এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ জুন : আরজি কর মেডিকেল কলেজের তরুনী চিকিৎসক অভয়ার নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ-হত্যাকান্ডের ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছিল গোটা বিশ্ব । কিন্তু ওই নারকীয় ঘটনার ন্যায়বিচার আজও ‘অধরা’ বলে মনে করছেন মৃতার মা-বাবা সহ বহু সাধারণ মানুষ । অভয়ার ঘটনায় রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশ, সিবিআই এবং তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের ভূমিকায় আজও বহু মানুষ ক্ষুব্ধ । এদিকে এই নারকীয় ঘটনার বিতর্কের মাঝেই কলকাতার কসবার আইন কলেজের ছাত্রীকে গনধর্ষণের ঘটনায় ফের তোলপাড় ফেলে দিয়েছে । এই ঘটনায় মনোজিৎ মিশ্র (৩১), জাইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । বিশেষ করে মনোজিৎ টিএমসিপি ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি হওয়ায় এবং তৃণমূলের তাবড় শীর্ষ নেতাদের সাথে তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছে এরাজ্যের শাসকদল ।
কিন্তু কসবার ল’কলেজে ছাত্রীকে গনধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কে তা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে । বিজেপি ও সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক চ্যানেল দাবি করছে যে অন্যতম ধৃত জাইব আহমেদ হল এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত এবং সে বিশেষ সম্প্রদায়ের হওয়ায় শাসকদলের নির্দেশে তাকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। এবারে এই দাবি করা ওই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল ও ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিল কলকাতা পুলিশ ।
শনিবার বিকেল ৩:৫৫ নাগাদ কলকাতা পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে এই বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘কসবায় ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু অসাধু ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করছে ।এই ধরনের প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিকর এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।যারা মিথ্যা তথ্য এবং বিদ্বেষমূলক প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উক্ত মামলায় যথোপযুক্ত আইনগত ও তদন্তমূলক পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ আইন অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে।’
যদিও কলকাতা পুলিশের এই পোস্টের কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা । দেবযানী ভট্টাচার্য কমেন্ট সেকশেনে লিখেছেন,’সেক্ষেত্রে অভিযোগকারী নিজেই প্রথম “অসাধু ব্যক্তি” যিনি তার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়েছেন। তার অভিযোগ অনুসারে, জে আর কেউ নন, জাইব আহমেদ যিনি তাকে নির্যাতন করেছিলেন এবং পি অর্থাৎ প্রমিত এবং এম অর্থাৎ মনোজিত অপরাধটিকে সহজতর করেছিলেন এবং দর্শক হয়েছিলেন। এটি একটি সাম্প্রদায়িক অপরাধ। বলা হচ্ছে যে এটি একটি পুলিশ রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে, তবে এটি একটি পৃথক বিষয়।’
উল্লেখ্য,অভিযোগে অপরাধীদের প্রকৃত নাম না দিয়ে তাদের নামের আদ্যক্ষর ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে । বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি ওই নামগুলি প্রকাশ্যে এনে জানিয়েছিলেন যে “এম” হলেন মনোজিৎ মিশ্র,”জে” হলেন জাইব আহমেদ এবং “পি” হলেন প্রমিত মুখার্জি । আর অপরাধীদের প্রকৃত নাম ব্যবহার না করে আদ্যক্ষর ব্যবহার করার কারনেই পুলিশের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলছেন অনেকে । বিজেপি নেতা ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর সজল ঘোষের প্রশ্ন,’কসবাকাণ্ডে ও অভয়ার ছায়া ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে, প্রমাণ লোপাট করতে এখানেও সচেষ্ট সরকার ?’
একজন ব্যবহারকারী (@utkalachintaka) কলকাতা পুলিশের পোস্টের কমেন্ট সেকশনে লিখেছেন, ‘আপনারা কেবল নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়।’ রেবেল সনাতনী লিখেছেন,’তাহলে এখন কসবায় কোনও অপরাধের বিষয়ে প্রশ্ন তোলাও “সাম্প্রদায়িক”? কেন সিস্টেম সবসময় “বর্ণনা” রক্ষায় ভুক্তভোগীর চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যায়? এই মামলায় স্বচ্ছতা কোথায়? সিসিটিভি ফুটেজ, এফএসএল রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ কোথায়? যদি আপনারা সত্য প্রকাশ না করে সবকিছুকে “মিথ্যা বর্ণনা” বলেন, তাহলে আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছেন না, আপনি জনসাধারণের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এটি ঘৃণা উস্কে দেওয়ার বিষয়ে নয়। এটি সত্য, জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচার দাবি করার বিষয়ে।’।