এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ জুলাই : আজ বীরভূম জেলার বোলপুরে “ভাষা আন্দোলন” কর্মসূচিতে পদযাত্রা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । মমতাসহ তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি,বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নাকি অত্যাচার চালানো হচ্ছে । আসলে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য এই অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে বিজেপি । কিন্তু মমতা ব্যানার্জি এটাকে “বাংলি বিদ্বেষ”-এর সাথে জুড়ে দিয়ে ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে ফায়দা তুলতে চাইছে বলে অভিযোগ তাদের ।
তবে এই দাবি ও পালটা দাবির মাঝেই মমতার কথিত “ভাষা আন্দোলন”-এর পদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে বোলপুরে । এদিকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও তার দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে “ভাষা সন্ত্রাস” চালানোর অভিযোগ এনে সরব হচ্ছে বিজেপিসহ বিভিন্ন মহল । এক্ষেত্রে বিজেপি হাতিয়ার করছে কলকাতায় কোরান পাঠের প্রতিযোগিতার আসরে মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটা বক্তব্যকে । যেখানে ফিরহাদ বলেছিলেন,”ইনশাআল্লাহ তালা, একদিন অ্যায়সা দিন আয়েগা যব বাঙ্গাল কে আধে পপুলেশন ওভি উর্দু বোলেগে অর উর্দু শের শায়েরি শুনায়েঙ্গে”। ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে বিজেপির তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’বাংলা ভাষা রক্ষা করার জন্য এটাও নাকি রাস্তায় নেমেছিল?’
একই ভিডিও শেয়ার করেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল । তিনি লিখেছেন,’ভিডিওটা একবার নয়, বারবার দেখুন। বুঝতে পারবেন—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের প্রাণ আসলে কোন ‘ভাষা’র জন্য কাঁদছে। একসময় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা নিজেই। আজ তিনি সেই অনুপ্রবেশকারীদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন, দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে। আর তাঁর দলের মেয়র? তিনি ঠিক কোন ভাষার পক্ষে আওয়াজ তুলছেন? বাংলার জন্য? এই দ্বিচারিতা আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত এজেন্ডা তুলে ধরে—ভোটের অঙ্কে ভাষা, সংস্কৃতি আর নিরাপত্তা সবকিছুকেই বলি দেওয়া যায়! ভয়ঙ্কর খেলায় নেমেছে এই দল।’ তবে ফিরহাদের সেই পুরনো বিতর্কিত বক্তব্যের পাশাপাশি লোকসভার অধ্যক্ষেতর দিকে মমতার কাগজ ছুড়ে মারার ভিডিও পাশাপাশি সংযুক্ত করেছেন অগ্নিমিত্রা । পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মমতা ব্যানার্জি তখন এহেন আচরণ করেছিলেন ।
এদিকে খোদ মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধেই “ভাষা সন্ত্রাস” চালানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক প্রসূন মৈত্র । তিনি বাংলা সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণের কিছু লিঙ্ক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘বছর পাঁচেক আগের কথা, বাদশা নামে এক গায়ক(?) মা দুর্গার পুজোর আবহে এক অশ্লীল নাচ আর থেকেও অশ্লীল ভাষার এক গানের(?) ভিডিও প্রকাশ করেন। বাঙালীর আবেগ ও সংস্কৃতি নিয়ে সেই নোংরামির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানালেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে কোন ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য পুলিশ। এই প্রসঙ্গে প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক নিচে রইলো। তাই আজ যখন Mamata Banerjee কে ‘বাঙালী অস্মিতা’ নিয়ে বড় বড় কথা বলতে শুনি তখন খুব মজা লাগে। যাইহোক, এই প্রসঙ্গে Manas Bhattacharyya দা’র একটা অসাধারণ লেখা পড়ুন।
“বাংলা ভাষা র উপর সন্ত্রাস মানে যখন যুগ যুগ ধরে চলে আসা রামধনু কে রংধনু বলে প্রচার করা হয়। শিশুদের শেখানো হয়।শিশুপাঠ্য বইয়ে ছাপা হয়।
বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস মানে জলে পানিতে এক হয়ে যাওয়া। মায়ের সাথে মাদার কে এক করে দেওয়া। যে মা গোবরের টিপ দিয়ে শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে – আমার গোপাল – সে মা। আর যে গ্লাবস এ হাত ঢেকে বাচ্চার গালে টোকা মেরে বলে মাই বেবি।তারপর নার্সের হাতে দিয়ে ডেটিং এ যায় সে মাদার। প্রতি মুহূর্ত তিন তালাকের আতঙ্কে দিন কাটানো আর একটি সন্তান হাঁটতে শেখার আগেই আর একটি জন্মের প্রস্তুতি নেয় যে সে আম্মা।
