এইদিন ওয়েবডেস্ক,গুয়াহাটি,২০ জুন : সাম্প্রতিক সময়ে গুয়াহাটি,ধুবড়ি এবং লখিমপুরে একের পর এক মন্দিরের পাশে গোমাংস ছোড়ার ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল আসামে । মুসলিম অধ্যুষিত ধুবড়িতে মন্দিরে গরুর মাথা পাওয়া এবং বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাম্প্রদায়িক পোস্টার পাওয়ার পর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sarma) দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । এলাকায় রাতে কার্ফু জারি করা হয়েছে । মোতায়েন করা হয়েছে র্যাফ ও সিআরপিএফ । আসামে একের পর এই ঘটনা ঘটতে থাকায় গতকাল মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে বলেছেন, ‘আমি সুপারিশ করছি, যদি তারা গরুর মাংস ছোড়ে তাহলে প্রতিশোধ হিসেবে শুয়োরের মাংস ছুঁড়বে… তাহলেই হিসাব বরাবর হয়ে যাবে ।’ তিনি আজ জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য হিন্দু ধর্মীয় স্থানের ৫ কিমির মধ্যে, বিশেষ করে উৎসবের সময়, গরু জবাই এবং গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,’মন্দিরে গরুর মাংস নিক্ষেপ কেবল ধর্মের অবমাননাই নয়, বরং মাটির সন্তানদের জমি দখলের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রও। আমাদের সরকার রাজ্যের সমস্ত সংবেদনশীল ‘উপজাতি অঞ্চল এবং ব্লক’-এর একটি তালিকা প্রস্তুত করছেন ।
আসামে মন্দিরে গরুর মাংস নিক্ষেপের ঘটনায় অভিযুক্তরা সকলেই একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোক ছিল। কিন্তু এখানে রাহুল গান্ধীরা অভিযোগ করছে যে হিন্দুরা গরুর মাথা কেটে মন্দিরে ফেলে দেয় । যারা গোমাংস দেখলেই দূরে সরে যায় ।’
উল্লেখ্য,আসামের একটি মন্দিরের ভেতরে গরুর মাংস রাখার অভিযোগে ইতিমধ্যেই ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নাম : মঞ্জুর আলী,রেজাক আলী,সাহা আলী,দিলওয়ার হোসেন,দিলদার হোসেন,আবু কালাম আলী এবং জাহিদুল ইসলাম । কিন্তু মন্দিরে গোমাংস ছোড়ার ঘটনায় বিতর্কের সময় আসাম কংগ্রেস প্রধান গৌরব গগৈ আসামিদের বাঁচাতে যাবতীয় দায় আরএসএস এবং বিজেপির উপর চাপিয়ে দেন ।
লাভ জিহাদের পাশাপাশি অনলাইন জিহাদ চলছে আসামে
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা আজ বলেছেন,’সাম্প্রতিক সময়ে আর একটা নতুন ট্রেন শুরু হয়েছে । আইআইটি গুয়াহাটির ছাত্র পরিচয় দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলছে । কিন্তু আমরা যখন পরীক্ষা করছি তখন দেখতে পাচ্ছি যে তারা গুয়াহাটির আইআইটি এর ছাত্র নয় । তারা ফেসবুকে হিন্দু নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছে । লাভ জিহাদের ক্ষেত্রে যেভাবে হিন্দু নাম ব্যবহার করে ঠিক তেমনি এক্ষেত্রে করা হচ্ছে । আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি।’
সংবাদ সংস্থা এএনআই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে,’গত এক মাসে হঠাৎ করে ৫০০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করা হয়েছে। তারা ইরানপন্থী, ফিলিস্তিনপন্থী, বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসেরপন্থী কন্টেন্ট পোস্ট করছিল। আমরা সম্প্রতি যোগদানকারী ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলির একটি ফরেনসিক অডিট করেছি।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,’আমরা ২০৯২টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অধ্যয়ন করেছি, এবং পর্যবেক্ষণ চলছে। এর মধ্যে ৬১৮টি অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশের, ২৩৬টি পাকিস্তানের, দুটি ফিলিস্তিনের, ছয়টি ব্রাজিলের, একটি কানাডার, একটি কলম্বিয়ার, ছয়টি মিশরের, ৫৪টি ফ্রান্সের, চারটি জার্মানির, ১৬টি ইন্দোনেশিয়ার, আটটি ইরাকের, তিনটি ইতালির, ১০টি জর্ডানের, ৮৮ টি কুয়েতের, একটি লিবিয়ার, ৩৫টি আফগানিস্তানের, চারটি আলবেনিয়ার এবং দুটি অস্ট্রেলিয়ার। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলির ব্যবহারকারীরা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের। এই লোকেরা খুবই কট্টর ইসলামিক মৌলবাদী । এই লোকেরা রাহুল গান্ধী বা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে অনুসরণ করে না। তারা কেবল আসাম সম্পর্কীয় সেই সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের কার্যকলাপ এবং আসাম কংগ্রেসের কার্যকলাপ সম্পর্কিত পৃষ্ঠাগুলি পছন্দ করে।’।

