এইদিন ওয়েবডেস্ক,দুর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),১৮ জুলাই : দুর্গাপুরের সরকারি সভা থেকে আজ শুক্রবার ৫,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আর শিলান্যাসের পরেই মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শিল্পায়ন বিরোধী’ মানসিকতাকে তুলোধুনো করেন তিনি । শাসকদলের তোলাবাজি ও মাফিয়ারাজের কারনে কোনো শিল্পপতি এরাজ্যে আসতে ভয় পাচ্ছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলার উন্নয়নের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।’
নরেন্দ্র মোদী বলেন,’দুর্গাপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরনো গৌরব কে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে । কিন্তু যতদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার রয়েছে ততদিন এখানে শিল্প স্থাপন হবে না এবং পুরনো গৌরবও ফিরে আসবে না । বিগত কয়েক দশকে এখানে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা শিল্পায়ন বিরোধী । কর্মসংস্থান বিরোধী ৷ আপনারা একবার ভেবে দেখুন যেখানে মুর্শিদাবাদের মত ঘটনা ঘটে, ছোটখাটো দাঙ্গা হয়, আর পুলিশ একতরফা পদক্ষেপ নেয়, যেখানে ন্যায় বিচার পাওয়ার কোন আশা নেই, সেখানে কেউ কিভাবে বিনিয়োগ করবে ? রাজ্য সরকার মানুষের জীবন এবং দোকান রক্ষা করতে সক্ষম নয় । এটা নিয়ে বিনিয়োগকারীদেরও ভাবতে হয় ৷ আমি জানি যে পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাবনা দেখে বিশ্বের উদ্যোগপতিরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী । কিন্তু তারা যখন এখানে সিন্ডিকেটরাজ দেখে, কিভাবে ব্যবসাদারদের কাছ থেকে তোলা তোলা হয় দেখে, কিভাবে তৃণমূলের লোকেরা হুমকি দেয়, কাজ বন্ধ করার ও ভাঙচুর করার হুমকি দেয়, তখন সেই উদ্যোগপতিরাও ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে । এই তৃণমূলের গুন্ডা ট্যাক্স পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নকে রুখে দিচ্ছে৷ এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ মাফিয়ারা দখল করে নিয়েছে । ওরাই বাংলার শিল্পায়নকে রুখে দিচ্ছে । এখানকার সরকারের নীতি দলীয় নেতাদের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে । কখন কোন নীতির পরিবর্তন হয়ে যায় তার কোন গ্যারান্টিও নেই । আর এটাই কারণ যে শতাধিক কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পালিয়েছে । এই কারণে বাংলার তরুণ প্রজন্ম এগুতে পারছেনা৷ এই কারণে বাংলার বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে৷ তাই স্লোগান উঠছে তৃণমূল হটাও বাংলা বাঁচাও৷’
তিনি বলেন,’বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় স্বপ্ন দেখেছে । বিজেপি সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ বানাতে চায় । বিজেপি বিকশিত পশ্চিমবঙ্গের নির্মাণ করতে চায় । পশ্চিমবঙ্গের এই জমি প্রেরণায় ভরা । এ জমি দেশের প্রধান উদ্যোগ মন্ত্রী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্মভূমি । উনি ভারতের উদ্যোগীক বিকাশের স্থাপনা করেছিলেন । দেশকে প্রথম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি দিয়েছিলেন । এটা বি সি রায়ের ভিজনারী নেতৃত্বের ভূমি । যিনি শিল্পায়নের জন্য দুর্গাপুরকে বড় স্বপ্ন এবং সংকল্প নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন । পশ্চিমবঙ্গ দেশকে দ্বারকনাথ ঠাকুরের মত একজন সংস্কারক দিয়েছে । যিনি পরাধীন ভারতে ব্যাংকিং সংস্কারের উপর কাজ করেছিলেন । উদ্যোগ ও উদ্যোমে কিভাবে সমাজের ভালো হয় সেটা তিনি করে দেখেয়েছিলেন । এই ভূমিতে স্যর বীরেন মুখার্জি জন্মেছেন । যার জীবন এবং ভিশনে ভারত উদ্যোগের প্রেরণা পেয়েছিল । এই সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বরাই পশ্চিমবঙ্গের পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে । আর এই কারণে একসময় এই পশ্চিমবঙ্গ ভারতের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,’এখানে শিল্প হয়েছে, বাণিজ্য হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে কর্মসংস্থানের জন্য আসতো৷ কিন্তু আজ পরিস্থিতিতে একবারে উল্টো হয়ে গেছে । আজ পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্ম পালাতে বাধ্য হচ্ছে। ছোট ছোট কাজের জন্য তাদের ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে । দুর্গাপুর, বর্ধমান, আসানসোল এক সময় ভারতকে শিল্পায়নের গতি দিত । কিন্তু আজ এখানে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যেগুলো আছে সেখানেও তালা পড়ছে ৷’