সংস্কৃতির সন্ত্রাস সেদিন শুরু হয়েছিল যেদিন দুর্গার প্যাণ্ডেল সাজানো হয়েছিল জুতো দিয়ে থিমের নামে। যেদিন সরস্বতী পুজো করতে চেয়ে ছাত্রীটির মাথা ফেটেছিল। যেদিন দলে দলে গায়ক আর নায়ক গুলিয়ে গিয়েছিল। যেদিন জীবিকার আর জীবনের, পুরস্কার আর অর্থের লোভে ট্রেনে হাততালি দেওয়া বৃহন্নলাদের মত রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বুদ্ধিজীবীরা হাততালি দিচ্ছিলেন সেদিন বাঙালি সংস্কৃতির শবযাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই যাত্রা এখনও অব্যাহত।
ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির সেই শবযাত্রা এখনো চলছে বাংলার বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক অভিনেত্রীদের হাত ধরে।তাই বাংলার নৃত্যের মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের পিন্ডি চটকানো হয়।রাধা কৃষ্ণ কে নিয়ে নিরন্তর ছ্যাবলামো চলে এই বাংলাতেই। কানু মানে কৃষ্ণকে হারামজাদা বলে বাংলার গায়ক। কালীকে সাঁওতালী মাগী বলেছে বাংলার লেখক। সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে। তাহলে কোন ভাষা সন্ত্রাস কোন সংস্কৃতি রক্ষার কথা বলছেন মাননীয়া। জবাব মিলবে কি।”
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ দিল্লিতে বাঙালিদের অত্যাচারের বিষয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে অভিযোগ এনে প্রমান স্বরূপ একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন,’এটা আমাদের মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রী তাঁর X হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, আমি তার পোস্ট টার স্ক্রিন রেকর্ডিং দিলাম, যাতে আপনারা পোস্টটাকে পড়তে পারেন, এবং সমগ্র ভিডিও টা দিলাম অডিও শুদ্ধ, যেখানে পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দিল্লির পুলিশ নাকি এদের কোন কিছু রাখেনি (পড়ার “কাপড়াও” নেই ঘরে, অথচ ঘর কেমন আছে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে),দেড় বছরের বাচ্চাটাকেও খুব মেরেছে, হাসি হাসি মুখের স্ত্রীকেও দেখানো হচ্ছে তাকেও নাকি খুব মেরেছে, দিল্লী পুলিশ। স্ত্রীর দুটো গালে পুলিশের মার দেখালো বটে, আমি কিন্তু দেখতে পাইনি আপনারা দেখতে পেলে জানাবেন, আর বাকিটা কাপড়ের ভেতরের অংশে আছে বলে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মমতা দি দেখতে পেয়েছেন।আমরা দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে মূল গল্পটি জানতে চাই।’
সজলের এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে নীলাঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন,’বাঙালিদের প্রতি মোদীর হেনস্থা’ : 1) ডাইরেক্টর IIT খরগপুর – সুমন চক্রবর্তী,2) ডাইরেক্টর IIT দিল্লি – প্রফেসর রঞ্জন ব্যানার্জি, 3) ডাইরেক্টর IIT BHU – প্রফেসর অমিত পাত্র, 4) ডাইরেক্টর IIM উদয়পুর – প্রফেসর অশোক ব্যানার্জি
5) IIM শিলং, বোর্ড অফ গভর্নরস- পওলা সেনগুপ্ত, পি কে ব্যানার্জি, মৌসুমী ভট্টাচার্য, 6) ডাইরেক্টর IIM কোজিকোড – দেবাশিস চ্যাটার্জি, 7) ডাইরেক্টর IISER বেরামপুর- ডঃ অশোক কুমার গাঙ্গুলী, 8) ডাইরেক্টর IISER তিরুপতি- শান্তনু ভট্টাচার্য, 9) ডাইরেক্টর IISER ভোপাল – গোবর্ধন দাস,10) ডাইরেক্টর ISI কোলকাতা – সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়,11) ডাইরেক্টর NIT জামশেদপুর- গৌতম সুত্রধর, 12) ডাইরেক্টর NIT শিলচর- দিলীপ কুমার বৈদ্য,13) ডাইরেক্টর NIT আগরতলা – শরৎ কুমার পাত্র, 14) বিশ্বভারতী VC – প্রবীর ঘোষ,15) IGNOU VC – উমা কাঞ্জিলাল, 16) ডাইরেক্টর AIIMS ভুবনেশ্বর- আশুতোষ বিশ্বাস, 17) ডাইরেক্টর AIIMS গোরখপুর- বিভা দত্ত, 18) ডাইরেক্টর Geological Survey of India – অসিত সাহা, 19) ডাইরেক্টর ZSI – ধৃতি ব্যানার্জি, 20) প্রথম মহিলা CEO, SAIL – সোমা মন্ডল ।’ সব শেষে তিনি আহ্বান জানান, ‘মোদীজির এই অপমানজনক আচরণের পক্ষে ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঙালিদের স্বাভিমান রক্ষার বিরুদ্ধে বাঙালি এক হও।’।