এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,০১ জুলাই : ২০১১ সালের আগে থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের একটা জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল, আর সেটা হল “বাংলার গর্ব মমতা” । কলকাতার রাজপথগুলিতে মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া বড় বড় ব্যানারে ওই স্লোগান লেখা হতো। কিন্তু একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনকালে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন “মমতা” আর “বাংলার গর্ব নন” । তিনি বলেছেন, ‘বাংলার গর্ব মমতা নয়, এই বাংলার লজ্জা মমতা’ ।
কসবা সহ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় নারীদের সুরক্ষার দাবিতে বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার ডাকে আজ মঙ্গলবার ময়না বাজারে ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’য় নেতৃত্ব দেন শুভেন্দু অধিকারী । পরে একটি জনসভায় ভাষণ দেন তিনি । সেই সভায় বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ”মমতা ব্যানার্জির কথা বলতে লজ্জা হয় । তিনি পার্ক স্ট্রিটে বলেছিলেন ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে বখরা নিয়ে লড়াই। বলেনি ? কাকদ্বীপে বলেনি ফুল রেপ হলে কুড়ি হাজার এবং হাফ রেফ হলে ১৫০০০ টাকা দেব ? এটা আমার কথা নয় । এই বাংলার গর্ব মমতা নয়, এই বাংলার লজ্জা মমতা ।’
তিনি বলেন,’এই মমতা বলেননি হাসখালীর ঘটনায় লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল ? প্রেম ছিল । বলেনি ? এই মমতা ব্যানার্জি কালিয়াগঞ্জ এর ঘটনায় বলেনি যে মহিলা অন্তঃসত্ত্বা ছিল ? এই মমতা ব্যানার্জি বলেনি অভয়ার ঘটনায় ১০ লক্ষ টাকা তো দেওয়া যেতেই পারে ? আজ মুখ বন্ধ কেন ? সব কথাতেই তো আপনি ফটফট করেন । উত্তরপ্রদেশ নিয়ে আপনি ফটফট করেন । মণিপুর নিয়ে ফটফট করেন । পাঁচ দিন হয়ে গেল, কসবা ল’কলেজ,আপনার বাহিনী করেছে ভাইপো গ্যাং… মনোজিৎ, জুবের । আপনার ভাইপো গ্যাং করেছে আর আপনার মুখ বন্ধ ? আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য নেই । সাংবাদিক সম্মেলন নেই । ভাষণ নেই ।’
শুভেন্দু বলেন,’আজকে পশ্চিমবাংলা কি অবস্থায় আছে আপনারা নিজেরা দেখতে পাচ্ছেন৷ এই বাংলায় বহু মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী আমরা দেখেছি । এই বাংলায় রানী রাসমণি থেকে মেদিনীপুরের রানী শিরোমণির মত প্রথিতযশা মাতৃ শক্তি আমরা দেখেছি । এই বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে মহাষ্টমীর দিন কুমারী পুজো করেছিলেন । আমরা বলি যে ‘না জাগিলে ললনা এই বিশ্ব জাগে না’ । যদি ভগবান মাতৃ শক্তি সৃষ্টি না করতেন তাহলে আমরা কি পৃথিবীর আলো দেখতে পেতাম ? পেতাম না৷ তাই আমরা কেউ ভারত পিতা বলি না ভারত মাতা বলি।’
তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ভাবতে লজ্জা লাগে যে তার আমলে ২০২১ সাল থেকে চার বছরের ইতিহাস যদি বলি তাহলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাবে আপনাদের । মুসলমানরা দল বেঁধে মমতাকে ভোট দেয় । অন্যদিকে ১০০ টা হিন্দু ভোট পড়লে ৬০ টা বিজেপি পায়, ৩৫ টা তৃণমূল পায়, ৫ টা সিপিএম পায় । আর ১০০ জন মুসলমান ভোট দিলে ৯৮ জন তৃণমূলকে ভোট দেয়, কারণ মমতা ব্যানার্জি তাদের সমর্থন করেন রক্ষা করেন নিরাপত্তা দেন । ইমাম ভাতা দেন । তাদের ওবিসি বানিয়ে দেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এই মমতা ব্যানার্জির নারী নির্যাতন শুরু হয়েছিল কবে ? রামপুরহাটের বকডুই, তৃণমূলের সম্পদ, এখানে যেমন শাহজাহান সম্পদ আছে সন্দেশখালিতেও শাহজাহান আছে। ঠিক একইভাবে বীরভূমের বগডুইতে ভাদু আর আনারুল তারা পেট্রোল ঢেলে শিকল তুলে সাতজন মুসলিম মহিলা এবং চারজন শিশু কন্যাকে পুড়িয়ে দিয়ে এই বাংলায় নারী নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মমতা ব্যানার্জি হাতে খড়ি শুরু করেছিলেন । তার আগে তো পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা, কামদুনির ঘটনা, কাকদ্বীপের ঘটনা, কাটোয়ার ঘটনা, সবাই জানেন আপনারা৷’
