এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ জুন : বৃহস্পতিবার বজবজে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীকে দেখতে গিয়ে তৃণমূলের হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে । সেই হামলার মুহুর্তের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামনে এসেছে । এমনকি তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। জলের বোতল, চপ্পল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ । পাশাপাশি সুকান্ত মজুমদারকে উদ্দেশ্য করে “চোর চোর” স্লোগান দিতে শোনা গেছে হামলাকারীদের । পালটা তিনি “তোর বাবা চোর” এবং “জাহাঙ্গীরের অবৈধ সন্তান” বলে প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন । একজন মহিলাকে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে হাতে জুতো নিয়ে বলতে শোনা গেছে ‘১০০ দিনের কাজের টাকা না দিলে ওকে ধরে জুতোপেটা করব’ । অভিযোগ উঠছে যে পুলিশের সামনে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর ওপর এই হামলা হয়েছিল কিন্তু পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি । এই ঘটনার পর আজ শুক্রবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির কথা অবহিত’ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ।
চিঠিটি তিনি নিজের এক্সন্ডালে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘গতকাল ডায়মন্ড হারবারের বজবজে, আমি তৃণমূল সমর্থিত অপরাধী জনতার দ্বারা এক নৃশংস, পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম, যখন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নীরব, মেরুদণ্ডহীন দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। হিংসার সময় পুলিশ কেবল পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়নি – উত্তেজনা বৃদ্ধির স্পষ্ট লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও তারা কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এমনকি যখন একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্যকে নিশানা করা হয়েছিল, তখনও রাষ্ট্রযন্ত্র অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। এটি সংসদীয় বিশেষাধিকারের একটি গুরুতর লঙ্ঘন – ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর একটি সরাসরি এবং বিপজ্জনক আক্রমণ। আজ, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে মাননীয় স্পিকার শ্রী অম্বিলা বিড়লাজিকে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার এই ভয়াবহ অবনতির কথা অবহিত করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেছেন, আমি, ডঃ সুকান্ত মজুমদার, বালুরঘাটের সংসদ সদস্য (লোকসভা) এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ডোনার, লোকসভার কার্যপ্রণালী ও কার্য পরিচালনা বিধির বিধি ২২২ এর অধীনে একজন সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং চলাচলের স্বাধীনতার উপর গুরুতর আক্রমণ এবং অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে এই নোটিশটি জমা দিচ্ছি।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে, যখন আমি রাজনৈতিক হিংসার শিকার ব্যক্তিদের সাথে দেখা করতে এবং এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ডায়মন্ড হারবারে যাচ্ছিলাম, তখন তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) কর্মীদের নিয়ে গঠিত একদল জনতা আমার সরকারি গাড়িবহর ঘেরাও করে এবং সহিংসভাবে আক্রমণ করে। আমার গাড়িবহরে পাথর ছোঁড়া হয়, যানবাহন ভাঙচুর করা হয় এবং আমার সাথে থাকা অনেক ব্যক্তি আহত হন। এই আক্রমণ আমার এবং উপস্থিতদের জীবনের জন্য সরাসরি এবং গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল, এই জঘন্য ঘটনার সময়, পুলিশ সুপার (শ্রী রাহুল গোস্বামী) সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কোনও প্রতিরোধমূলক বা প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, যা ইচ্ছাকৃত অবহেলা, কর্তব্যে অবহেলা এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকে উৎসাহিত করার সামিল। ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও, ঘটনাস্থলে আমার পরিদর্শনের পূর্ব-সূচনা সত্ত্বেও উপস্থিত ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পশ্চিমবঙ্গে জেড সুরক্ষা কভারের কারণে আমাকে নিযুক্ত সিআইএসএফ নিরাপত্তা কর্মীদের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
এই ঘটনাটি কেবল একজন জনপ্রতিনিধির জীবনকেই বিপন্ন করেনি বরং একজন সংসদ সদস্যের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার উপর সরাসরি আক্রমণও বটে। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের এই ধরনের সহিংসতা এবং নিষ্ক্রিয়তা আমাদের প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক কার্যকারিতা এবং এই সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের প্রদত্ত সাংবিধানিক অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব, আমি আবেদন করছি যে এই ঘটনাটি সংসদের বিশেষাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং অবমাননার শামিল, এবং আপনাকে এই বিষয়টি বিবেচনা করার এবং যথাযথ পরীক্ষা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষাধিকার কমিটির কাছে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। ন্যায়বিচারের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং প্রত্যাশার সাথে সুকান্ত মজুমদার ।’
বজবজে সুকান্ত মজুমদারের উপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে লেখা হয়েছে,’আবারও মুখোশ খুলে পড়ল তৃণমূলের! চোখের সামনে যা ঘটল, তা শুধু নিন্দনীয় নয় — তা বেদনাদায়কও। মুজাফ্ফর রহমান ও সম্রাট অধিকারী নামের দুই তোলামূল কর্মী আমাদের শ্রদ্ধেয় রাজ্য সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদারের উপর শারীরিক হামলা চালিয়েছে। তাঁকে হেনস্তা করেই ক্ষান্ত হয়নি—তাঁর মা’কে নিয়েও অশ্রাব্য গালিগালাজ করেছে। কারণ? তারা বলছে,“আমরা ১০০ দিনের কাজের টাকা পাইনি!”
এই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল! তৃণমূল কিভাবে দলের লোকেদের নামে ভুয়ো জব কার্ড বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এটাই আজকের তৃণমূল—যাদের কোনো সম্মান নেই, কোনো শালীনতা নেই। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়, এটা হলো তোলামূলের সংস্কৃতি — হিংসা, লুটতরাজ আর নির্লজ্জ দম্ভ। এই বাংলায় রাজনীতির নাম করে যে পরিমাণ অধঃপতন ঘটেছে, তা দেখে কষ্ট হয়। এটা কি আমাদের বাংলা? যেখানে মায়েদের গালাগাল দেওয়া হয়, জননেতাদের মারধর করা হয়? সময় এসেছে — এই অপসংস্কৃতিকে ধ্বংস করার।’।

