এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ জুন : উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই দীঘার জগন্নাথদেব মন্দির নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না । এবারে মুসলিম দোকানকে মন্দিরের প্রসাদ সরবরাহের বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠল । অভিযোগটি তুলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি আজ শুক্রবার মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হলো’ । ভিডিওতে এক ব্যক্তির বক্তব্য রয়েছে৷ শুভেন্দু অধিকারী ভিডিও-এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের “টিপটপ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” দোকানের মালিক শামসুজ্জামান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে “মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের প্রসাদের” বরাত পাওয়ার পর, তা সরবরাহ করার বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন ।’ প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিও-এর কথোপকথনটি নিচে তুলে ধরা হলো :
দোকানদার : “আমার ভালো নাম শামসুজ্জামান, তবে সবাই আমাকে রাজু বলে ডাকে । আমার দোকানের নাম টিপটপ মিষ্টান্ন ভান্ডার ।
প্রশ্নকর্তা : আপনি কি হালাল মিষ্টি করেন ?
দোকানদার : অবশ্যই, হালাল খাবার আমাদের তৈরি হয় ।
প্রশ্নকর্তা : সরকার কি কোন অর্ডার দিয়েছে ?
এ প্রশ্নের উত্তরে দোকানদারকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রসাদের সঙ্গে আমাদের এখান থেকে কিছু মিষ্টির প্যাকেট পাঠানো হয়েছে । সাধারণ মিষ্টি করে নয় । যেভাবে দিতে বলেছে আমরা সেভাবে পাঠাচ্ছি । তিনি জানান যে প্রতি প্যাকেটের মূল্য ১৫ টাকার কাছাকাছি।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গত ১৮ জুন এক্স হ্যান্ডেলে দীঘার মন্দিরের জন্য প্রসাদ সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া চারটি দোকানের নাম উল্লেখ করা একটি তালিকা পোস্ট করেছিলেন ।
তালিকায় লেখা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের দিঘা জগন্নাথ ধামের জন্য প্রসাদ প্রস্তুত করার জন্য মুসলিম মিষ্টির দোকানগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ সেই তালিকার একেবারে উপরে লেখা আছে,উপরোক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে, রানীনগর-১ ডেভেলপমেন্ট ব্লকের আওতাধীন মিষ্টির দোকানের বিবরণ প্রেরণকারী নিম্নস্বাক্ষরকারী।’ তাতে সিরিয়াল নম্বর, ব্লকের নাম/ঠিকানা,মিষ্টির দোকানের নাম, যোগাযোগকারী,যোগাযোগ নম্বর এবং প্রতিদিন ডেলিভারি ক্ষমতা প্রভৃতি ছক দেওয়া হয়েছে । ছকের এক নম্বরে নাম রয়েছে দোকানের নাম ‘টিপটপ মিষ্টান্ন ভান্ডার’,ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিক রাজু সেখ । তালিকার দু’নম্বরে রয়েছে দোকানের নাম ভাই-ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডার,ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিকের নাম সাবিরুল্লা ইসলাম । তৃতীয় দোকানের নাম সোনালী মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা পাহাড়পুর জিপি এবং মালিকের নাম রজব আলী । চতুর্থ দোকানের নাম মিস্তিমুখ মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিক রামপ্রসাদ ।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছিলেন,পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের কাছে জানতে চাইছি, এই বিজ্ঞপ্তিটি কি সত্য ? রানীনগর – ১ নং ব্লকে ‘দীঘা জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ এর প্রসাদ (মিষ্টান্ন) রেশন ডিলারদের কাছে সরবরাহের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি সামনে এসেছে তা নিয়ে এখন স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির সত্যতা অবিলম্বে প্রশাসনকে সর্বসমক্ষে আনতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় বেশ কিছু মিষ্টির দোকানের মালিকদের নাম ও নম্বর দেওয়া হয়েছে, যেখানে সেই তালিকায় দেওয়া চারটি মিষ্টির দোকানের মধ্যে তিনটিরই মালিক মুসলিম!তাহলে কি মাননীয়ার ‘তোষণের’ ওবিসি তালিকার মতো এখানেও ঘুরপথে মুসলিমদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করে দিতে এখন থেকে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বিতরনের জন্য প্রসাদ তৈরির বরাতও মুসলিম ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে?’ যদিও মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এখনো পর্যন্ত সুকান্ত মজুমদারের এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ।।

