এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ জুলাই : গতকাল কলকাতার ধর্মতলায় ২১শে জুলাই ‘শহিদ দিবস’ পালন করেছে তৃণমূল । কার্যত উৎসবের মেজাজে দিনটি পালন করে তৃণমূল কর্মীরা । ট্যুরিস্ট বাসে ধর্মতলার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় চটুল গানের তালে উদ্যাম নৃত্য থেকে শুরু করে “বাংলা” মদ্যপানের নেশায় চুর হওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । ছিল এলাহি ভোজনের ব্যবস্থা । সেই সাথে সমাবেশে যোগ দেওয়া লোকজনদের টাকা বিলি করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে । মাথাপিছু ২০০ টাকা বিতরণের দাবি করে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে৷ যদিও সেই সমস্ত ভিডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন ।
এদিকে বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একটি দাবি করেছেন । তিনি লিখেছেন,’মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,২১শে জুলাই উপলক্ষ্যে পাগলু ড্যান্স,মোচ্ছব,সস্তার রাজনীতি তো অনেক হলো। ২১শে জুলাই কমিশনের রিপোর্ট ও কমিশনের কাছে পেশ করা তৃণমূল নেতা মণীশ গুপ্তর হলফনামা জনসমক্ষে আনুন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শেষ ২১শে জুলাইতে এটাই হোক শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। ইতি,কৌস্তভ বাগচী ৷’
কেন ২১ শে জুলাই দিনটি ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে পালন করে তৃণমূল ?
আসলে ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই কলকাতা পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন কংগ্রেস কর্মী । সেই সময় অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি। তখন রাজ্যে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি তোলেন মমতা। আর সেই দাবি নিয়েই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেয় যুব কংগ্রেস। সকাল ১০টা থেকে জমায়েত শুরু হয়। মোট পাঁচটি এলাকা দিয়ে মিছিল করে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। রাস্তায় নামেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্রের মতো নেতারা। এদিকে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানকে আটকাতে পথে নামে পুলিশও। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। বাধা পেয়েই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট ও পাথরবৃষ্টি। পালটা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশও।
ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মেয়ো রোড ও রেড রোডের সংযোগস্থল। বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ভ্যানে। অভিযোগ, পুলিশের দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে যান যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। এরপরেই পুলিশ পালটা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’ওরা কাউকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিত না। আমাদের দাবি ছিল, সচিত্র পরিচয়পত্র। সেই সময় আমাদের বিরাট আন্দোলন হয়েছিল। সিপিএমের কোনও ক্ষমতা ছিল না তা থামানোর। তাই গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের জন্য ওরা গুলি চালিয়েছিল। ১৩ জন মারা যান। ১৫০ আহত হন।’
নিহত হন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীরা হলেন : বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেক এবং ইনু মিঞা। কংগ্রেসকর্মীদের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কার নির্দেশে গুলি চালাল পুলিশ, এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। সেসময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে পরবর্তীকালে এ ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্নিনচিট দেয় সিবিআই । হত্যাকাণ্ডের সময় ‘বিতর্কিত’ পুলিশ কর্তা মনীষ গুপ্ত ২০১১ সালে তৃণমূলে যোগ দেন । মন্ত্রীও হন । কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসেও ২১শে জুলাই গনহত্যার মূল মাথাদের প্রকাশ্যে আনতে অক্ষম হয়েছেন ।
যদিও ১৯৯৩ সালের সেই হত্যাকাণ্ডকে ইস্যু করদ প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন এবং ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবসে’র মর্যাদা দেন । প্রদেশ কংগ্রেসও পালন করে দিনটা, তবে অনাড়ম্বর ভাবে । আজও এই দিনে পৃথকভাবে সমাবেশ করে কংগ্রেস । কিন্তু, তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে এ রাজ্যে প্রশ্নাতীতভাবে বৃহত্তর শক্তি হয়ে ওঠায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ।।