এইদিন বিনোদন ডেস্ক,০৪ জুলাই : বাংলাদেশি অভিনেতা ও মডেল আরিফিন শুভকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কলকাতার ফ্যাশন ডিজাইনার অর্পিতা সমাদ্দার । ২০১৫ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শুভ-অর্পিতার বাগদান হয়েছিল । ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি বিয়ের পর সন্ধ্যায় বসেছিল রিসেপশনের আসর। পরে ঢাকায় ফের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজনে । অর্পিতা সমাদ্দার নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন অর্পিতা আরিফিন । আরিফিন সেই সময় জানিয়েছিলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সম্পর্কটা রাখতে চান তিনি। অর্পিতার প্রশংসায় তিনি বলেন,’অনেক সাধনার পর কোনও ছেলের ভাগ্যে এমন মেয়ে জোটে। আমি যা বলি, ও সেটা মাথা পেতে নেয়। সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনও ঝগড়া হয়নি। ওর মধ্যে এখনো ছেলেমানুষি আছে। আমি সেটাই বেশি উপভোগ করি।’
কিন্তু প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ২০ জুলাই তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন । ফেসবুক পোস্টে আরিফিন শুভ লিখেছিলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমি আর অর্পিতা আমরা হয়তো বন্ধু হিসেবেই ঠিক আছি, জীবনসঙ্গী হিসেবে নয়।’ এদিকে আরিফিন শুভ ও অর্পিতা সমাদ্দারের বিয়ে ও বিচ্ছেদের সময় থেকেই উঠছিল “লাভ জিহাদের” অভিযোগ । গত বছর আগস্টে যখন তাদের বিচ্ছেদ হয় তখন অ্যাংরি স্যাফ্রন(@AngrySaffron) নামে একটা এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গ: কলকাতার এক হিন্দু মেয়ে অর্পিতা সমাদ্দার “লাভ জিহাদের” শিকার হন, তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয় এবং একজন বাংলাদেশী পুরুষকে বিয়ে করেন, যে পরে ৯ বছর পর তাকে পরিত্যাগ করে।’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের আবহে ফের এই বিতর্ক তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে । ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস (@VHindus71) বৃহস্পতিবার ওই যুগলের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছে,’বাংলাদেশি মুসলিম অভিনেতা আরেফিন শুভ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মেয়ে অর্পিতা সমাদ্দারকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের কয়েক বছর পর, অর্পিতাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাদের এখন বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। যদি তিনি কোনও হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতেন, তাহলে সম্ভবত তাদের এই অবস্থা হত না। মুসলিমরা কেবল হিন্দু মেয়েদের শোষণ করতে চায়।’
কিন্তু এই ঘটনা সত্যিই কি “লাভ জিহাদ” হিসাবে চিহ্নিত করা যায় ? দুজনের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটের দিকে এক ঝলক নজর দিলে অন্তত মনে হয় না যে এটা “লাভ জিহাদের” ঘটনা ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে যেটা জানা যাচ্ছে যে,ঢাকার এক ফ্যাশন হাউজে বিগত ৮ বছর ধরে চাকরি করছেন অর্পিতা সমাদ্দার । অন্যদিকে বাংলাদেশে ও ভারতেও তখন চুটিয়ে অভিনয় করেছেন শুভ। সম্ভবত সেই সূত্রে তাদের পরিচয় এবং পরস্পরকে ভালোলাগার পর্ব শুরু হয় । ২০১৫ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ের বছরখানেক আগে পরিচয় হয়েছিল অর্পিতা-শুভর । এরপর বন্ধুত্ব, ভালোলাগা ও ভালোবাসা । সেই সম্পর্কের বছরখানেক না গড়াতেই রূপ দেন বিয়েতে। ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় শুভ-অর্পিতার।বিয়ের সময় অর্পিতা বলেছিলেন ‘অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ আর শুভ বলেছিলেন ‘দুজনই চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি হোক। অবশ্য একটা ভয়ও ছিল। আমি মুসলিম, অর্পিতা হিন্দু। ভেবেছিলাম পরিবার থেকে একটু ঝামেলা হতে পারে। কিন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি। বরং দুই পরিবারের সিদ্ধান্তেই আমরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছি।’
তখন জানা গিয়েছিল, বিয়ের পর অর্পিতা সমাদ্দার নাম বদলে হয়েছিলেন অর্পিতা আরেফিন। তার কারণ, স্বামীর নামটা তার পছন্দ ছিল। একই সঙ্গে শুভর পছন্দ- অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন অর্পিতা। চেয়েছিলেন স্বামীর পছন্দে চলতে। এমনটাই তখন জানিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে। বলেছিলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটা বজায় রাখতে চাই। ওই সময় শুভ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘অনেক সাধনার পরে কোনো ছেলের ভাগ্যে এমন মেয়ে জোটে। আমি যা বলি, ও সেটা মাথা পেতে নেয়। সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি। ওর মধ্যে এখনো ছেলেমানুষি আছে। আমি সেটাই বেশি উপভোগ করি।’ তবে এখন দুজনের পথ দুদিকে। বলা যায় দুই দেশে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাদের। শুভ অবশ্য জানিয়েছেন দুজনের বন্ধুত্ব থাকবে। তবে যেটা জানা যায় যে বিচ্ছেদের কয়েক বছর আগে থেকেই কোনো কারনে দু’জনের সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে ।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ‘আহা রে’ নায়ক আরিফিনকে শেষবার বড়পর্দায় দেখা গিয়েছে মুজিবের বায়োপিকে। শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে মাত্র ১ টাকা পারিশ্রমিকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়োন আরিফিন শুভ ।।

