একসময় যা ছিল লক্ষ লক্ষ হিন্দুর পবিত্র তীর্থক্ষেত্র, আজ তা পরিণত হয়েছে এক পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে। পাকিস্তানের মুলতানে অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রহ্লাদ পুরী মন্দির, যা ভগবান নৃসিংহের আবির্ভাবভূমি হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে চরম অবহেলা এবং অবমাননার শিকার। এই পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে হিন্দুদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রহ্লাদ পুরী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিন্দুদের গৌরবময় ইতিহাস । হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এই স্থানেই ভগবান বিষ্ণু তাঁর নৃসিংহ অবতারে আবির্ভূত হয়ে অত্যাচারী হিরণ্যকশিপুকে বধ করে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন। এর ফলে স্থানটি হিন্দুদের জন্য এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারত ভাগের আগে এই মন্দিরের গুরুত্ব ছিল হিমালয়ের কেদারনাথ মন্দিরের মতোই। প্রতি বছর হোলি উৎসবের সময় সারা বিশ্ব থেকে হিন্দু পুণ্যার্থীরা এখানে এসে সমবেত হতেন এবং ভগবান নৃসিংহের পূজা করতেন।
কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে মন্দিরটি তার জৌলুস হারাতে থাকে। বর্তমানে মন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় : পূজা বন্ধ,মন্দিরে কোনো ধরনের পূজা-অর্চনা বা ধর্মীয় কার্যকলাপ হয় না। অযত্ন ও অবহেলায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরের কাঠামো ভেঙে পড়ছে । দেওয়াল ও স্তম্ভগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত। মন্দিরের জায়গা দখল করে নেওয়া হচ্ছে । মন্দির প্রাঙ্গণ এখন গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে আবর্জনার স্তূপ এবং অবৈধ দখলের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়।
মন্দিরের এই করুণ দশা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ এই ঘটনাকে “সংখ্যালঘু হিন্দুদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র” বলে অভিযোগ করছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “ভারতে যেখানে মসজিদ, গির্জাসহ সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় সুরক্ষিত, সেখানে পাকিস্তানে হিন্দুদের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলির এই দশা কেন? তাদের মতে, এটি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার এক প্রকট উদাহরণ।
বিশ্বজুড়ে হিন্দু সমাজ এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি অবিলম্বে সংস্কার ও পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ সেভ প্রহ্লাদ পুরী মন্দির এবং সেভ হিন্দু হিস্টরি -এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পাকিস্তান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। দাবি, প্রহ্লাদ পুরী মন্দিরকে তার পুরনো গৌরবে ফিরিয়ে এনে সেটিকে আবারও হিন্দুদের জন্য একটি সুরক্ষিত তীর্থক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হোক। এই মন্দির শুধুমাত্র একটি উপাসনালয় নয়, এটি একটি সভ্যতার জীবন্ত ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে রক্ষা করার দায় সকলের, এই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চাইছেন প্রতিবাদীরা।।

