প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ জুলাই : বঙ্গ রাজনীতিতে ফের মুখ পুড়লো সিপিএমের। এবার একেবারে উলট পুরাণ।সিপিএমের দখলে থাকা পূর্ব বর্ধমানের রায়নার পলাশন পঞ্চায়েতকে জনগণের পঞ্চায়েত বানাতে দুই সিপিএম সদস্য রবিবার তৃণমূলে যোগদান সেরে ফেলেন।রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা বিদ্রোহী দুই সিপিএম সদস্য বেনিমাধব দত্ত ও নিজাম চৌধুরীর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে তাদের দলে বরণ করে নেন।এতে পঞ্চায়েতে ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় খুশিতে ডগমগ দুই সিপিএম সদস্য।তাঁরা দাবি করেছেন,’সিপিএমের পরিচালনাধীনে পলাশন পঞ্চায়েত ’জনগণের পঞ্চায়েত’ হয়ে উঠতে পারেনি।পঞ্চায়েতটি ’ভাই বোনের’ পঞ্চায়েত হয়ে উঠেছিল।এবার ভাই বোনের কবলমুক্ত হয়ে পলাশন পঞ্চায়েত জনগণের পঞ্চায়েত হয়ে উঠবে ।’
পলাশন পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৮ টি। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের ১০ জন প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। আটটি আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বোর্ড গঠন করে সিপিএম প্রার্থীরা পঞ্চায়েত চালাচ্ছিলেন। কিন্তু দু’বছর কাটতে না কাটতে পঞ্চায়েতের প্রধান মনিকা রায়ের সঙ্গে পঞ্চায়েতের দুই সিপিএম সদস্য বেনিমাধব দত্ত ও নিজাম চৌধুরীর সংঘাত তৈরি হয়।শেষমেষ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন বেনিমাধব ও নিজাম।
কি নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংঘাত ? এর উত্তরে বেনিমাধব দত্ত এদিন জানান,জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি এবং নিজাম চৌধুরী এলাকার জনগণের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাজ করতে পারছিলেন না । দু’বছর ধরে তাঁরা তাঁদের এলাকার জনগণের জন্যে কোন কাজই করতে পারেননি। উল্টে পঞ্চায়েতের প্রধান এবং তাঁর ভাই পঞ্চায়েতে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করে রাখেন। তার কারণে পঞ্চায়েতটি কার্যত ভাই বোনের পঞ্চায়েতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বেনিমাধব দত্ত দাবি করেন,এর পরিবর্তন ঘটিয়ে পলাশন পঞ্চায়েতকে জনগণের পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তুলতেই তিনি এবং নিজাম চৌধুরী রবিবার রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারার হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগদান করেছেন বলে জানান।
জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ যদিও দলত্যাগী দুই সিপিএম সদস্যের কোন দাবি মানতে চাননি।তিনি দাবি করেন,’একদিকে ছিল প্রলোভন আর অন্যদিকে ছিল রাজনৈতিক চাপ । এই দুইয়ের কাছে হার মেনেছেন আমাদের দুই সদস্য।’ তবে যাই হোক পলাসন পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বোর্ড গঠনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে থাকবে বলে বিনোদ ঘোষ দাবি করেছেন।’অপর সিপিএমের নেতা জিকরিয়া চৌধুরী পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন,‘ওই দুই সদস্যের পদ খারিজের জন্য তাঁরা প্রশাসনকে জানাবেন। প্রয়োজনে আদালতে যাবেন বলে জিকরিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন৷
সিপিএম নেতারা যাই দাবি করুন না কেন,২৬শের বিধানসভা নির্বাচনের সিপিএম পরিচালিত পলাশন পঞ্চায়েতে দুই সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বেজায় খুশি রায়নার বিধায়ক শম্পা ধরা । তিনি বলেন,’পূর্ব বর্ধমান জেলার ২১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র পলাশন পঞ্চায়েতে সিপিএম বোর্ড গঠন করেছিল। ২৬শের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই দুই সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পলাশন পঞ্চায়েতে এখন তৃণমূল সংখ্যগরিষ্ঠ।’শম্পা ধাড়া এও বলেন,’পঞ্চায়েত নিয়ে সিপিএম অনেক গালভরা বুলি আওড়ায়। তবে দুই সিপিএম সদস্যের বিদ্রোহ ঘোষণা প্রমাণ করে দিয়েছে,জনগণের পঞ্চায়েত বাংলায় একমাত্র তৃণমূলই গড়তে পেরেছে’।।