এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ জুন : মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে এক মহিলা ধর্ষণ ও জোর করে গর্ভপাতের অভিযোগ এনেছেন ৷ এমনকি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানায় একটা অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই মহিলা । কিন্তু সেই অভিযোগকারিনীই কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভোল বদল করে সাংবাদিক ডেকে বলেছেন,এটা “দিদি”,সাংবাদিক দীপক ব্যাপারী এবং আই-প্যাকের পরিকল্পনা । যদিও অভিযোগপত্রটি তিনি প্রত্যাহার করেননি । যার ভিত্তিতে কার্তিক মহারাজকে নোটিশ পাঠিয়ে মঙ্গলবার তাঁকে নবগ্রাম থানায় হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ ।
এদিকে অভিযোগকারিনীর দ্বিতীয় বয়ানের ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করে বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য বলেছেন,’কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগের নেপথ্যে “দিদির” লোকেরা, সাংবাদিক দীপক ব্যাপারী ও আই- প্যাক আছে। তিনি লিখেছেন,’ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজন শ্রদ্ধেয় সন্ত কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে – এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হিন্দু ঐক্য ও সেবার স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এখন, সত্য বেরিয়ে আসছে। অভিযোগকারী মহিলা প্রকাশ করেছেন যে দীপক ব্যাপারী নামে একজন সাংবাদিক আই-প্যাকের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, যারা পরে কলকাতা থেকে একটি গাড়ি পাঠিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায় এবং একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। তিনি সম্পূর্ণরূপে “দিদির” লোকদের নির্দেশ অনুসারে কাজ করেছিলেন, ঠিক উপরে থেকে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এটা ন্যায়বিচারের বিষয় ছিল না। এটা ছিল একটা পরিকল্পিত রাজনৈতিক আঘাত—একজন হিন্দু সাধু এবং গভীর শ্রদ্ধার দাবিদার প্রতিষ্ঠানের উপর এক লজ্জাজনক আক্রমণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চাদগামী, হিন্দু-বিরোধী রাজনীতির কোনও সীমা নেই। তিনি যেকোনো সীমা অতিক্রম করবেন—এমনকি সাধু ও সন্ন্যাসীদেরও লক্ষ্য করে—তার ভোট ব্যাংককে সন্তুষ্ট করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতে। আপমার লজ্জিত হওয়া উচিত । ধর্ম এবং হিন্দু ভক্তদের অভিশাপ আপনাকে রেহাই দেবে না।’
প্রসঙ্গত,মুর্শিদাবাদ জেলা মুসলিম অধ্যুষিত । দীর্ঘ সময় ধরে সেখানকার হিন্দুদের উপর হামলা হয়ে আসছে বলে অভিযোগ ওঠে । সম্প্রতি, ওয়াকফ সংশোধিত আইনের বিরোধিতার অছিলায় তৃণমূল সাংসদ ইরফান পাঠানের নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত সামসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ায় । হিন্দু পিতাপুত্র খুন হয় । গ্রামের পর গ্রাম উজার করে হিন্দুরা পালিয়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়৷ এহেন জায়গায় স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় হিন্দুদের সংগঠিত করার কাজ করে আসছেন কার্তিক মহারাজ । তিনি ‘হিন্দুত্ববাদী দল’ বিজেপির সমর্থক হওয়ায় স্থানীয় হিন্দুরাও মূলত বিজেপির ভোটার । এই কারনে রাজ্যের শাসকদলের বিষ নজরে পড়েছেন ওই সর্বত্যাগী সন্নাসী । ‘তোষামোদি রাজনীতি’, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি শাসকদলের দলের বিরুদ্ধে একাধিক বার মুখও খুলেছেন৷ এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পর্যন্ত কার্তিক মহারাজের পিঠে বিজেপির লেবেল সেঁটে দিয়ে তাঁকে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নামার জন্য আহ্বান পর্যন্ত জানিয়েছিলেন ।
