এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ জুন : কলকাতার কসবা ল’কলেজের ভিতরে ছাত্রীকে গনধর্ষণ কান্ডে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন তৃণমূল বিধায়ক ও অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী । এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইটিভি ভারতের সাংবাদিককে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছেন,’১০ মেয়ের মধ্যে একটা মেয়েকে বেছে নিল কেন ? তোরা সাংবাদিকরা একটু যান৷’ তার সেই বক্তব্যের অডিও স্লিপিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিজেপি নেতা ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর সজল ঘোষ । তিনি তৃণমূলের তারকা বিধায়কের এহেন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন তোলেন,’এই দলটায় কি একটাও ভদ্রলোক নেই ?’
সজল ঘোষের শেয়ার করা অডিও অনুযায়ী কথপোকথন নিচে তুলে ধরা হল :
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী : আমার কাছে ইম্পোর্টেন্ট লাগছে একটা জিনিস, ওকে টার্গেট করলো কেন সেটা তো কেউ জিজ্ঞেস করছে না ! তোরা সাংবাদিকরা একটু যান৷
সাংবাদিক : আপনি বলছেন মেয়েটাকে ?
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী : ইনভেস্টিগেশন করে এটা বের করা দরকার। ওকে টার্গেট কেন করেছিল ?
সাংবাদিক : আপনি বলছেন মেয়েটাকে ?
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী : হ্যাঁ হ্যাঁ ।
সাংবাদিক : আপনি মেয়েটাকে টার্গেট করা হল কেন বলছেন, এর মধ্যে কোন রহস্য আছে নাকি ?
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী : সেটাই বলছি জানতে হবে তো । ধর দশটা মেয়ে ওখানে আছে, একটা মেয়েকে টার্গেট করল । কি কারণটা বুঝতে পারছি না৷ এরকম বেছে নিল কেন ?
সজল ঘোষ লিখেছেন,’ইনি তৃণমূল বিধায়ক প্রাক্তন চিত্রতারকা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, লোকটাকে আমি দৈত্য কুলে প্রহ্লাদ না হলেও একটু ভদ্রলোক ভাবতাম, দেখুন কত ভুল ছিলাম আমরা, উনি বলছেন ধর্ষিতা ওই ছাত্রীর উদ্দেশ্যে, যে ওকেই কেন টার্গেট করলো সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত l এই দলটাই কি এক একটাও ভদ্রলোক নেই ? ছিঃ চিরঞ্জিত বাবু ছিঃ ।’
অডিও ক্লিপংটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিজেপি যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারিও । তিনি প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘ধর্ষণের শিকার মেয়েটার দোষ খুঁজছেন চিরঞ্জিত? এটা কী সভ্য সমাজের ভাষা?সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের এক ছাত্রীর উপর নির্মম যৌন নির্যাতনের ঘটনায় যখন সারা রাজ্য স্তব্ধ, তখন এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দোষ খুঁজে বার করার চেষ্টা করে তিনি প্রমাণ করে দিলেন, তৃণমূলের বহু নেতার মতো তিনিও ধর্ষণকে ‘মেয়ের দোষ’ বলে চাপা দিতে চাইছেন।
চিরঞ্জিত বলছেন — “ওই মেয়েটিই কেন?” অর্থাৎ ধর্ষণের পরেও প্রশ্ন ওঠে মেয়েটার চরিত্রে, মেয়েটার অবস্থান নিয়ে, মেয়েটার অস্তিত্ব নিয়ে। তিনি ধর্ষণের নির্মমতা নিয়ে নীরব থাকেন, কিন্তু ধর্ষিতার উপস্থিতি নিয়েই তাঁর আপত্তি। এটাই কি এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দায়িত্বশীল মন্তব্য? এটাই কি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মানবিকতা?’
তিনি আরও লিখেছেন,’এখানেই প্রশ্ন — কীভাবে একজন মানুষের মধ্যে এতটা অমানবিকতা আসে? এর উত্তর একটাই — নেত্রী যেভাবে ভাবেন, সেভাবেই ভাবতে বাধ্য হন তাঁর ‘বিশ্বস্ত চাকররা’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাধিকবার ধর্ষিতার দোষ খুঁজেছেন। কখনও বলেছেন “সাজানো ঘটনা”, কখনও “বিজেপির প্ল্যান”, আবার কখনও বলেছেন, “মেয়েটার চালচলন ভালো ছিল না।” চিরঞ্জিতবাবুও সেই ধারা বজায় রেখেছেন। এটা শুধুই এক বিধায়কের দায়িত্বহীনতা নয়, এটা গোটা শাসকদলের মানসিকতার প্রতিফলন। একজন ধর্ষিতা মেয়ের দোষ খুঁজে যারা নিজের রাজনৈতিক কুকর্ম ঢাকতে চায়, তারা আসলে সমাজের লজ্জা।’
পরিশেষে তিনি লিখেছেন,’চিরঞ্জিতবাবু একজন অভিনেতা ছিলেন — মানুষ তাঁকে ভালোবাসতেন। আজ তিনি এক নির্যাতিতার সম্মানহানিতে নিজেকে ছোট করে তুললেন। মানুষ আশা করেছিল, তিনি অন্তত অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু না, তিনি যেন দলীয় লাইন মেনে নিজের মানবিকতাকেই বিসর্জন দিলেন। একটা কথা স্পষ্ট —ডাস্টবিন থেকে যেমন সুগন্ধ বেরোয় না, তেমনি তৃণমূল নেতাদের মুখ থেকেও কখনও মানবিকতা বেরোয় না।’।

