এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৯ জুলাই : মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদ্য নির্বাচিত দলীয় সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ যথারীতি নিজের প্রশংসা করে বলেছিলেন,’মার্কেটের যার দাম আছে তাকে নিয়ে জল্পনা হয়, যাঁদের দাম নেই রাস্তায় পড়ে আছে।’ যদিও কার বা কাদের দাম নেই এবং কোথায় নেই তা নিয়ে তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি । কিন্তু মাসগুলোয় দেখা গেছে যে দিলীপের বারবার নিশানায় এসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তবে যিনি রাজ্যের শাসকদলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন সেই শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশ্যে দিলীপ ঘোষ যে একথা বলেননি সেটা স্পষ্ট । তার তার এহেন বক্তব্যকে নিছক কথার কথা বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল ।
কিন্তু শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দিলীপের দিল্লিতে ডাক পড়ায় বঙ্গ বিজেপিতে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে । তাকে রাজ্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে কিনা এনিয়ে জোর চর্চা চলছে । আর এই চর্চা যদি বাস্তব প্রমানিত হয় তাহলে শুভেন্দু যে সেটা ভালোভাবে নেবেন না সেটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট । ফলে ২৬-শের বিধানসভার ভোটের আগে রাজ্য বিজেপির আভ্যন্তরীণ জটিলতা কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয় ।
বিগত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর থেকে টিকিট না পেয়ে চরম ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ । শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে কলকাটি নেড়ে তাকে সরিয়ে অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করিয়েছিল বলে ইঙ্গিতে অভিযোগ তুলেছিলেন দিলীপ । তখন থেকেই শুভেন্দু-দিলীপের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারন করে । বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের পর শুভেন্দুকে বারবার নিশানা করেন দিলীপ । তুলেছিলেন “নব্য-পুরনো” তত্ত্ব । দলের পুরনোদের বাদ দিয়ে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাকে সরবও হতে দেখা যায় । কিন্তু দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করে নিজেই দলে কোনঠাসা হয়ে পড়েন দিলীপ ঘোষ । তারপর থেকেই ২১-শে জুলাই মঞ্চে তার তৃণমূলে যোগদান নিয়ে শুরু হয় জল্পনা । যদিও নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করে সেই জল্পনায় জল ঢেলে দেন দিলীপ নিজেই ।
তবে দিলীপের সাক্ষাতের আগেই নব্য-পুরনো দ্বন্দ্ব নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য । একটা দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন,’নতুন বা পুরনো বলে কিছু নেই । যার হাতেই বিজেপির পতাকা তিনিই বিজেপির কর্মী৷ যে দলে বেশি সক্রিয় তিনি বিজেপির নেতা ।’ অর্থাৎ শমীক তার ভাষণে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে দলের মধ্যে নব্য-পুরনো দ্বন্দ্ব আর বরদাস্ত করা হবে না৷ পাশাপাশি তিনি তৃণমূল ও সিপিএমের বিক্ষুব্ধদের দলে আনার জন্য আহ্বানও জানান ।
রাজ্যের অরাজনৈতিক বহু মানুষ মনে করেন যে ক্যারিশমাটিক ইমেজের ক্ষেত্রে এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির পরেই স্থান শুভেন্দু অধিকারীর । শুভেন্দু যখন তৃণমূলে ছিলেন তখন এটা উপলব্ধি করেছিলেন মমতা । যে কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে কিছুটা সাইড করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি । শুভেন্দু বিষয়টি বুঝতে পেরে দলবদল করেন । আর দলবদলের অব্যবহিত পরেই নিজেকে বিজেপির মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন তিনি ।
বিজেপির এই দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব বিগত লোকসভা নির্বাচন থেকে নয়, বরঞ্চ তার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয় । শুভেন্দু সঙ্গে দিলীপের দ্বন্দ্বের নেপথ্যে যতো না মেদিনীপুরে আসন না পাওয়ার কারণে, তার থেকে অনেক বেশি কারণ হচ্ছে “ইগো”। শুভেন্দুর জনমোহিনী ইমেজে অস্বিত্ব সঙ্কটের আশঙ্কায় দিলীপ “নব্য-পুরনো” ইস্যুকে সামনে এনে নিজের প্রাসঙ্গিকতা খোঁজার চেষ্টা করেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল । তবে দিলীপ ঘোষ নিজেও জানতেন যে তিনি যদি তৃণমূলে যোগ দেন তাহলে সেটা হবে তার পলিটিকাল হারিকিরি । তার জ্বলন্ত উদাহরণ হল জয়প্রকাশ মজুমদার । কারণ বিজেপির ছেড়ে তৃণমূলের যোগ দেওয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন জয়প্রকাশ ।
অন্যদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশঙ্কা যে ২০২৬ সালের বিধানসভার আগে যদি দিলীপ বিক্ষুব্ধ থাকে তাহলে অন্তর্ঘাতের একটা আশঙ্কা থেকেই যায় । মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে অগ্নিমিত্রা পালের পরাজয় এই অন্তর্ঘাতের কারণে হয়েছিল বলে মনে করে বিজেপির একাংশ । ফলে পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের পরিবর্তন-এর স্বপ্ন দেখা বিজেপির কাছে নব্য-পুরনো দ্বন্দ্ব মেটানো অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে উঠেছিল । এমতাবস্থায়, শুভেন্দুকে যযথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে দিলীপকে ঠিক কি কাজে ব্যবহার করে বিজেপির হাইকম্যান্ড সেদিকেই নজর সকলের ।।