তিনি বলেন,’বাংলাকে এই শোচনীয় অবস্থা থেকে আমাদের বাইরে বের করে আনতে হবে । আর আজকে যে প্রকল্প গুলি শুরু হল সেটাই এর প্রতীক ।
বাংলা পরিবর্তন চায় । বাংলা উন্নয়ন চায় । বাংলার মানুষ জানে যে ২১ শতাব্দীর এই সময় প্রযুক্তির সময় । বাংলার শিল্পায়নের জন্য নতুন প্রযুক্তি দরকার । আজকে যে গ্যাস ভিত্তিক প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাতে এরাজ্য উপকৃত হবে । দুর্গাপুর কলকাতা গ্যাস পাইপলাইন এখানকার শিল্পায়নে নতুন দিশা দেখাবে । এই গ্যাস পাইপলাইনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে৷ যাতে এখানে সিএনজি গাড়ি চালু হয় । আপনাদের খরচ বাঁচবে । নতুন কারখানা শক্তি পাবে । আর সব থেকে বড় কথা হলো যে বাংলার তরুণ প্রজন্ম কর্মসংস্থান পাবে । স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ পরিবারের গ্যাস কানেকশন পাওয়া একটা স্বপ্ন ছিল । বিগত বছরগুলিতে সেই সমস্ত পরিবারগুলোতে গ্যাস কানেকশন গেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো বোনেদের রান্নাঘরে পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছে দেওয়া৷ যে প্রকল্পগুলির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো সেগুলি আপনাদের জীবনকে আরও সহজ করে দেবে । শিল্পায়নেও গতি আসবে ।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,’বাংলার বেহাল স্থিতিকে বদলানো সম্ভব৷ বিজেপি সরকার আসার অব্যবহিত পরেই পশ্চিমবঙ্গ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হতে পারে । এটা আমি বিশ্বাস করি । কারন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিভাশালী তরুণ প্রজন্মের ওপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।
এখানে নদী আছে৷ এখানে সমুদ্র আছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকার শত বছর পূর্বে বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। এখানে সমুদ্র বন্দরের বড় নেটওয়ার্ক আছে৷ এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে । মানে মেক ইন ইন্ডিয়াকে গতি দিতে, মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং-এ গতি আনতে পশ্চিমবঙ্গের কাছে সমস্ত শক্তি মজুদ আছে। কেবল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলার উন্নয়নের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ যেদিন তৃণমূল সরকারের এই প্রাচীর বিধ্বস্ত হবে সেই দিন থেকে বাংলা উন্নয়নের নতুন গতি পাবে । তৃণমূল সরকার গেলেই আসল পরিবর্তন আসবে । বিকশিত ভারতের সংকল্পে বড় ভূমিকা হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের । এই কারণে বিজেপি আপনাদের কাছে আশীর্বাদ চাইছে।’
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’আসামের দীর্ঘ সময় পর বিজেপি সুযোগ পেয়েছে। আজ আসাম দ্রুত গতিতে উন্নয়ন করছে । পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরার কি অবস্থা ছিল সেটাও সকলের জানা। আজ বিজেপি সরকার ত্রিপুরাকে উন্নয়নের নতুন গতি দিচ্ছে ৷ উড়িষ্যাতেও বিজেপি সরকার এসে গেছে । আপনারা দেখবেন উড়িষ্যা খুব শীঘ্রই দ্রুত গতিতে উন্নয়ন করা রাজ্য হিসাবে দেশের মধ্যে স্থান করে নেবে । বিজেপির তরফ থেকে আমি আবেদন করবো যে একবার বিজেপিকে সুযোগ দিন আপনারা । এখানে এমন একটা সরকারকে নিয়ে আসুন যারা সৎ, পরিশ্রমী এবং কঠোর হবে । এটা মোদীর গ্যারান্টি । বিকশিত বাংলা বিজেপির সংকল্প ।’
আজ প্রধানমন্ত্রী যে ৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন তার মধ্যে রয়েছে উরজা গঙ্গা প্রকল্পের আওতায় দুর্গাপুর-কলকাতা ১৩২ কিলোমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জন্য ১৯৫০ কোটি ব্যয়ে ভারত পেট্রোলিয়ামের সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প। এছাড়াও ১৫৪৭ কোটি ব্যয়ে রঘুনাথপুর-মেজিয়া ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রন প্রকল্প এবং রেল ও সড়কপথের বেশ কিছু প্রকল্পের উন্নয়ন ও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী।।