এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ জুলাই : রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি একটা অদ্ভুত প্রার্থনা করেছে ভগবানের কাছে ৷ তিনি প্রার্থনা করেছেন যে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ যেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মত “গরীব” হন । কিন্তু হঠাৎ কেন এই প্রার্থনা করলেন বিজেপির ওই যুবনেতা ? আসলে, “বাংলার গর্ব মমতা”(Banglar Gorbo Mamata) নামে একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে দাবি করা হয়েছে, ‘দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ এবং এটা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেকিট রিফর্মস (এডিআর)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে’ ।
ওই পোস্টের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’প্রার্থনা একজন পশ্চিমবঙ্গবাসীর – সবাই যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গরিব হয়! হে ঈশ্বর, আমার তোমার কাছে একটাই প্রার্থনা —
আমার রাজ্যের প্রতিটি মানুষ যেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের মতো গরিব হয়ে ওঠে। তাদেরও যেন টালির চালার ছাউনির গল্প থাকে। ছেঁড়া শাড়ির কান্না থাকে। অথচ সেই গরিবি নিয়েই তারা যেন সমাজসেবায় ব্রতী হয়ে কোটিপতি হতে পারে।কলকাতার একাধিক এলাকায় তাদের নামে যেন সম্পত্তি থাকে। হোটেলের ব্যবসা, জলের ব্যবসা, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা— সবই যেন “গরিবির ফসল” হিসেবে ফুলে-ফেঁপে ওঠে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’তারা যেন কোটি টাকার ঝাড়বাতির নিচে বসে বিশ্রাম নিতে পারে। কলকাতার সব থেকে দামি জায়গা গুলো তাদের যেন সম্পত্তি থাকে।বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে। BMW, Audi, Land Rover-এর মতো গরিবি-বান্ধব গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা — তারা যেন গরিব মুখ্যমন্ত্রীর গরিব ভাইপো, গরিব ভাই, গরিব বউদি, গরিব দিদিদের মতো রাজভোগ উপভোগ করতে পারে।’
তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’ঈশ্বর, এমন গরিবি চাই আমাদের সবার ঘরে! পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেন মুখ্যমন্ত্রীর মতো গরিব হয়ে ওঠে — তাহলে আর কেউ চাকরি চাইবে না, বেতন চাইবে না, আবাস যোজনার ঘর চাইবে না। তারা বুঝে যাবে, গরিবি মানেই উন্নয়ন।
তৃণমূল কংগ্রেস যদি সত্যিই বিশ্বাস করে যে মুখ্যমন্ত্রী গরিব, তাহলে একটিই দাবি—এবার একটুখানি ব্যবস্থা করুন, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর মতো গরিব করে দিন। আর কিছু চাই না, শুধু মমতা ব্র্যান্ড গরিবি হোক আমাদের সবার অধিকার।’
তৃণমূল কংগ্রেসের ওই পেজে দাবি করা হয়েছে,’দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! মুখ্যমন্ত্রী হয়েও আজও তিনি টালির বাড়িতে বাস করেন! আজও তিনি সহজ সরল জীবন যাপন করেন, তাই গর্বের সাথে বলি, দিদির মতো আর কেউ নেই!’ পাশাপাশি একটা পোস্টারে ফলাও করে ছাপা হয়েছে, ‘দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! পর পর ৩ বারের মুখ্যমন্ত্রী । ৭ বারের সাংসদ । ২ বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ সামলেছেন ভারতীয় রেল । আজও বাস ছোট্ট টালির বাড়িতে । অতি সাধারণ জীবন যাপন ।’
২০২৪ সালে ডিসেম্বর মাসে এডিআর-এর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা ! ধনীতম মুখ্যমন্ত্রী হলেন অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডু৷ তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৩১ কোটি টাকা! রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জম্মু কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই নাকি কোটিপতি ।
দেশের জনপ্রিয় অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সম্পত্তির পরিমাণ ১.৫৪ লক্ষ টাকার৷ বিহারের নীতীশ কুমারের সম্পত্তির পরিমাণ ১.৬৪ লক্ষ টাকা৷ অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার রয়েছে ১৭ কোটির সম্পত্তি৷ অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক৷ প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মধ্যপ্রদেশের মোহন যাদবের কাছে রয়েছে ৪২ কোটি টাকার সম্পত্তি৷ তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের রেভন্ত রেড্ডি ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক৷
উল্লেখ্য,অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR) হল ভারতের একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । যা ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সংস্কারের উপর কাজ করছে । কিন্তু ১৯৮৪ সাল থেকে টানা ৭ বারের সাংসদ, ২ বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ২০১১ সাল থেকে টানা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো মমতা ব্যানার্জির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা দাবিকে মেনে নিতে পারছে না বিজেপি । তারা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস-এর সমীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে ।
প্রসঙ্গত,১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিআর-এর মোট সদস্য ছিল ১২ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ত্রিলোচন শাস্ত্রী,জগদীপ ছোকার, ডঃ অজিত রানাডেসহ অন্যান্যরা৷ সংস্থার সদর দপ্তর দিল্লির প্লট নং ই-৫, চতুর্থ তলা, লেন-১, ওয়েস্টেন্ড মার্গ, সাইদুলজাব, (সাকেত মেট্রো গেট নং ২ এর পিছনে) । উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী,১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIM) আহমেদাবাদের অধ্যাপকদের একটি দল দিল্লি হাইকোর্টে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের অপরাধমূলক, আর্থিক এবং শিক্ষাগত পটভূমি প্রকাশের বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করলে এডিআর প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে দিল্লি হাইকোর্ট এই জনস্বার্থ মামলা বহাল রাখে, কিন্তু ভারত সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে । তবে, ২০০২ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সকল প্রার্থীর জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশনে একটি হলফনামা দাখিলের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে তাদের অপরাধমূলক, আর্থিক এবং শিক্ষাগত পটভূমি প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করে ।।

