প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ জুলাই : ইন্দো- চায়না অঞ্চলের টাইফুন উইফার পালস ও পূর্ব মধ্যে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণাবর্ত মিলিতভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস । গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ২৫-২৬শে জুলাইয়ের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে । “ঝুম” নামকরণ করা ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা রয়েছে । আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রোদের দেখা মেলেনি । বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতও হয়েছে । কিন্তু দুপুর ১২ টার পর টানা কিছুক্ষণ প্রবল বৃষ্টি হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় । তবে উদ্বেগের বিষয় হল যে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে চলে মুহুর্মুহু বজ্রপাত। আর সেই সময় পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন । আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন ।
নিহতরা হলেন পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির বাসিন্দা সনাতন পাত্র(৬০),আউশগ্রামের রবীন টডু( ২৫),মঙ্গলকোটের চানক গ্রামের বাসিন্দা বুড়ো মার্ডি(৬৬), রায়না ১ নম্বর ব্লকের তেয়ান্ডুল গ্রামের অভিজিৎ সাঁতরা(২৫) এবং খণ্ডঘোষের শেরপুর গ্রামের পরিমল দাস (৩২)। । এছাড়া ভাতার থানার ভূমশোর গ্রামের মাঠে বজ্রপাতে একই পরিবারের তিন সদস্য সহ ৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে । Alert বজ্রপাতের সময় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ৷
পূর্ব বর্ধমানে হতাহতের প্রত্যেকেই কৃষি শ্রমিক এবং তারা মাঠে কাজ করার সময় বাজ পড়ে তারা এই প্রকার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার শিকার হন । জানা গেছে, মাধবডিহির বাসিন্দা সনাতন পাত্র পাশের গ্রামে আলমপুরের মাঠে চাষের কাজ করার সময় বজ্রাঘাতের শিকার হন ৷ মাধবডিহি থানার পুলিশ আলমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মাধবডিহির পাশাপাশি আউশগ্রাম থানার ভেদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রবীন টডু গুসকরা ২ নম্বর পঞ্চায়েতের দেয়াশা গ্রামের মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান। এছাড়া আজ দুপুরে মঙ্গলকোটের চানক গ্রামের বাসিন্দা বুড়ো মার্ডি নামে এক প্রৌঢ় মাঠে কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান। অভিজিৎ সাঁতরা ও পরিমল দাস এদিন নিজের চাষের জমিতে ধানগাছ রোয়ার কাজ করার সময়ে বজ্রপাতে মারা যান।
পাশাপাশি ভাতার থানার ভূমশোরের মাঠে একই সময়ে পরপর বৃহস্পতিবার তিনটি বজ্রপাতে মাঠে কাজ করার সময় আহত হয়েছেন শেখ নাসির এবং তার দুই শেখ ইব্রাহিম ও শেখ হাসিব। এছাড়া পৃথক একটি বজ্রপাতে ভুমশোরের মাঠে কাজ করার সময় আহত হয়েছেন ভাতার থানার বলগোনা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ নামে এক খেতমজুর ।
এদিকে “বজ্রপাতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা” জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপর্যয় ব্যবস্থাপন এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর বেশ কিছু পরামর্শ জারি করেছে । তাতে বলা হয়েছে,বজ্রপাতের সময় ঘরের ভিতর আশ্রয় নিতে হবে। সম্ভব হলে পাকা বাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিন। খোলা জায়গায় অথবা মাঠে কাজ করার সময় আশ্রয়ের জায়গা না থাকলে যতটা সম্ভব নীচু হয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ুন, তবে মাটিতে শুয়ে পড়বেন না। যদি যানবাহনের মধ্যে থাকেন তাহলে জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
খোলা জায়গায় কোনও বড় গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। গাছ থেকে কমপক্ষে ১৩ ফুট দূরে থাকতে হবে। ঝুলে থাকা তার অথবা ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন। জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
আরও বলা হয়েছে,ওভারহেড বৈদ্যুতিক তার এবং খুঁটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। ঘরের ভিতর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলি লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। ছাদ, জানালা এবং বারান্দা থেকে দূরে থাকুন। বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বাড়িতে যথাযথ বজ্র নিরোধকের ব্যবস্থা করুন।
কোনও ব্যক্তি বজ্রাহত হলে কী করবেন?
দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নিন এবং অ্যাম্বুলেন্স-এ খবর দিন। বজ্রাহত হওয়া ব্যক্তিকে স্পর্শ করা নিরাপদ। কেউ বজ্রাহত হলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করান। স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় আহত ব্যক্তিকে সরাসরি রাস্তায়/মাটিতে না শুইয়ে ব্যক্তি ও মাটির মাঝে একটি সুরক্ষার স্তর রাখুন, এতে হাইপো থারমিয়া-র (শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক কমে যাওয়া) সম্ভাবনা কমানো যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে মুখে মুখ দিয়ে বাতাস ভরে শ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। লক্ষ্য করুন কোনও বজ্রাহত ব্যক্তির আঘাত/পুড়ে যাওয়া/শারীরিক ক্ষতি/শ্রবণক্ষমতা হ্রাস/দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা হচ্ছে কিনা, হলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিন।।

