এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ জুলাই : তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছর ২১ শে জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের কাছে ‘শহিদ স্মরণে’ সভা করে । এবারের সভার প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে কলকাতস পুলিশ প্রশাসন ও শাসকদল । প্রতিবছর ওই দিন গোটা কলকাতা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় । ফলে চুড়ান্ত নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষ ও নিত্য যাত্রীদের ৷ মানুষের এই অসুবিধার কথা মাথায় রেখে শাসকদলের উদ্দেশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশ্ন করেছে, “মানুষ কতদিন সহ্য করবে ?”
আসলে একুশে জুলাই তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জেরে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিল বামপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন । মামলাকারীর দাবি ছিল, ব্যস্ত সময়ে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয় ওই সভার জন্য। তারা ধর্মতলার পরিবর্তে অন্যত্র সভা করার জন্য আর্জি জানান । আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে ছিল সেই মামলার শুনানি । তবে বেঞ্চ জায়গা বদল করার কথা না বললেও একুশে জুলাই সভা নিয়ে স্পষ্টতই বিরক্তি প্রকাশ করে । বিচারপতি বলেন,’আবেগ সব রাজনৈতিক দলের আছে। কতদিন ধরে সহ্য করতে হবে মানুষকে ? বলেছে যে, রাস্তার এক তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দলেরা দখল করে নিয়েছে।’ বিচারপতি আরও বলেন,’সকাল ১১টার পর কলকাতায় এসব করতে বলুন।’
শুনানিতে রাজ্যের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল (AG) কিশোর দত্ত ও আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য । মামলাকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাভেদ শামীম । বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যর কথায়, এই মামলাটি রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা । অন্যদিকে আইনজীবী শামীম বলেছেন, ‘আমি কোনও রাজনৈতিক সভার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু প্রশ্ন, কেন এক দলকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদের দেওয়া হচ্ছে না ? ১৬ জুলাইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে তো বলা হয়েছে, মধ্য কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২০ ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকবে!’
তবে সভার আর মাত্র ৪ দিন বাকি । তাই স্থান বদলের নির্দেশ দেয়নি আদালত । আগামী বছর থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের পরিবর্তে শহিদ মিনার বা বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এই সভা করা যায় কি না, তা রাজ্যকে ভাবতে বলেছেন বিচারপতি । বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেছেন,”আমি এই বছর সভায় হস্তক্ষেপ করব না। তবে কিছু বিধিনিষেধ তো দিতেই হবে ।’ বিচারপতি নির্দেশ দেন যে সকাল ১১টার আগে শহরে সভার জন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না । কিন্তু যারা ইতিমধ্যেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁরাই সভায় যোগ দিতে পারবেন ৷ তবে রাস্তার এক-তৃতীয়াংশ সর্বদা খালি রাখতে হবে নির্দেশ দেয় আদালত । আদালতের পর্যবেক্ষণ,এই প্রকার বড় সভার জন্য ভবিষ্যতে স্টেডিয়ামের মতো পরিকাঠামো ভাড়া নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করা উচিত । বিচারপতির কড়া বার্তা হল, এক লক্ষ মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে এমন কোনও স্টেডিয়াম কেন ব্যবহার করা হবে না ? রাস্তা তো সকলের।’ বিচারপতি রাজ্য সরকারকেও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য এমন কর্মসূচির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ না হয়।
এদিকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েও একাধিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ। শুক্রবার সেই সব বিজ্ঞপ্তি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।ওইদিন রাজ্য এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সওয়াল করবে।।

