এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,০২ আগস্ট : ওটিপি বা পাসওয়ার্ড কিছুই শেয়ার না করেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গেছে বলে দাবি করলেন নদীয়া জেলার শান্তিপুরের এক মহিলা । মাস খানেক ধরে দফায় দফায় ওই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার শান্তিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দেবযানী দাস ওরফে পূজা দেবী নামে ওই মহিলা ।
জানা গেছে,নদীয়া জেলার শান্তিপুর থানার বাগচি বাগান ২ নম্বর রেলগেটে এলাকায় বাপের বাড়ি দেবযানী দাসের । শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় কয়েক বছর আগে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন তিনি । বাড়িতে রয়েছেন ছেলে, বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা ও বৃদ্ধা মা কাবেরী দাস । দেবযানীদেবী নার্সের কাজ করতেন । কিন্তু মাস আটেক আগে বাইপাসের ধারে একটি দুর্ঘটনায় আহত হলে তারপর থেকে তিনি আর কাজ করতে পারেন না । কাবেরী দেবীও একটা স্কুলে কাজ করতেন । কিন্তু সেই কাজ বেশ কিছুদিন আগে বন্ধ হয়ে যায় ৷ কাবেরী দেবীর স্বামী বার্ধক্য জনিত অসুস্থতার কারণে কাজকর্ম করতে পারেন না৷ পরিবারটি অত্যন্ত হতদরিদ্র ।
দেবযানী দাস বলেন,’শান্তিপুরের ডাকঘর মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাতে আমার একটি অ্যাকাউন্ট আছে । কিন্তু আমি টাকা জমা ও তোলার কাজ করতাম আমাদের পাড়ায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার কিয়স্কে । জানুয়ারি মাসে যখন আমার দুর্ঘটনা হয়েছিল তখন চিকিৎসার প্রয়োজনের টাকা তুলতে গেলে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিচ্ছিল না । তখনই আমার মনে সন্দেহ জেগেছিল । কিন্তু সেই সময় টাকা তুলতে সক্ষম হলে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিইনি । কিন্তু শুক্রবার মাকে সাথে নিয়ে ব্যাঙ্কের শাখায় পাসবুক আপডেট করে জানতে পারি যে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে ।’
জানা গেছে,মহিলা ব্যাঙ্কের শাখা থেকে টাকা তোলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট হাতে পেলে জানতে পারেন যে বিগত প্রায় এক মাস ধরে কোনদিন চারবার কোনদিন দুবার টাকা তোলা হয়েছে ৷ একদিনে পাঁচশো বা এক হাজার করে লাগাতার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে । ২০০ থেকে ১০,০০০ টাকা করে প্রতি খেপে তোলা হয়েছে বলে তিনি জানান । তিনি বলেন,’আমার অ্যাকাউন্টে মোট এক লক্ষ ১৭ হাজার ৮০০ টাকা ছিল । কিন্তু শুক্রবার গিয়ে দেখি মাত্র ১৭,৮০০ টাকা পড়ে রয়েছে । এমনকি শুক্রবারও টাকা তুলেছে প্রতারকরা । এই দেখে আমি ১৭ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নিই । এখন অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩০০ টাকা পড়ে আছে ।’
তিনি আরও বলেছেন,’হঠাৎই কয়েকদিন ধরে আমার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসছিল । কল রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে কেউ বা কার হিন্দিতে কথা বলে ৷ তারা আমার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট-এর সমস্ত তথ্য পর্যন্ত বলে দেয় । এমনকি টাকা তোলার ভিডিও পর্যন্ত আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হতো ।’
প্রসঙ্গত, কিয়স্ক লেনদেনগুলি বায়োমেট্রিকভাবে সুরক্ষিত ৷ কিয়স্ক লেনদেন বলতে বোঝায়, কোনো ইন্টারেক্টিভ টার্মিনাল বা কিয়স্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ করা। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করতে পারেন, যেমন- নগদ জমা ও উত্তোলন, অ্যাকাউন্ট খোলা, অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্ট অর্থ স্থানান্তর এবং অ্যাকাউন্টের বিবরণ পরীক্ষা করা প্রভৃতি । এটি ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকিং পদ্ধতির একটি বিকল্প, যা গ্রাহকদের জন্য আরও সুবিধাজনক এবং সহজে ব্যাংকিং পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে । কিন্তু বায়োমেট্রিক পরীক্ষার মেসেজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ইমেলে পাঠানো হয়৷ পাশাপাশি টাকা তোলা বা জমার জন্য আলাদা মেসেজ পাঠায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক । দেবযানী দাস বলেন, ‘আমি কোন ওটিপি বা পাসওয়ার্ড শেয়ার করিনি । এমনকি নিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পর্যন্ত কাউকে দিইনি । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে প্রতারকরা টাকা তুললে আমার ফোনে মেসেজ আসতো না । কিন্তু আমি যখন টাকা তুললাম তখন আমার ফোনে মেসেজ আসে । কিছুই বুঝতে পারছি না কি করে কি হলো ।’
তিনি আরও বলেন,’টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি কিয়স্ক অপারেটরকে জানালে তিনি আমায় বলেন যে হয়তো ওটিপি দেওয়া হয়েছে তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে । তবে পুলিশের কাছে গিয়ে কোন লাভ নাই বলে ওই কিঅক্স অপারেটর আমাদের পরামর্শ দেয় ।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,আগেও ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় ওই অসহায় পরিবারটি আজ কার্যত পথে বসে গেছে । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ ৷।