শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৩ জুলাই : বামফ্রন্টের শাসনকালে,প্রায় তিন দশক আগে, রাস্তায় মোড়াম পড়েছিল । তারপর রাজ্যে পালাবদল হয়েছে । কিন্তু পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের বাঘাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাঘাসন গ্রামের ঘোষ পাড়ার রাস্তার আর ভাগ্য বদল হয়নি । ঘোষপাড়া যাতায়তের মূল রাস্তাটিকে এক ঝলক দেখলে মনে হবে যে এটা একটা চষা জমি । এমনিতেই মেঠো পথ, তার ওপর লাগাতার বর্ষার বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও এক হাঁটু জল, কোথাও জমে আছে হাঁটুর নিচে অব্দি কাদা । ফলে অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা, কচিকাঁচা স্কুল পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াত থেকে শুরু করে বাজারহাট, ব্যাংক বা সরকারি অফিস যেতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীদের । আজ রবিবার সাংবাদিকরা বাঘাসন গ্রামের ঘোষ পাড়ায় গেলে ক্যামেরার সামনে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা । তাদের অভিযোগ যে বিগত ৩০ বছর ধরে পঞ্চায়েত এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তারা বহু তদ্বির করেছেন । কিন্তু তাদের রাস্তার হাল আর ফেরেনি । উপরন্তু তাদের অভিযোগ যে কোন এক রহস্যজনক কারণে ঘোষপাড়াকে বাদ রেখে বাকি জায়গায় ঢালাই রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে বাঘাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সব্যসাচী দাঁ এক দেড় বছরের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ঘোষ পাড়াকে বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “বিরোধীরা অনেক কিছুই বলবে, ওদের কোন দাম নেই”।
জানা গেছে,মূল সড়ক পথের কিছুটা দূরেই রয়েছে বাঘাসন গ্রামের ঘোষ পাড়া । ১৫-১৬ টি পরিবারের বসবাস । মূল রাস্তার কিছুটা ঢালাইয়েত কাজ করা হলেও ট্রান্সফর্মার মোড়ের কাছে ঘোষপাড়ার বাসিন্দাদের বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি । এমনকি ওই ঢালাই রাস্তায় পরবর্তীকালে খানাখন্দের সৃষ্টি হলে মেরামতি পর্যন্ত করে দেওয়া হয় । কিন্তু ঘোষ পাড়ার ওই পরিবার গুলির যাতায়াতের রাস্তাটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । আজ রবিবার সকালে ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল যাতায়াতের রাস্তার একধারে গভীর গর্ত হয়ে গেছে এবং অন্য ধারে কাদা । রাস্তায় সৃষ্টি হওয়া গর্তে লাগাতার বর্ষার বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় এক হাঁটু জল জমে গেছে । সেই জলে হাঁস চড়তে পর্যন্ত দেখা যায় । গ্রামবাসী মাধব ঘোষ জানান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি রয়েছে কিছুটা দূরে । ঘোড়পাড়ার কচিকাঁচাদের ওই বেহাল রাস্তা পেরিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়াশোনা করতে যেতে হয় । কিন্তু ওই বিপজ্জনক রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়শই তারা ছোটোখাটো দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে ।
আজ বেশ কয়েকজন স্থানীয় মহিলা হাঁটুর নিচে অব্দি কাপড় তুলে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বাইট দেন । প্রত্যেককেই যথেষ্ট ক্ষিপ্ত দেখা গিয়েছিল । তাদের মধ্যে অবন্তী সাঁতরা নামে এক মহিলা বলেন, ‘ঘরে পোয়াতি । গাড়ি তো ঢুকবে না । তাহলে আমার পোয়াতি পুত্রবধূকে নিয়ে কোথায় যাবো ? তারপরে ছোটছোট ছেলেমেয়েরা কোথাও যেতে পারছে না । টিউশন, স্কুলে যেতে গিয়ে কাদায় আছাড় খাচ্ছে । কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে বিনা চিকিৎসাতে বাড়িতেই মারা যাবে । গাড়ি তো দূরের কথা একটা টোটো পর্যন্ত ঢুকতে চায় না ।’ তিনি আরও বলেন,’বিগত ৩০ বছর ধরে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে তদ্বির করা হয়েছে । কিন্তু আজও আমাদের রাস্তা হলো না ।’
ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সৌরভ পাল নামে এক যুবক বলেন,’রাস্তার এমন অবস্থা হয়েছে যে পড়ে গেলে মুখ-হাত-পা ফেটে যাবে । গ্রামের শেষ প্রান্তে ঘোষপাড়া হওয়ায় গ্রামের সমস্ত জল আমাদের রাস্তার উপর দিয়ে কাটে । যার ফলে আমাদের পাড়ার রাস্তাটা কার্যত পুকুর হয়ে গেছে । হাঁস চড়ছে । রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা যে মাছ চাষও পর্যন্ত করা যেতে পারে ।’ তার অভিযোগ যে মূল রাস্তার কাছে যেখান ঢালাই রাস্তা হয়েছে, তার ওপরে ফের ঢালাই করা হচ্ছে । তিনি বলেন,একদিন আমি বলতে গেলাম পঞ্চায়েতে তো আমায় বলল যে এটা অর্ডার হয়ে গেছে । তোমাদের রাস্তা এখন করা যাবে না । আজ দিদির আমল কুড়ি বছর হতে চলল প্রায় । কিন্তু আমাদের এই রাস্তাটা দেখার মত কেউ নেই । পাড়ায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মাথায় করে, ঘাড়ে করে বা কোলে করে প্রথমে মূল রাস্তায় নিয়ে যেতে হয়। তারপরে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসা হয় ।’
ঘোষ পাড়ার বেহাল রাস্তা ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঘাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সব্যসাচী দাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে জায়গায় বেহালা রাস্তা দেখতে গিয়েছিলেন তার কিছুটা বেহাল অবস্থা ছিল । আমাদের আগে যে টেন্ডার হয়েছিল তাতে আমরা রাস্তা কিছুটা করেছি । এবার ঘটনা হচ্ছে পঞ্চায়েতের একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, কারণ আমাদের রাস্তা গুলি মাপজোপ করে অ্যাকশন প্ল্যানে তুলতে হয় । তারপর রাস্তার সাংশেন হয়, টেন্ডার হয়, তারপর সেখানে কাজ হয় । ইতিমধ্যে আমরা অ্যাকশন প্ল্যানে ঘোষ পাড়ার রাস্তাটা তুলে দিয়েছি এবং টেন্ডার প্রসেসে চলে গেছে । আশা করছি ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে রাস্তাটা হয়ে যাবে ।’
কিন্তু সম্পূর্ণ রাস্তায় ঢালাই না করে ঘোষপাড়াকে বাদ দিয়ে বাকি অংশ কেন ঢালাই করা হলো ?
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ফিনান্সে রিপিয়ারিংয়ে স্কিম ধরা থাকে । ধরুন আগে ৬ ইঞ্চি রাস্তা ঢালাই ছিল, এখন রাস্তাটা ক্ষয়ে গিয়ে সেখানে জল জমছে । সেখানে আমরা রিপেয়ারিংয়ের কাজ করেছি । এখন মানুষরা অনেক কিছুই বলবে । বিরোধীরা অনেক কিছুই বলবে । ওদের কোন দাম নেই । সারা বছর আমরাই মানুষের পাশে থাকি মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায়।’।

