এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,২০ জুন : একটা ঘরে চলছে দুই শ্রেণীর ক্লাস । দু’জন শিক্ষক কচিকাঁচা পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন । তবে অবাক করার মত বিষয় হল যে দুই শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সকলের মাথায় একটা করে ছাতা ধরা আছে । কারন মাথায় ছাতা না ধরলে বেহাল স্কুল ভবনের ছাউনি থেকে ঝরঝর করে ঝড়ে পড়া বর্ষার বৃষ্টির জলে তাদের নাকানিচুবানি খেতে হবে । “উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা” পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাসের এই ভিডিও এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি ভিডিওটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছেন,’এটা শাসনব্যবস্থা নয়। এটি অপরাধমূলক অবহেলা।’
জানা গেছে,পাণ্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলে মোট ৬৮ জন পড়ুয়া আছে । রয়েছে দু’টো ছোট্ট পাকা ঘর । সেদুটি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট । এছাড়া মিড ডে মিলের একটা ঘরসহ আরও দুটি ঘর রয়েছে । করগেটের ছাউনি দেওয়া একটা ঘরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাস হয় । তবে ছাউনির করগেট ফুটো হয়ে গেছে । বর্ষাকালে সেই ফুটো দিয়ে ঘরের মধ্যে ঝড়ঝড় করে ঝড়ে পড়ে বৃষ্টির ধারা । তাই তাদের ছাতা মাথায় ক্লাস করা কার্যত বিধিলিপি হয়ে গেছে । স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত গুপ্ত বলেছেন,’আমি বছর দুয়েক হল এসেছি । ক্লাসরুমের বেহাল অবস্থার কথা সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরে জানিয়েছি । গত বছর ঘর মেরামতির জন্য এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে । আশা করি কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
লকেট চ্যাটার্জি লিখেছেন,’কি লজ্জার কথা! এটাই পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “শিক্ষা মডেলের” করুণ বাস্তবতা। হুগলি জেলায়, ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী ৬৮ জন তরুণ শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে ছাতা ধরে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে-কারণ তাদের স্কুলের ভাঙা ছাদ দিয়ে বৃষ্টির জল ঝরে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোতে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়ে, তা কোথায়?
বহুল প্রচারিত “বাংলার শিক্ষা” কোথায়? সরকার যখন তুষ্টিকরণ এবং ফটো-অপসের প্রচারে ব্যস্ত, তখন বাংলার শিশুরা এটাই সহ্য করে-একটি ভেঙে পড়া ব্যবস্থা, কোনও মর্যাদা নেই, কোনও মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নেই। এটা শাসনব্যবস্থা নয়। এটি অপরাধমূলক অবহেলা।’
জানা যাচ্ছে যে হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ওই ভিডিও ভাইরাল হতেই টনক নড়ে শাসকদল ও প্রশাসনের । বেহাল ঘর দুটোতে তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বাকি দুটো পাকা ঘরেই আপাতত চলবে চারটে শ্রেণীর ক্লাস । কিন্তু ওই দুটি পাকা ঘর এমনিতেই ছোট,তাই কিভাবে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে এনিয়ে ধন্দ্বে রয়েছে খোদ শিক্ষকরা । এদিকে ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনের আগে পাণ্ডুয়ার ওই প্রাথমিক স্কুলে বাস্তব প্রকাশ্যে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে গেছে শাসকদল ।।