তিনি বলেন,’তারপর থেকে আপনারা দেখুন একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে । হাঁসখালির আইনের ছাত্রী, সিডিউল কাস্ট পরিবার, নমশুদ্র পরিবারের, তাকে উপপ্রধানের ছেলে জন্মদিনে ডেকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালে যেতে দেয়নি । হাসপাতালে গেলে ওই বোনটা হয়তো বেঁচে যেত । বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে । শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুরিয়ে দিয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি । তারপরে আবার কালিয়াগঞ্জের সিডিউল কাস্ট পরিবার, রাজবংশী পরিবার, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির ব্যাটা জাভেদ ধর্ষণ করে খুন করেছিল৷ তারপর থেকে আরজিকরের অভয়া, কসবা, মাটিগাড়া, ময়নাগুড়ি, গোটা রাজ্যে যদি আপনি তাকিয়ে দেখেন তাহলে কোনো বোন কন্যা দিদি কেউ সুরক্ষিত নয় ৷
তিনি বলেন,’এরাজ্যে এমনকি তৃণমূলের মহিলারাও সুরক্ষিত নয় । গত পরশুদিন সিউড়ি ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তৃণমূলের জিহাদী বাহিনী উদম মার মেরেছে । আজকের তৃণমূলের মহিলারাও এই জিহাদী ধর্ষকদের হাতে সুরক্ষিত নয় । তাই আমরা আওয়াজ তুলেছি… “কন্যা বাঁচাও মমতা হটাও” ।’ বিরোধী দলনেতা বলেন,’এই বাংলায় মাতৃ শক্তিকে রক্ষা করতে হবে। কেন ঘটছে ? ঘটছে এইজন্য কারণ সব জায়গায় তৃণমূল । পুলিশ মানেই তৃণমূল, পুলিশের নিচের তলা নয়, উপরের তলা । আপনারা জানেন এখানে গোপিয়া বলে একজন ওসি ছিল, কি অত্যাচার করেনি ! আপনারা সে কথা ভুলে যাননি৷ বিজয় ভূঁইয়া সহ একাধিক বিজেপি কার্যকর্তার আত্ম বলিদানে ময়নাতে আজ বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে ।’
বোলপুর থানার আইসির মা ও স্ত্রীকে অনুব্রত মণ্ডলের ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে বলেন,’আপনার নেতা রাজ্য সরকারের স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান, নাম যার অনুব্রত মণ্ডল, নিক নেম তার কেষ্ট মন্ডল, তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বড় পদে, তার সঙ্গে ২২ জন সিকিউরিটি থাকে, তিনি নীল বাতি লাগানো ইনোভা বিএমডব্লিউ চড়েন, অনেক টাকার মালিক, দু’বছর দিল্লির তিহার জেল খেটে এসেছে, তিনি ফোন করে বোলপুরে রাইসিকে বলছেন “তোর মাকে তো স্ত্রীকে….”, পাঁচ বার বলেছে, ভাষা মুখে বলা যাবে না। কানে শোনা যাবে না । আপনি তাকে গ্রেফতার করতে দেননি ।’
তিনি বলেন,’পুলিশের মা বোনের ও মর্যাদা আছে৷ তারাও আমাদের মা বোন । তারাও আমাদের দিদি । আমরা বোলপুরে গিয়ে নারী সম্মান যাত্রা করেছি । পুলিশের মা-বোনের সম্মানীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আমাদের করতে হয়েছে । তাই আজকে ময়নাতে আমি বলতে এসেছি মা বোনেদের কাছে, কন্যা রত্ন কে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে মমতাকে ভাগাতে হবে । জোট বাঁধুন তৈরি হন । তৃণমূলকে তাড়াতে হবে। তৃণমূল মানে চোর । তৃণমূল সব খায় । শৌচালয় পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে তৃণমূল । চাকরি বিক্রি থেকে শুরু করে তোলাবাজ ভাইপোর কোম্পানি লুট করেছে বাংলায় । ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার । ময়না ৩০ হাজার ছেলে অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে৷’।

