনরা বলেন, ‘শুটরাঘাটে খড়ি নদীর এক প্রান্তে পড়ছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লক । অন্য প্রান্তে নদীয়া জেলার বেলগড়ে গ্রাম । বেলেগড়ের ঘাট থেকে নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগরের দূরত্ব যথাক্রমে ১২ কিমি ও ২৫ কিমি । কিন্তু মন্তেশ্বর থেকে বর্ধমান শহরের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি । সেই কারনে মন্তেশ্বর ব্লকের দুয়ারী,রাউৎগ্রাম, সুটরা,কাইগ্রামসহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা চিকিৎসা জন্য নদীয়া জেলায় যান । দূরত্ব কম হওয়ায় ছেলেমেয়েরা নদীয়া জেলার স্কুল কলেজেগুলিতে পড়াশোনা করে । এদিকে শুটরাঘাটের বেহাল অবস্থা । ফলে চরম ঝুঁকি নিয়েই সকলকে যাতায়ত করতে হয় ।’ তাঁদের অভিযোগ,’খড়ি নদীর উপর পাকা সেতু নির্মানের দাবি জানাতে বহু জায়গায় গিয়েছি । কিন্তু সেই সিপিএমের জমানা থেকে শুনে আসছি এখানে নদীর উপর একটা পাকা সেতু তৈরি করা হবে । কিন্তু সিপিএম গেল তৃণমূল কংগ্রেস এল,শুটরাঘাটের আর পরিবর্তন হল না ।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন,শুটরাঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাস । এক সময় এই ঘাট দিয়েই নদীয়া থেকে খড়ি নদী পেরিয়ে মন্তেশ্বর হয়ে গয়া গিয়েছিলেন মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন্যদেব । এছাড়া এক সময় খড়ি নদী পথে বানিজ্যেও হত । কলকাতা থেকে মুদিখানা ও প্রসাধনী সামগ্রী বোঝাই নৌকাগুলি ভাগীরথী হয়ে খড়ি নদীর শুটরাঘাটে এসে ভিড়ত । তারপর তা গরুর গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত । কিন্তু আজ বানিজ্য বন্ধ হলেও দুই জেলার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই জলপথ দিয়ে যাতায়ত করেন । অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আজও অবহেলার শিকার মন্তেশ্বরের খড়ি নদীর শুটরাঘাট । স্থানীয়দের অভিযোগ, শুটরাঘাটের টেন্ডার ডেকে বর্ধমান জেলা পরিষদ হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করলেও ঘাটের উন্নতির বিষয়ে তাদের নজর নেই । এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা । তাঁদের দাবি,আর প্রতিশ্রুতি নয় । এবার অবিলম্বে শুরু করা হোক পাকা সেতু নির্মানের কাজ ।।