এইদিন ওয়েবডেস্ক,গুয়াহাটি,১৮ জুলাই : বৃহস্পতিবার আসামের গোয়ালপাড়া জেলার পাইকানে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযানের সময় বন দপ্তরের কর্মী ও পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে দেয় ‘ভূমি জিহাদি’ মিঁয়া মুসলিমরা । বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের সাধারণত মিঁয়া মুসলিম বলা হয় । কংগ্রেসের শাসনকালে তারা ভারতে অনুপ্রবেশ করে কয়েক দশক ধরে বনাঞ্চল দখল করে বসবাস করছে । সেই হামলায় বন দপ্তরের কর্মী ও পুলিশ মিলে প্রায় দুই ডজন আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন দাঙ্গাকারীর মৃত্যু এবং অন্য একজন আহত হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আসাম সরকারের এই জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান অনেক দিন ধরেই চলছে । তবে কোনো ঝামেলা হয়নি । কিন্তু বুধবার কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা রাহুল গান্ধী ও সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আসামে উসকানিমূলক ভাষণ দেওয়ার পরে মিঁয়া মুসলিমরা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা । তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গের বিরুদ্ধে আসাম পুলিশ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে হেমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন,’রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে গতকালের জনসভায় প্রকাশ্যে জবরদখলকারী ভূমি জিহাদীদের উৎসাহিত করেছিলেন । যারা সরকারি জায়গা জবরদখল করে বসবাস করছে । তারা এটা উপলব্ধি করেনি যে সরকারি বনাঞ্চলের জমিতে জনবসতি গড়া যায় না । কিন্তু তারা পরিষ্কারভাবে বলেছে যে একই জায়গায় তোমাদের পুনর্বাসন করা হবে এবং তোমাদের ঘর দেওয়া হবে । এই প্রকার মন্তব্যের কারণে মানুষ উৎসাহিত হয়েছিল । যে কারণে আজ সকালে জবরদখলকারীরা পুলিশ এবং বনকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছিল এবং তারা লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে পুলিশ এবং বন কর্মীদের মারধর করেছিল । পুলিশ প্রতিরোধ করেছে । ২১ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন । বিকল্প উপায় না থাকায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে, তাতে একজন জবরদখলকারীর মৃত্যু হয়েছে এবং দু’জন জখম হয়েছে,যারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন । মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,’পুলিশ একটা মামলা দায়ের করেছে । এই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কারা দায়ী সেটা দেখা হচ্ছে । পুলিশ রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়েগের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে । যদি সেই বক্তব্যে আমরা দেখি যে উস্কানি দেওয়া হয়েছিল তাহলে পুলিশ আইনানুর ব্যবস্থা নেবে । রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷’
এদিকে এক বিবৃতিতে, বিজেপি আসাম প্রদেশ দাবি করেছে: “রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আসাম সফরের পর, পাইকান উচ্ছেদের সময় পুলিশের উপর আজকের সহিংস আক্রমণ গভীরভাবে বিরক্তিকর। এটি স্পষ্টতই মৌলবাদী শক্তিগুলির একটি পূর্বপরিকল্পিত আগ্রাসন, এবং আমরা দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করি যে চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি পর্দার আড়ালে এটি ঘটিয়েছে।” বিজেপি আসাম প্রদেশও একটি ছোট ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে জনতা “গরি ভাঙ…গরি ভাঙ…” বলে চিৎকার করছে। পরে ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশ অফিসাররা একজন আহত ব্যক্তিকে বহন করছেন ।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ভুবন পেগু, বিজেপির উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করেন এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুব আইকন রাহুল গান্ধী এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সাম্প্রতিক সফর পুলিশকে আক্রমণ করার জন্য উপাদানগুলিকে উৎসাহিত করেছে। পাইকানে আজকের সহিংসতা তারই ফল। এগুলো মৌলবাদী শক্তির সরাসরি আক্রমণ, এবং আসাম পুলিশকে দোষারোপ করা লজ্জাজনক। আমরা দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। কংগ্রেস পার্টি লজ্জিত হও ।”
বিজেপি-নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার রাজ্যের বেশ কয়েকটি অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে, যেগুলি সরকারি বা সংরক্ষিত জমিতে জবরদখল করা হয়েছে । বৃহস্পতিবার, অভিযানের সময় জবরদখল কারী মিঁয়া মুসলিমরা পুলিশের উপর আক্রমণ করে । সরকারী সূত্র নিশ্চিত করেছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়, এতে একজন নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হয়। কর্তৃপক্ষ জড়িতদের পরিচয় যাচাই করছে এবং বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। যদিও
কংগ্রেস দল এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। এদিকে, আসামে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ বিরোধী নেতারা এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযানের সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ।।