ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটে গেছে । যে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা এতদিন ধর্মীয় মেরুকরণ ও হিন্দুদের জাতপাতের বিভাজন ঘটিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণ করেছে তারা আজ “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই” শ্লোগানে ভীত । বস্তুতপক্ষে যে কোনও কর্মের প্রতিক্রিয়া থাকবেই । আর বর্তমান ভারতে সেটাই ঘটছে । বাংলার মমতা ব্যানার্জি, বিহারের লালু প্রসাদ যাদব,কেরালার বামপন্থী, তামিলনাড়ুর এম.কে স্টালিন এবং সর্বোপরি কংগ্রেসের সোনিয়া-রাহুল জুটি আজ ভীত সন্ত্রস্ত । যে কারণে তারা চাইছে হিন্দুদের জাত ভিত্তিক আদমশুমারী করে ফের বিভাজিত করতে ।
বাবা ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী বাগেশ্বর কিছু কথা সঠিকভাবে বলেছেন। বিহারের সনাতন সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন যে তারা যদি গাজওয়া-এ-হিন্দ চায়, তাহলে আমরাও ভগবা-এ- হিন্দ চাই। বাবা বলেছিলেন যে তারা যদি ত্রিরঙ্গার উপর চাঁদ চায়, তাহলে আমরাও চাঁদের উপর ত্রিরঙ্গার চাই। তিনি বলেছিলেন যে আমাদের লড়াই কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের সাথে নয়। আমাদের সেই হিন্দুদের সাথে লড়াই করতে হবে যারা তাদের নিজ নিজ দলের মাধ্যমে হিন্দুদের ভাঙতে এবং বিভক্ত করতে চায়। আসুন আমরা এটি সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করি :
বাবা বলেছেন যে তিনি হিন্দুদের প্রত্যেকটি দলেই আছেন । জগদ্গুরু রামানন্দচার্য স্বামী রামভদ্রাচার্য বলেছেন যে ভারতে সংবিধান টিকে থাকবে, শরিয়া নয়। যারা শরিয়া চান তাদের অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত। তিনি বলেছিলেন যে ভারত একটি হিন্দু জাতি, এটিকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র করার কোনও প্রয়োজন নেই। বিহার কখনও হিন্দবিরোধীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। স্বামী রামদেব বলেছিলেন যে ভারত এমন একটি হিন্দু জাতিতে পরিণত হবে যেখানে সবাই সমান হবে, কেউ উঁচু-নীচু নয়।
এখন দেখুন…রাবড়ি যখন তাজিয়াকে প্রনাম করলেন, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে তিনি মুসলিম ভোট চান। একই দিনে বাবা বাগেশ্বর ভগবা-ই-হিন্দ স্লোগান তুলে সনাতনকে মেরুকরণ করলেন। ইতিমধ্যে রাবড়ির স্বামী লালু প্রসাদ যাদবের বক্তব্যের একটা ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে । জনৈক সাংবাদিক কুম্ভমেলায় ভিড় নিয়ে লালু প্রসাদ যাদবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুম্ভের কি মানে আছে ? ফালতু কুম্ভ কুম্ভ ।’ পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটা দাবি করা হচ্ছে যে বিহারের মোতিহারীতে মহরমের তাজিয়া মিছিলের সময় অজয় যাদব নামে যে হিন্দু যুবককে তরবারি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় সেই যুবক আরজেডি কর্মী ছিলেন । যদিও এই বিষয়ে লালু প্রসাদ, রাবড়িদেবী, তাদের ছেলে তেজস্বী যাদব, কথিত ধর্মনিরপেক্ষ পাপ্পু যাদব কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি ।
এদিকে বাবা বাগেশ্বরের সমস্ত দলের হিন্দুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা একটি বড় ব্যাপার। তবে বিহারের নির্বাচনী মাঠে সনাতন সম্মেলনে কে লাভবান হয়েছে এবং কে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। এটা অবশ্যই সত্য যে যথারীতি কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা বিরক্ত । একদিকে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কারণে ভুয়া ভোটার এবং বাংলাদেশি- রোহিঙ্গাদের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে, অন্যদিকে অন্যান্য রাজ্য থেকে আনা ভোটারদেরও বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিহারের সনাতন সম্মেলন অবশ্যই ভোটারদের উপর প্রভাব ফেলবে। এটিই কথিত সেকুলারদের জ্বালা, ক্ষোভ এবং হতাশা বৃদ্ধির কারণ । নিজেদের স্বার্থের অনুকুলে না গেলে নির্বাচন কমিশন বা আদালতকে দোষারোপ না করে, সরকারকে দোষারোপ করা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন……অনেকে বলে যে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের পরিবেশ খারাপ হয়েছে। আসলে, কিছুই খারাপ হয়নি, যারা এতদিন তাদের তিক্ত কথা গিলে চুপ করে থাকতেন, এখন তারা কথা বলতে শুরু করেছেন। বিগত ১১ বছরে মানুষ শুধু কথাই বলছে না, বরং রাস্তায়, বিবৃতিতে, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছেন। ৬৫ বছরের ছদ্ম-রাজনৈতিক রাজনীতি যাদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল তারা এখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে, তারা প্রকাশ্যে উত্তর দেয়, তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এই কারণেই যারা কয়েক দশক ধরে ভয় দেখিয়ে আসছিল, তারা এখন বলছে যে তারা ভয় পেয়েছে, অথবা ভারত আর বসবাসের যোগ্য নয়। দেখুন! কর্ম সবসময় কর্ম থাকে না ? আজ যারা মেরুকরণকে ভয় পায়, তারাই মেরুকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তারা ৬৫ বছর ধরে মুসলিম + দলিত ভোটের উপর রাজনীতি করেছে, এখন তারা হিন্দুদের উপরও করছে। যখন কর্ম প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়, তখন মানুষ ভয় পায়। এটাই সনাতন সম্মেলনের উপসংহার এবং এটাই সত্য।।

