এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভোপাল(মধ্যপ্রদেশ),১৯ জুলাই : নাম আব্দুল কালাম(Abdul Kalam) । জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ৷ কিন্তু সে ভারতে ঢুকে বনে যায় বিপরীত লিঙ্গের নেহা(Neha) । তারপর ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে বহালতবিয়তে বসবাস করছিল ভারতে । ওই অনুপ্রবেশকারী রুপান্তরকামীর তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত প্রতারণার ফর্দাফাঁস করল মধ্যপ্রদেশের ভোপাল পুলিশ । এই চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে,অবৈধ অভিবাসন এবং পরিচয় জালিয়াতির একটি সংগঠিত চক্রকে সম্ভাব্যভাবে উন্মোচিত করতে পারে ।
পুলিশের জেরায় ওই গুনধর কবুল করেছে যে তার যখন ১০ বছর বয়স তখন সে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে৷ ভোপালের বুধওয়ারা এলাকায় স্থায়ী হওয়ার আগে দুই দশক মুম্বাইতে কাটিয়েছিল । তারপর সে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় গ্রহণ করে এবং স্থানীয় হিজড়া সম্প্রদায়ের একজন সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে ৷ স্থানীয় এজেন্টদের সহায়তায় জাল নথি ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র – যেমন একটি আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং এমনকি একটি পাসপোর্ট – সংগ্রহ করে ফেলে । কপালে লাল টিপ পরে সে হিন্দু বনে যায় এবং নিজেকে নেহা নামে পরিচয় দিয়ে তার কারবার চালিয়ে যায় ।
পুলিশ তদন্তে জানা গেছে যে আব্দুল কেবল ভুয়া পরিচয় দিয়ে বসবাস করতেন না, জাল ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণও করত । সে বুধওয়ারা এলাকার মধ্যে একাধিকবার বাড়ি পরিবর্তন করেছিল এবং সকলের কাছে কেবল “নেহা” নামে পরিচিত ছিল । আব্দুল কালাম জৈবিকভাবে ট্রান্সজেন্ডার কিনা, নাকি সনাক্তকরণ এড়াতে এই পরিচয় ব্যবহার করেছিল তা নির্ধারণের জন্য এখন তার লিঙ্গ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, কালাম মহারাষ্ট্রে ট্রান্সজেন্ডার কার্যকলাপেও জড়িত ছিল, যা তার ছদ্মবেশ কোনও বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যরা এই প্রতারণায় জড়িত ছিল নাকি অজান্তেই সহায়তা করেছিলেন তা তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ। আব্দুলকে জাল পরিচয়পত্র সংগ্রহে সাহায্য করার অভিযোগে দুই স্থানীয় যুবককে বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন যে এটি হয়তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র, যেখানে অবৈধ অভিবাসন এবং নথি জালিয়াতিতে সহায়তা করার জন্য একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্ক রয়েছে। আব্দুলের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডিং এবং চ্যাটগুলি সূত্রের জন্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিদেশী আইনের অধীনে আব্দুলকে ৩০ দিন ধরে আটক করা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিসিপি শালিনী দীক্ষিত বলেন, “সে গত ৮-১০ বছর ধরে ভোপালে বসবাস করছে। এর আগে, সে মহারাষ্ট্রে ছিল। আমরা একজন তথ্যদাতার মাধ্যমে একটি তথ্য পেয়েছি এবং শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এরই মধ্যে সে বাংলাদেশেও ভ্রমণ করেছে এবং আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি।”
কর্তৃপক্ষ নির্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, কিন্তু এর আগে এই চক্রের পরিধি এবং আব্দুল কালামের অতীত কার্যকলাপ, গতিবিধি এবং ভারত ও বিদেশে সংযোগ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়নি।
এই মামলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে হতবাক করেছে, কেবল পরিচয় জালিয়াতির কারণে নয়, বরং সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তার প্রভাবের কারণেও, প্রশ্ন উঠেছে যে কীভাবে একজন বিদেশী নাগরিক জাল নথি ব্যবহার করে ভারতের একটি প্রধান শহরে বছরের পর বছর ধরে অজ্ঞাতভাবে বসবাস করতে পেরেছিল।
ভোপাল পুলিশ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সাথে, এখন জালিয়াতির সম্পূর্ণ চক্র উদঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করেছে এবং এটি কি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল নাকি এর শিক্কড় আরও গভীর, আরও উদ্বেগজনক নেটওয়ার্কের অংশ ছিল তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের ।।