এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ জুলাই : রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের “কোর ভোটব্যাংক” বলতে বোঝায় মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়,একশ শতাংশ মুসলিম ভোটারদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ইভিএমে তৃণমূলের বোতাম টেপে ৷ অন্যদিকে হিন্দুদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিলেও ২০ শতাংশের অধিক হিন্দু ভোটে এখনো তৃণমূল-সিপিএম ভাগ বসায় । একে হিন্দুদের গড় ভোটদানের হার মুসলিম সম্প্রদায় থেকে কম,তার উপর হিন্দু ভোটের ভাগাভাগি তৃণমূলকে জিততে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে বলে তিনি মনে করেন । যেকারণে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিন ধরে তুলে আসছে বিজেপি ৷
সিএএ/এনআরসির কট্টর বিরোধী মমতা ব্যানার্জি এতদিন ধরে যে ভয়টা করছিলেন, এবার ঠিক সেই পদক্ষেপ নিতে চলেছেন নির্বাচন কমিশন । অর্থাৎ, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়া ৷ শুধু বাংলার তৃণমূল কংগ্রেসই নয়,বিহারের লালু প্রসাদের দল জেডিইও এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন । নির্বাচন কমিশন ভোটাদের নাগরিক প্রমানের যে “মানদণ্ড” রেখেছে তা একপ্রকার এনআরসি-এর নামান্তর বলে মনে করছে মমতা-লালু প্রসাদরা ।
আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মাত্র কয়েক মাস আগে, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ২০০৩ সালের পর প্রথমবারের মতো রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। এর জন্য কমিশন জানিয়েছে যে ২০০৩ সালে যাদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল তাদের এর প্রমাণ দিতে হবে। যাদের নাম ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নেই এবং ১ জুলাই, ১৯৮৭ সালের আগে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের জন্ম সনদ দেখাতে হবে। যাদের জন্ম ১ জুলাই, ১৯৮৭ থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালের মধ্যে হয়েছে, তাদের এবং তাদের মা বা বাবার জন্ম সনদ দেখাতে হবে। যাদের জন্ম ২ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালের পরে হয়েছে, তাদের এবং তাদের মা ও বাবার উভয়ের জন্ম সনদ দেখাতে হবে । আর এতেই বিপাকে পড়ে যাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা, যারা রাজনৈতিক দলের মদতে ভোটার কার্ড করতে সক্ষম হয়েছিল ।
বিহারের বিধানসভার ভোটের পর ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন । আর ‘বিহার মডেলেই’ এখানেও হবে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার যাচাই । সম্ভবত অগাস্ট থেকেই বাংলায় ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সমীক্ষা বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন । কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের নেতৃত্বে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা জেলাশাসকে, ভোটের অতিরিক্ত জেলাশাসক, ইলেক্টরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং বুথ লেভেল অফিসারেরা একত্রে ভোটার তালিকায় নাম থাকা প্রত্যেকের বাড়িতে সমীক্ষার কাজটি করবেন । সেই প্রত্যেক ভোটারকে একটি ফর্ম ভরে তাদের কাছে জমা করতে হবে। যা যাচাই করবে কমিশন।
আর কমিশন যদি ‘ভুতুড়ে ভোটার’ চিহ্নিতকরণে তাদের নির্ধারিত নিয়মে কাজ শুরু করে তাহলে এরাজ্যের এমন কিছু বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস চরম বিপাকে পড়তে পারে । বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারনে জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া কলকাতা,দুই ২৪ পরগণা, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর সহ এমন অনেক জেলা আছে যেখানে ‘কোর ভোটব্যাংক’-এর একটা বড় অংশ হারাতে হতে পারে এরাজ্যের শাসকদলকে । যে ভোটব্যাংক প্রতিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হয়ে যায় ।
আর কমিশনের এই প্রকার কঠোর পদক্ষেপ আগাম আভাস পেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তৃণমূল । ইতিমধ্যেই কমিশনে দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। সেই আলোচনা পর্বেই উঠে আসে বাংলায় নিবিড় সমীক্ষা হওয়ার সম্ভবনার কথা। তৃণমূল তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বিহারের ক্ষেত্রে যেমন ১ মাসের সময় নিয়ে নিবিড় সমীক্ষার কাজে নেমেছে কমিশন, তা কোনও মতেই এ রাজ্যে সম্ভব নয়। তাদের দাবি, বিহারে যে ভাবে তাড়াহুড়়োয় সমীক্ষা চলছে, তাতে ২ কোটি ভোটার নথি-বিভ্রাটের কারণে বাদ পড়তে পারেন। এমনটা বাংলায় চলবে না এখানে সময় নিয়ে করতে হবে সমীক্ষা।
কিন্তু কমিশন শাসকদলের এই দাবি আদপেই মানবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । কারন সংবিধানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইনের অনুচ্ছেদ ২১-এর ক্ষমতাবলে, একটি দেশে ভোটার কারা, সেই বিষয়টি যাচাই করার জন্য বিশেষ এবং নিবিড় সমীক্ষা চালানোর অধিকার কমিশনের রয়েছে । সুতরাং কমিশন যেটা করতে চলেছে সেটা সংবিধান মেনেই । বিধানসভার ভোটের আগে এই ভূতুরে ভোটার চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় জিতেছিল বিজেপি । একই ভাবে বাংলায় যদি কমিশন ভূতুরে ভোটারদের নাম বাদ দিতে সক্ষম হয় তাহলে এরাজ্যের বিজেপি যে অনেকটা অ্যাডভান্টেজ পাবে সেটা বলাই বাহুল্য । কারন শুভেন্দু অধিকারী আরও ৫-৬ শতাংশ হিন্দু ভোটারকে একজোট করার কথা বারবার বলে আসছেন । পরিবর্তে কমিশন যদি তৃণমূলের ‘কোর ভোটব্যাংক’-এ একই শতকরা হারে ধ্বস নামায় তাহলে রাজ্যে পরিবর্তনের পরিবর্তন শুধু সময়ের অপেক্ষা ।।