এই পরিস্থিতিতে কার্তিক মহারাজের “চরিত্র হনন” করে ২০২৬ এর ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । আর রাজ্যের হিন্দু ভোটব্যাংকে ফাটল ধরাতে এই কাজে কিছু পেটোয়া সংবাদমাধ্যম শাসকদলকে সহযোগিতা করতে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে আসরে নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে ।
অমিত মালব্য যে ভিডিওটি আজ এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন সেখানে মুখ আবছা করা এক মহিলাকে বলতে শোনা গেছে,’উপর মহলের সমস্ত রিপোর্ট হয়ে গিয়েছিল । আমি অতটা বুঝতে পারিনি যে ওপর মহল পর্যন্ত চলে যাবে ।’ আই প্যাকের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মহিলা বলেন,ওই সাংবাদিকের সঙ্গে প্রথমে আমার যোগাযোগ হয়েছিল । তারপরে আস্তে আস্তে উনি যা করার করেছেন । কিভাবে কি হলো আমি কিছুই জানিনা । কে কোন পার্টির আমি তাও জানিনা । এখন বিষয়টা পার্টি গত আসবে আমাকে যা তা বলবে ।’ মহিলাকে প্রশ্ন করা হয়, যে গাড়ি করে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সেটা কি আই প্যাকের দেওয়া গাড়ি ছিল ? উত্তরা দিনে বলেন, হ্যাঁ, ওনারা কলকাতা থেকে এসেছিলেন এবং আমাকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলেন ।’
প্রশ্ন : সাংবাদিকই কি আপনাকে আই প্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছিল ?
মহিলা : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ।
প্রশ্ন : কোন সাংবাদিক ? নাম কি তার ?
একটু ভেবে ওই মহিলা বলেন , ‘দীপক ব্যাপারী’ ।
প্রশ্ন : দীপক ব্যাপারী হাইপ্যাক এর সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়ে দিয়েছিল?
মহিলা : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ৷
প্রশ্ন : আড়াই প্যাক এর সাথে কথা বলে আপনি অভিযোগ করেছেন?
মহিলা : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ । এরপর ফের তিনি একে প্রশ্নের উত্তরে বয়ান বদল করে বলেন, ‘না আমি কারো সাথে কথা বলিনি তারপরে । তারপরে পরের দিনই ওনারা কলকাতা থেকে চলে এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে ।
প্রশ্ন : ওনারা এসে তারপর আপনাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল ?
মহিলা : হ্যাঁ । তারপরে ওনারা আমাকে যেখানে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল এখানে সেখানে গেছি । এই হচ্ছে ব্যাপার ।
প্রশ্ন : মানে আই প্যাক যেভাবে আপনাকে যেখানে যেতে বলেছে সেভাবে আপনি সেখানে গেছেন ?
মহিলা : হ্যাঁ, উপরমহল থেকে সবাই এসেছিল ।
মহিলা জানান যে পুলিশ তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে । কিন্তু পুলিশে নিরাপত্তা কেন ?
মহিলা : ওনারাই পাঠিয়ে দিয়েছেন ।
প্রশ্ন : আই প্যাক ?
মহিলা : হ্যাঁ, ব্যাপারটা হচ্ছে এখন আমার ওপরে অনেক চাপ আসবে তো৷
প্রশ্ন : তাই প্রেস মিট করবেন বলে পুলিশ আপনাকে নিরাপত্তা দিয়েছে ?
মহিলা : হ্যাঁ ।
প্রশ্ন : সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আপনাকে কে পাঠালো ?
কয়েক সেকেন্ড ভেবে মহিলা বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে অপর মহল থেকেই সব হচ্ছে ।
প্রশ্ন : ওপর মহল কারা ?
মহিলা : ওপর মহল হচ্ছে দিদি ।
প্রশ্ন : দিদির লোকজন ?
মহিলা : হ্যাঁ,দিদির লোকজন ।
প্রশ্ন : দিদির লোকজনই সব করাচ্ছে, তাই তো ?
মহিলা : ব্যাপারটা হচ্ছে উনি সব ঠিক করছেন।
মহিলা বলেন, আমি কোন পার্টিকে ছোট করতে চাই না। আমি পার্টির কেউ নই । সত্যি কথা বলতে কি ভোট দিতেও যাই না ।
এদিকে কার্তিক মহারাজের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া হল, “সত্যের জয় হবেই।”।